ঢাকা ০২:৪৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এক ঘুমে পার করে ৭দিন, ১০ জনের খাবার খান একাই

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি: তার কথাবার্তা শুনে স্বাভাবিক মানুষের মতোই মনে হবে। কিন্তু তার অস্বাভাবিক জীবন-যাপন দুই যুগ ধরে। বিষয়টি স্থানীয়দের কাছেও বেশ চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে।

বলছি মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার বালিরটেক কৃষ্ণপুর গ্রামের ভম্বল শীলের (৩৫)কথা। তিনি এক ঘুমে কাটিয়ে দেন টানা সাতদিন। দুই তিন দিন ঘুমিয়ে থাকেন টয়লেটেও। গোসলে লাগে সারাদিন। আর একাই দশজনের খাবার খেতে পারেন।

পারিবারিক সূত্র ও স্থানীয়রা জানান, চৌদ্দ-পনের বছর বয়সে এক মেলা থেকে ফেরার পথে ভম্বল ভয় পেয়েছিলেন। এরপর থেকেই তার আচরণে পরিবর্তন আসে। শুরু হয় অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন।

জিন-ভূতে ধরেছে মনে করে বহু কবিরাজ আর ফকিরের কাছে ঘুরেছেন স্বজনরা। স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা করানো হলেও টাকার অভাবে সুচিকিৎসা করাতে পারেননি।

৪ ভাই ও তিন বোনের মধ্যে সবার ছোট ভম্বল শীল। এক ভাই আর দুই বোন ভারতে থাকেন। বড় ভাই শংকর শীলের সঙ্গে একই বাড়িতে থাকেন ভম্বল।

শংকর শীল পেশায় নরসুন্দর। অভাবের সংসার। বাড়ি ঘরের অবস্থাও জরাজীর্ণ। ভাঙাচোরা একটি ঘরে একাই থাকেন ভম্বল। ঘুমানোর চৌকিটাও ভাঙা।

ভম্বলের ভাই শংকর শীল জানান, মাসের পর মাস ভম্বল বাড়ি থেকে বের হয় না। একটানা সাতদিন পযর্ন্ত ঘুমিয়ে থাকে। এর মধ্যে নাওয়া নেই, খাওয়া নেই।

মাঝে মধ্যে টয়লেটেও ঘুমিয়ে যায়। ঘুম থেকে জেগে উঠলে ক্ষুধার্ত হয়ে যায় সে। খেতে বসলে কয়েকজনের খাবার একাই খেয়ে ফেলে। গোসল করতে গেলে সারাদিন লাগে।

তিনি বলেন, জিন-ভূতে আসর করেছে মনে করে তাকে বিভিন্ন কবিরাজ ও ফকিরের বাড়িতে নেয়া হয়। একবার পাবনা মানসিক হাসপাতালেও নেয়া হয়েছিল। কিন্তু আর্থিক সংকটের কারণে চিকিৎসা করানো যায়নি।

বিয়ে করালে ভালো হতে পারে এমন চিন্তায় ভম্বল শীলকে ধামরাইয়ে বিয়ে করানো হয়েছিল। কিন্তু একবার শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে খেতে বসে ঘুমিয়ে পড়েছিল সে। তার এই অস্বাভাবিক জীবন-যাপন দেখে বাপের বাড়ি থেকে বউ আর আসেনি।

ভাড়ারিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অরুণ কুমার শীল ও স্থানীয় বাসিন্দা রাজিবসহ অনেকেই জানান, ভম্বলের এই অস্বাভাবিক জীবন-যাপন দেখে তারা আসলে খুবই অবাক হন।

তারা জানান, ভম্বলের ঠিকমতো খাবার জোটে না। কারণ তার ভাই পেশায় একজন নরসুন্দর। তার সামর্থ নেই। এ কারণে দিনের পর দিন না খেয়েই কাটান তিনি। এলাকায় কোনো ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠান থাকলে ভম্বল সেখানে গিয়ে পেট ভরে খান। বাকি সময় খাবারের চাহিদা মেটে না তার।

তিনি প্রথমে খুবই স্বাভাবিকভাবে প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর দেন। টানা এক সপ্তাহ ঘুমানোর কথা তিনিও স্বীকার করেন।তবে অনেক রাতেই তার ঘুম হয় না বলে জানান।

এক পর্যায়ে অসংলগ্ন কথা বার্তা শুরু করেন ভম্বল। বলেন, তার ১০৮টি শত্রু। এই শত্রুদের কারণেই তার ঠিকমতো খাওয়া, ঘুম ও বাড়ি থেকে বের হওয়া হয় না।

থাকার জন্য ৪তলা ঘর আর ৪তলা একটি মন্দির নির্মাণ করতে চান তিনি। কিন্তু সেটাও শত্রুদের কারণে পারছেন না।

স্থানীয়রা জানান, আচরণে কোনো আগ্রাসী ভাব না থাকলেও ভম্বলের মধ্যে সবসময় ভয় আর অবিশ্বাসের ছাপ দেখা যায়। উন্নত চিকিৎসা পেলে হয়ত সে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারত।

মানিকগঞ্জ কর্নেল মালেক মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ডা. মাহবুবুর রহমান জানান, ভম্বল জটিল মানসিক রোগে আক্রান্ত।

এটাকে সিজোফ্রেনিয়া বলে। এই রোগে যারা আক্রান্ত হন তারা নিজস্ব জগতে চলাফেরা করেন। নিজের মতো করে তারা ভাবেন। সব সময় ভয় আর অবিশ্বাস থাকে মনে। তবে সময়মতো চিকিৎসা নিলে এই রোগীও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন।

