আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ রাশিয়ায় করোনার টিকার প্রথম ব্যাচের ডোজ নাগরিকদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। গামেলিয়া ন্যাশনাল রিসার্চ সেন্টার ও রাশিয়ান ডিরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট ফান্ডের তৈরি স্পুটনিক-৫ নামের টিকাটি অচিরেই আঞ্চলিক পর্যায়ে সরবরাহ শুরু করা হচ্ছে।
দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানিয়েছে। বার্তা সংস্থা আইএএনএসের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
রাশিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে জানানো হয়, করোনা প্রতিরোধে গাম-কোভিড-ভ্যাক বা স্পুটনিক-৫ নামের প্রথম ব্যাচের টিকাটি প্রয়োজনীয় সব গুণগত পরীক্ষা অনুমোদন করা হয়েছে। দেশে রোজদ্রাভনাদজোর পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করে এই টিকা জনগণের মধ্যে প্রচারের জন্য উন্মুক্ত করা হচ্ছে।
গত ১১ আগস্ট রাশিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তাদের প্রথম এ টিকা অনুমোদন দেয়। বিশ্বে প্রথম করোনার টিকা অনুমোদনের ঘটনা ছিল এটি।
কয়েক মাসের মধ্যেই রাশিয়ার রাজধানীর অধিকাংশ নাগরিককে টিকা দেওয়া হবে
সের্গেই সোবিয়ানিন, মেয়র, মস্কো
গত রোববার মস্কোর মেয়র সের্গেই সোবিয়ানিন আশা প্রকাশ করে বলেন, কয়েক মাসের মধ্যেই রাশিয়ার রাজধানীর অধিকাংশ নাগরিককে টিকা দেওয়া হবে।
রাশিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, প্রথম ব্যাচের রাশিয়ান টিকা দেশটির আঞ্চলিক পর্যায়ে নিকট ভবিষ্যতে সরবরাহ করা পরিকল্পনা রয়েছে।
রাশিয়ার টিকা গত আগস্ট মাসে অনুমোদনের পর থেকে তা নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। দ্রুতগতিতে এ টিকা অনুমোদন দেওয়া নিয়ে পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলোয় এর কার্যকারিতা নিয়ে নানা প্রশ্ন তোলা হয়েছে। তবে গত সপ্তাহে রাশিয়ার বিজ্ঞানীরা তাঁদের করোনাভাইরাসের টিকা নিয়ে প্রথম প্রতিবেদন প্রকাশ করে বলেন, টিকার প্রাথমিক পরীক্ষায় এটি প্রতিরোধী প্রতিক্রিয়ার প্রমাণ দেখাতে পেরেছে।
রাশিয়ার গবেষকেরা মেডিকেল জার্নাল ‘দ্য ল্যানসেট’-এ তাঁদের গবেষণাসংক্রান্ত নিবন্ধ প্রকাশ করেন। তাঁরা দাবি করেছেন, গবেষণায় অংশ নেওয়া প্রত্যেক ব্যক্তির শরীরে তাঁদের টিকা দেওয়ার পর অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে, যা করোনার বিরুদ্ধে লড়তে পারে। এ টিকার বড় কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও নেই।
গত মাসে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, তাঁদের টিকাটি প্রয়োজনীয় সব পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে গেছে। তাঁর এক মেয়েও এ টিকা নিয়েছিলেন। পরে ওই মেয়ের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হতে দেখা গেছে।
ল্যানসেটের প্রতিবেদনে জানানো হয়, কৃত্রিম উপগ্রহের নামে নামকরণ করা স্পুটনিক-৫ নামের টিকাটি নিয়ে গত জুন ও জুলাই মাসে দুটি পরীক্ষা চালানো হয়।
প্রতিটি পরীক্ষায় ৩৮ জন সুস্থ স্বেচ্ছাসেবীর শরীরে দুই ডোজ করে টিকা ও বুস্টার দেওয়া হয়। প্রথমবার টিকা দেওয়ার তিন সপ্তাহ পর টিকার কার্যক্ষমতা বাড়ানোর বুস্টার প্রয়োগ করা হয়। পরীক্ষায় অংশ নেওয়া স্বেচ্ছাসেবকদের বয়স ছিল ১৮ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে। তাঁদের ৪২ দিন পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। তিন সপ্তাহের মধ্যে সবার শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হতে দেখা যায়।
রাশিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রী মিখাইল মুরাস্কো গত মাসে বলেন, আগামী নভেম্বর থেকে ডিসেম্বর মাসে তাঁর দেশে টিকা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে। তাঁদের প্রাথমিক লক্ষ্য উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা লোকজন।
রাশিয়ার বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত করোনাভাইরাসের প্রথম টিকাটি নিয়ে আলোচনার মধ্যেই করোনার আরেকটি টিকা উদ্ভাবনের কথা জানিয়েছে রাশিয়া। দেশটি বলেছে, চলতি মাসের শেষের দিকে এ টিকার প্রাথমিক পরীক্ষা শুরু করবে তারা।
করোনা মহামারি এরই মধ্যে ৮ লাখ ৯০ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। এ মহামারির সার্বক্ষণিক তথ্য প্রকাশকারী ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারস ডট ইনফোর তথ্যমতে, বিশ্বজুড়ে এ পর্যন্ত প্রায় পৌনে তিন কোটি করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছে ১ কোটি ৯৩ লাখের বেশি রোগী।
বিশ্বজুড়ে করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার প্রাথমিক পর্যায় থেকেই নিরাপদ ও কার্যকর টিকা উদ্ভাবনের চেষ্টা চলছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হালনাগাদ তথ্য অনুসারে, বিভিন্ন দেশে করোনার ১৭৬টি সম্ভাব্য টিকা নিয়ে কাজ চলছে। এর মধ্যে ৩৪টি টিকা মানবদেহে পরীক্ষার বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে। এ টিকাগুলোর মধ্যে যুক্তরাজ্যের ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান অ্যাস্ট্রাজেনেকার সহযোগিতায় অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের উদ্ভাবিত টিকাটি সবচেয়ে বেশি আলোচনায় রয়েছে।
মানবদেহে এ টিকার তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা চলছে। প্রাথমিক পরীক্ষায় এটি নিরাপদ ও কার্যকর বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে।
চীনের সিনোভ্যাক, যুক্তরাষ্ট্রের মডার্না এবং মার্কিন প্রতিষ্ঠান ফাইজার ও জার্মান প্রতিষ্ঠান বায়োএনটেকের উদ্ভাবিত সম্ভাব্য টিকাগুলোরও তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা চলছে। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রে উদ্ভাবিত আরও কয়েকটি করে সম্ভাব্য টিকাও রয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওই খসড়া তালিকায়। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এ তালিকায় নেই রাশিয়ার কোনো টিকার নাম।