স্টাফ রিপোর্টার ,নওগাঁঃ করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) নমুনা পরীক্ষায় ফি নির্ধারণের পর থেকে নওগাঁয় মানুষের আগ্রহ কমতে শুরু করেছে। এছাড়া ফি দিয়ে নমুনা পরীক্ষা হতদরিদ্র ও নিম্নবিত্তদের জন্য অনেকটা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।
মানুষ এখন একান্ত প্রয়োজন ছাড়া নমুনা দিচ্ছেন না। বিনামূল্যে নমুনা পরীক্ষা ও জেলায় পিসিআর ল্যাব স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন সচেতন মহল।
সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলার ১১টি উপজেলায় গত ৩ এপ্রিল থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত ৬ হাজার ৮৭টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। সে হিসেবে দিনে গড়ে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ১০৬ দশমিক ৭৮টি।
কিন্তু গত ১ জুলাই থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত ফি দিয়ে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ১ হাজার ৬৭৫টি। অর্থাৎ দিনে গড়ে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ৭৬ দশমিক ১৪টি।
এক সময় করোনাভাইরাসের নমুনা দেয়ার জন্য হাসপাতালের করোনা ইউনিটগুলোতে মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ত। প্রয়োজন ছাড়াও একাধিকবার অনেকে নমুনা দিয়েছেন।
কিন্তু ফি দিয়ে নমুনা সংগ্রহের পর থেকে অনেকটা চাপ কমে গেছে। ফি নির্ধারণ করার পর থেকে নিম্নবিত্ত ও সাধারণের জন্য নমুনা পরীক্ষা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে বলে মনে করছেন সচেতনরা।
বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি, নওগাঁর সভাপতি অ্যাডভোকেট মহসিন রেজা বলেন, ‘পৃথিবীতে দ্বিতীয় কোনো জায়গা খুঁজে পাওয়া যাবে না যেখানে টাকা দিয়ে করোনা ভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা করা হয়।
কিন্তু বাংলাদেশে এটা হচ্ছে। যে মানুষ সারাদিনে ১৫০-২০০ টাকা আয় করেন তার পক্ষে টাকা দিয়ে কিভাবে নমুনা পরীক্ষা করানো সম্ভব? উপসর্গ থাকা দিনমজুরদের ২০০ টাকা জমা দিয়ে নমুনা পরীক্ষা করানো কষ্টকর। এজন্যই নমুনা সংগ্রহের পরিমাণ কমে যাচ্ছে।
’তিনি বলেন, ‘অনেক মানুষ আছে যাদের করোনা উপসর্গ আছে কিন্তু টাকার অভাবে নমুনা দিতে পরাছেন না। তাই আবার ফ্রিতে নমুনা সংগ্রহ করা হোক।
এমনকি ইউনিয়ন পর্যায়ে যেসব হেলথ কমপ্লেক্স আছে সেখানেও নমুনা সংগ্রহ করা উচিত। এছাড়া জেলা পর্যায়ে অবশ্যই পিসিআর ল্যাব স্থাপন করা উচিত।’
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন), নওগাঁ জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. মাহমুদুন্নবী বেলাল বলেন, ‘আসলে বাঙালি মাগনা পেলে আলকাতরাও খায়। কথাটা মহামারি করোনাভাইরাস টেস্টেও প্রমাণিত হলো।
স্বাভাবিকভাবে ঋতু পরিবর্তনের সময় অনেকের জ্বর, সর্দি ও কাশি হয়। কিন্তু করোনাকালে জনগণ জ্বর হলেই ফ্রিতে করোনা টেস্ট করাত। সরকার করোনা টেস্টে ফি নির্ধারণ করার পর থেকে চাপ কমলেও গরিব-অসহায়দের জন্য সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
যদি ডাক্তারের পরামর্শে টেস্ট করানো হয় তাহলে ঝামেলা কম হবে। সরকার স্বাস্থ্য খাতে অনেক ভর্তুকি দিয়েছে। নির্ধারিত ফি মওকুফের জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ করছি। সরকার ইচ্ছা করলেই করোনা পরীক্ষা ফ্রিতে করা সম্ভব।’
নওগাঁ ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মঞ্জুর-এ-মোর্শেদ বলেন, ঢাকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ল্যাবরেটরিতে নমুনা পাঠিয়ে করোনা পরীক্ষা করা হয়।
কিছুদিন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। কিন্তু সেখানে চাপের কারণে পুনরায় ঢাকা থেকে নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ফি নিয়ে নমুনা সংগ্রহের আগে অনেকেই বিনা কারণে নমুনা দিয়েছেন। কিন্তু এখন যাদের একান্ত প্রয়োজন মূলত তারাই নমুনা দিচ্ছেন। এতে দেখা গেছে বিগত দিনের তুলনায় নমুনা সংগ্রহের পরিমাণ কমে গেছে।
উল্লেখ্য, ২৩ জুলাই পর্যন্ত জেলায় ৮৪৪ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়। এরমধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৬৪০ জন এবং মারা গেছেন ১৩ জন।