ট্যাগস

আলিশান চাল, নওগাঁ

বিজ্ঞাপন দিন

এক ঘুমে পার করে ৭দিন, ১০ জনের খাবার খান একাই

আপডেট সময় ০১:২০:১৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ নভেম্বর ২০২০

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি: তার কথাবার্তা শুনে স্বাভাবিক মানুষের মতোই মনে হবে। কিন্তু তার অস্বাভাবিক জীবন-যাপন দুই যুগ ধরে। বিষয়টি স্থানীয়দের কাছেও বেশ চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে।

বলছি মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার বালিরটেক কৃষ্ণপুর গ্রামের ভম্বল শীলের (৩৫)কথা। তিনি এক ঘুমে কাটিয়ে দেন টানা সাতদিন। দুই তিন দিন ঘুমিয়ে থাকেন টয়লেটেও। গোসলে লাগে সারাদিন। আর একাই দশজনের খাবার খেতে পারেন।

পারিবারিক সূত্র ও স্থানীয়রা জানান, চৌদ্দ-পনের বছর বয়সে এক মেলা থেকে ফেরার পথে ভম্বল ভয় পেয়েছিলেন। এরপর থেকেই তার আচরণে পরিবর্তন আসে। শুরু হয় অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন।

জিন-ভূতে ধরেছে মনে করে বহু কবিরাজ আর ফকিরের কাছে ঘুরেছেন স্বজনরা। স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা করানো হলেও টাকার অভাবে সুচিকিৎসা করাতে পারেননি।

৪ ভাই ও তিন বোনের মধ্যে সবার ছোট ভম্বল শীল। এক ভাই আর দুই বোন ভারতে থাকেন। বড় ভাই শংকর শীলের সঙ্গে একই বাড়িতে থাকেন ভম্বল।

শংকর শীল পেশায় নরসুন্দর। অভাবের সংসার। বাড়ি ঘরের অবস্থাও জরাজীর্ণ। ভাঙাচোরা একটি ঘরে একাই থাকেন ভম্বল। ঘুমানোর চৌকিটাও ভাঙা।

ভম্বলের ভাই শংকর শীল জানান, মাসের পর মাস ভম্বল বাড়ি থেকে বের হয় না। একটানা সাতদিন পযর্ন্ত ঘুমিয়ে থাকে। এর মধ্যে নাওয়া নেই, খাওয়া নেই।

মাঝে মধ্যে টয়লেটেও ঘুমিয়ে যায়। ঘুম থেকে জেগে উঠলে ক্ষুধার্ত হয়ে যায় সে। খেতে বসলে কয়েকজনের খাবার একাই খেয়ে ফেলে। গোসল করতে গেলে সারাদিন লাগে।

তিনি বলেন, জিন-ভূতে আসর করেছে মনে করে তাকে বিভিন্ন কবিরাজ ও ফকিরের বাড়িতে নেয়া হয়। একবার পাবনা মানসিক হাসপাতালেও নেয়া হয়েছিল। কিন্তু আর্থিক সংকটের কারণে চিকিৎসা করানো যায়নি।

বিয়ে করালে ভালো হতে পারে এমন চিন্তায় ভম্বল শীলকে ধামরাইয়ে বিয়ে করানো হয়েছিল। কিন্তু একবার শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে খেতে বসে ঘুমিয়ে পড়েছিল সে। তার এই অস্বাভাবিক জীবন-যাপন দেখে বাপের বাড়ি থেকে বউ আর আসেনি।

ভাড়ারিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অরুণ কুমার শীল ও স্থানীয় বাসিন্দা রাজিবসহ অনেকেই জানান, ভম্বলের এই অস্বাভাবিক জীবন-যাপন দেখে তারা আসলে খুবই অবাক হন।

তারা জানান, ভম্বলের ঠিকমতো খাবার জোটে না। কারণ তার ভাই পেশায় একজন নরসুন্দর। তার সামর্থ নেই। এ কারণে দিনের পর দিন না খেয়েই কাটান তিনি। এলাকায় কোনো ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠান থাকলে ভম্বল সেখানে গিয়ে পেট ভরে খান। বাকি সময় খাবারের চাহিদা মেটে না তার।

তিনি প্রথমে খুবই স্বাভাবিকভাবে প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর দেন। টানা এক সপ্তাহ ঘুমানোর কথা তিনিও স্বীকার করেন।তবে অনেক রাতেই তার ঘুম হয় না বলে জানান।

এক পর্যায়ে অসংলগ্ন কথা বার্তা শুরু করেন ভম্বল। বলেন, তার ১০৮টি শত্রু। এই শত্রুদের কারণেই তার ঠিকমতো খাওয়া, ঘুম ও বাড়ি থেকে বের হওয়া হয় না।

থাকার জন্য ৪তলা ঘর আর ৪তলা একটি মন্দির নির্মাণ করতে চান তিনি। কিন্তু সেটাও শত্রুদের কারণে পারছেন না।

স্থানীয়রা জানান, আচরণে কোনো আগ্রাসী ভাব না থাকলেও ভম্বলের মধ্যে সবসময় ভয় আর অবিশ্বাসের ছাপ দেখা যায়। উন্নত চিকিৎসা পেলে হয়ত সে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারত।

মানিকগঞ্জ কর্নেল মালেক মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ডা. মাহবুবুর রহমান জানান, ভম্বল জটিল মানসিক রোগে আক্রান্ত।

এটাকে সিজোফ্রেনিয়া বলে। এই রোগে যারা আক্রান্ত হন তারা নিজস্ব জগতে চলাফেরা করেন। নিজের মতো করে তারা ভাবেন। সব সময় ভয় আর অবিশ্বাস থাকে মনে। তবে সময়মতো চিকিৎসা নিলে এই রোগীও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন।