এম আর রকি: ঘূর্ণিঝড় আম্পানে নওগাঁয় আমের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আম চাষিরা বলছেন, ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে গাছের প্রায় ২৫ শতাংশ আম ঝরে গেছে। ঝরে পড়া আমের মধ্যে গোপাল ভোগ, লেংড়া, ফজলি,ক্ষিরসাপাতা এবং মোহন ভোগ জাতের সু স্বাদু আম বেশি ।এর মধ্যে গোপাল ভোগ ও লেংড়া জাতের আম আগামী ৩০ মে নামানোর ঘোষনা দেয় জেলা প্রশাসন ।
বাগান মালিকরা চরম হতাশ হয়ে পড়েছে আম ঝরে পড়ায় । এদিকে ঝরে পড়া আম আড়ত গুলোতে আনছেন কিন্ত বেপারীরা সুযোগ বুঝে নাম মাত্র মুল্য ২০ থেকে ৩০ টাকা মন দরে কিনছেন ।
নওগাঁর বদলগাছী আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, বুধবার (২০ মে) রাত ১টার দিকে নওগাঁতে ঘূর্ণিঝড় আম্পান আঘাত হানে। এ সময় বাতাসের গতিবেগ ছিল ৭০-৮০ কিলোমিটার।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর নওগাঁ সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এ বছর ২৪ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়। ৬ হাজার ৮০০ আম চাষির প্রায় ১১ হাজার বাগান রয়েছে। প্রতি হেক্টর জমিতে আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ১৫ মেট্রিক টন। এবার আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল সাড়ে মেট্রিক টন। ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ২৫ শতাংশ, অর্থাৎ ৮০ থেকে ৯০ হাজার হাজার মেট্রিক টন আম ঝরে পড়েছে।
ভরা মৌসুমে আমের দাম ৪০ টাকা কেজি ধরলে এর দাম প্রায় ৯০০ কোটি টাকা। জেলার ১১টি উপজেলার মধ্যে ৬০ ভাগেরও বেশি আম উৎপাদন হয় পোরশা, সাপাহার ও পত্নীতলা উপজেলায়। সরজমিনে সাপাহারে দেখা যায় বস্তায় ভরে বিভিন্ন যান বাহনে আড়তে আম নিয়ে আসছেন । ঝরে পড়া আম মাত্র ২০ থেকে ৩০ টাকা মন দরে কিনছেন বেপারীরা । আবার অনেকে ভ্যান ভাড়া দিতে না পাড়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন ।
মধুইল এলাকা থেকে ৯ বস্তা আম নিয়ে এসেছেন সাইদুর । মাত্র ১শ টাকায় এ আড়তে বিক্রি করেন । এসব আমের মধ্যে রয়েছে গোপাল ভোগ, লেংড়া সহ ভাল জাতের আম । আর কদিন পরই এসব আম নামানো প্রস্ততি ছিল । কিন্ত হটাৎ ঘুর্ণিঝড় আমপান সব আশা শেষ করে দিয়েছে সাইদুরের মতো অনেক বাগান মালিকের । বাগান মালিক তসলিম উদ্দিন বলেন, এবার বড় একটা আশা নিয়ে অনেকেই বাগান গড়ে ছিলেন । কিন্ত পর পর দু বার আমের ক্ষতি স্বপ্ন ভঙ্গ করে দিয়েছে । তার উপর আবার করোনা পরিস্থতি এসব নিয়ে বাগান মালিকরা খুবই দু:চিন্তায় আছে ।
সাপাহার আম আড়ত সমিতির সভাপতি কার্তিক সাহা বলেন, এবার দু দফা ক্ষতির শিকার হলো বাগান মালিকরা । তার পরও যে পরিমান আম আছে তা যদি করোনার কারণে সটিক বাজার জাত করা না যায় তবে অনেকেই পথে বসে যাবে ।
আপদ কালীন সময়ে বরেন্দ্র এলাকায় আম সংরক্ষনাগার গড়ে তোলার দাবী অনেক দিন ধরেই করে আসছেন সাপাহার উপজেলা চেয়ারম্যান শাহজাহান আলী । তিনি বলেন, এখন যে বিপর্যয়টা হলো এখানে যদি প্রাণ ও এসি আইয়ের মতো বড় কোম্পানীর সংরক্ষন ব্যবস্থা থাকতো তাহলে আজকে এতো আম নষ্ট হতো না । তিনি সরকারের দৃষ্টি কামনা করেন, যেহেতু আম কে ঘিরে প্রায় হাজার কোটি টাকার কারবার হয় তাই বিষয়টি নিয়ে ভাববার আবেদন তার ।
সাপাহার উপজেলার উপজেলা নির্বাহী অফিসার কল্যান চৌধুরী বলেন, এখনো গাছে বিপুল পরিমান আম রয়েছে ।তবে যে সব বাগান ক্ষতি হয়েছে তার একটা তালিকা করে জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানো হচ্ছে যেন তারা ক্ষতির কিছু অনুদান পায় ।