আন্তর্জাতিক ডেক্সঃগণতান্ত্রিক বিশ্বে শ্রেষ্ঠত্বের দাবিদার এই যুক্তরাষ্ট্রে ভোটের ফল গণনায় ডেমক্র্যাটের কাছে ধরাশায়ী হবার আভাস পেয়েই কূটকৌশলের এক পর্যায়ে আদালতে গেলেন ট্রাম্প।
মিশিগান, পেনসিলভেনিয়া এবং জর্জিয়া স্টেটে ভোট গণনা বন্ধের দাবিতে মামলা করেছেন ট্রাম্প। হাস্যকর অভিযোগ করা হয়েছে যে, মিশিগানে ভোট গণনার সময় নাকি রিপাবলিকান পোলিং এজেন্টদের থাকতে দেয়া হচ্ছে না। ট্রাম্পের এজেন্টদের বিশেষভাবে গুরুত্ব দিচ্ছেন না নির্বাচনী কর্মকর্তারা। পেনসিলভেনিয়া সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী নির্বাচনের তিনদিন পর পর্যন্ত পাওয়া সমস্ত ব্যালট গণনা করতে হবে। সেভাবেই চলছে সবকিছু।
এতদসত্বেও ৪ নভেম্বর বুধবার মামলা করেছেন ট্রাম্পের সমর্থকরা।
দাবি জানিয়েছেন যে, ডাকযোগে আসা ব্যালট গণনার আওতায় আনা যাবে না। উল্লেখ্য, এমন বিধির দাবিতে নির্বাচনের আগে আদালতে গিয়ে হেরেছেন রিপাবলিকানরাই। জর্জিয়া স্টেটে নাকি মৃত মানুষের নামে ব্যালট পাঠানো হয়েছে ডাকযোগে। এরা বাইডেনকে ভোট দিয়েছেন। এছাড়া মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টার পর আসা ৫৩টি ব্যালটকে কোনভাবেই গণনায় নেয়া যাবে না। কিন্তু নির্বাচনী কর্মকর্তারা তা গ্রহণ করেছেন।
তাই সেখানকার গণনাও স্থগিতের আবেদনে মামলা করা হয়েছে। সবকটি মামলা দায়ের হয় বুধবার। উইসকনসিন স্টেটের গণনায় ট্রাম্প হেরে গেছেন। তাই সেখানে পুনরায় ভোট গণনার আবেদন জানানো হয়েছে।
৩ নভেম্বর মঙ্গলবার ভোট গ্রহণের সময়সীমা শেষ হবার কয়েক ঘণ্টা পর বুধবার ভোররাতে হোয়াইট হাউজের লনে এক সমাবেশে নির্বাচনে ভোট জালিয়াতির অভিযোগ করেন এবং ডেমক্র্যাটরা ফলাফল চুরি করছে বলে উল্লেখ করেন। ট্রাম্প এমন কারচুপির বিরুদ্ধে আদালতে যাবার হুমকি দেয়ার সময়েই নিজেকে জয়ী বলে উল্লেখ করেন। যদিও তখনও ভোট গণনা চলছিল এবং অনেক স্টেটের ফলাফল পাওয়া যায়নি। এভাবেই বুধবার সকাল পর্যন্ত সর্বমহলে টানটান উত্তেজনা দেখা দেয়। রিপাবলিকান পার্টির নীতি-নির্ধারকদের অনেকেই ট্রাম্পের সাথে কথা বলেন এবং তাকে উদ্ভট অভিযোগ থেকে বিরত হবার আহবান জানান।
কিন্তু দিন যত গড়াচ্ছিল ততই ভোট গণনায় রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর বিজয়ের সম্ভাবনা ক্ষীণ হতে থাকে। যদিও অবশিষ্ট স্টেটসমূহে বাইডেন আর ট্রাম্পের মধ্যেকার ব্যবধান খুব বেশী ছিল না। তবুও মাঠের সংবাদ দ্রুত সংগ্রহ করার পরই মিশিগান, পেনসিলভেনিয়া, জর্জিয়ায় মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা উল্লেখ করেছেন। ভোটারের দেয়া রায়ের প্রতি শতভাগ সম্মান প্রদর্শনের আহবান জানিয়েছেন যো বাইডেনসহ ডেমক্র্যাটরা। তারা ট্রাম্পের প্রতিও অনুরোধ জানিয়েছেন ধৈর্য ধরার জন্যে। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে প্রশ্নের মুখে ঠেলে না দিতেও আহবান জানানো হচ্ছে ট্রাম্পের প্রতি।
করোনা সংক্রমণের ভীতির পরিপ্রেক্ষিতে এবার ডাকযোগে ব্যালট সংগ্রহ করে তা ফেরৎ পাঠানোর কার্যক্রম ছাড়াও আগাম ভোট কেন্দ্রও স্থাপন করা হয় ৩৯ স্টেটে। এরফলে ভোটের পরিমাণ বেড়েছে। এমনকি ৩ নভেম্বর নির্বাচনের দিনও বহু কেন্দ্রে বহু ভোটারের সমাগম ঘটেছিল।
অর্থাৎ গত চার বছরে ট্রাম্পের আচরণে অধিকাংশ আমেরিকানের মধ্যে ক্ষোভ সঞ্চারিত হয়েছে। সেজন্যে তারা একটা পরিবর্তন চাচ্ছেন। ভোটে তার প্রতিফলন ঘটছে বলে অনেকের ধারণা। যদিও করোনা মোকাবেলায় সীমাহীন উদাসীনতা প্রদর্শণের ব্যাপারটি ভোটারের মধ্যে তমন একটা প্রতিক্রিয়া তৈরী করতে পেরেছে বলে অনেকে বিশ্বাস করেন না।
বিশেষ করে রিপাবলিকান হিসেবে তালিকাভুক্ত ভোটারের ৮০% এর মধ্যেই করোনা মহামারি ব্যাপারটি কোন সাড়া জাগাতে সক্ষম হয়নি বলেই ভোটের সংখ্যায় বাইডেনের একেবারেই কাছাকাছি রয়েছেন ট্রাম্প।
এবারের নির্বাচনে ১৫ কোটিরও বেশী মানুষ ভোট দেন। এরমধ্যে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত বাইডেন পেয়েছেন ৭ কোটি ২১ লাখ ৩০ হাজার ১৭৯ এবং ট্রাম্পের বাক্সে যায় ৬ কোটি ৮৬ লাখ ৪৮ হাজার ৬ ভোট।
ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল, ফক্স নিউজ, লসএঞ্জেলেস টাইমস, নিউইয়র্ক ডেইলি নিউজ, শিকাগো ট্রিবিউনসহ শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত বাইডেনকে বিজয়ের একেবারেই নিকটে প্রজেকশন করা হয়েছে। অর্থাৎ বিজয়ের জন্যে ২৭০ ইলেক্টরাল ভোটের মধ্যে বাইডেন পেয়েছেন ২৬৪ এবং ট্রাম্প ২১৪টি।
এবারের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর বিজয় নির্ধারণে নেয়ামকের ভূমিকা পালন করছে আরিজোনা, জর্জিয়া, নর্থ ক্যারলিনা, নেভাদা, পেনসিলভেনিয়া।
রেজাল্ট ঘোষণা বাকি রয়েছে মিশিগান, পেনসিলভেনিয়া, জর্জিয়া, নর্থ ক্যারলিনার। সবকটিতেই উভয় প্রার্থীর ভোট একেবারেই কাছাকাছি রয়েছে বৃহস্প্রতিবার সকালে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত।