স্টাফ রিপোর্টার, নওগাঁঃ করোনাভাইরাসের সঙ্গে যুদ্ধ করে ৯ দিন পর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন নওগাঁয় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত দ্বিতীয় ব্যক্তি খাইরুল ইসলাম (৪০)।
রোববার (১০ মে) সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন তিনি। তার বাড়ি জেলার সাপাহার উপজেলার গোয়ালা ইউনিয়নের কামাশপুর গ্রামে। পেশায় একজন পল্লী চিকিৎসক খাইরুল।
জানা গেছে, খাইরুল ইসলামের স্ত্রী আসমা বেগমের দুটি কিনডি নষ্ট হয়ে যায়। ২০১৯ সালের মার্চে পরীক্ষার পর বিষয়টি জানা যায়। এরপর রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসা চলে তার। সেখান থেকে সরাসরি ৮ ডিসেম্বর তাকে ঢাকায় নেয়া হয় কিডনি স্থাপনের জন্য। একটি হাসপাতালে তিন মাস ডায়ালাইসিস করানোর পর সিরিয়াল আসে। এরপর চলতি বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি আসমার শরীরে কিডনি স্থাপন করা হয়। স্ত্রীর সঙ্গে খাইরুল ইসলাম ঢাকাতেই থাকতেন।
গত ১৭ এপ্রিল খাইরুলের শরীরে জ্বর আসে। প্যারাসিটামল ট্যাবলেট খাওয়ার পরও শরীরের জ্বর পড়ছে না। এরপর কয়েকদিন দুই বেলা কয়েক ধরনের মেডিসিন নেন তিনি। জ্বর না কমায় বাড়িতে আসার সিদ্ধান্ত নেন খাইরুল। এরপর মাইক্রো ভাড়া করে গত ২৬ এপ্রিল বিকেলে গ্রামের বাড়িতে আসেন তিনি। পরদিন সকালে সাপাহার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে তার নমুনা সংগ্রহ করে। নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট পজিটিভ আসে। এরপর চিকিৎসা শেষে সুস্থ হন তিনি। বাড়ি ফেরার সময় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পক্ষ থেকে তাকে ফল উপহার দেয়া হয়।
খাইরুল ইসলাম বলেন, প্রথমে ভাবছিলাম ডেঙ্গু জ্বর হয়েছে। এজন্য প্যারাসিটামল ট্যাবলেটসহ কয়েক ধরনের মেডিসিন নিই। জ্বর বৃদ্ধি পাওয়ায় স্ত্রীকে রেখে বাড়ি চলে আসি। বাড়ি আসার পরদিনই নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরে রিপোর্ট পজিটিভ আসে। এরপর আরও দুই দিন বাড়িতে থাকি এবং শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। তারপর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে বিষয়টি অবগত করা হয়। তিনি বাড়িতে একটি অ্যাম্বুলেন্স পাঠিয়ে আমাকে নওগাঁ সদর হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। সেখানে একরাত থাকার পরও অক্সিজেন দিয়ে কোনো কাজ হয় না।
তিনি বলেন, এরপর পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে আবারও অবগত করলাম। স্যারকে বললাম, ভালো কোনো প্রতিষ্ঠানে নেয়ার জন্য, তা না হলে হয়তো আমি মারা যাবো। স্যার আধাঘণ্টা পর হাসপাতালের একটি অ্যাম্বলেন্সের মাধ্যমে আমাকে ২ মে রাজশাহী মেডিকেলে নেয়ার ব্যবস্থা করেন। এরপর আইসিইউতে ৪৮ ঘণ্টা রাখার পর কিছুটা সুস্থ বোধ করি। সেখান থেকে করোনা আইসোলেশনে ২৯ নম্বর ওয়ার্ডে রাখা হয়। ৯ দিন রামেকে চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে ছাড়পত্র নিয়ে বাড়িতে ফিরি। বাড়িতে আরও ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। আমি করোনায় আক্রান্ত হলেও স্ত্রীর কোনো সমস্যা হয়নি। করোনা আক্রান্তের সময় বাড়িতে যে দুই দিন ছিলাম আমার স্ত্রী-সন্তানদের কাছে আসতে দিইনি। ভাইদের কাছ থেকে খাবার নিয়েছি। তারা দূর থেকে পলিথিনে করে খাবার দিতো।
খাইরুল আরও বলেন, নওগাঁতে তেমন চিকিৎসা পাইনি। তবে রাজশাহীতে চিকিৎসা সেবায় যে সহযোগিতা পেয়েছি তা বলে প্রকাশ করার মতো না। চিকিৎসাসেবা এবং খাবার দেয়া থেকে শুরু করে সব কিছুই ভালো ছিল। তাদের সেবা ও আল্লাহর রহমতে আমি সুস্থ হয়ে উঠেছি। চিকিৎসাসেবার কাজে যারা ছিলেন, তারা আসলেই করোনাযোদ্ধা।
সাপাহার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডা. রুহুল আমিন বলেন, প্রথম থেকে আমরা খাইরুল ইসলামের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রেখেছিলাম। তাকে সার্বক্ষণিক দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। কোনোভাবেই তিনি মনোবল হারাননি। আমরা আশাবাদী ছিলাম তিনি সুস্থ হবেন। করোনার সঙ্গে যুদ্ধ করে সুস্থ হয়ে তিনি বাড়ি ফিরেছেন। সর্বশেষ তার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়। সেখানে তার ফলাফল নেগেটিভ আসে। এখন তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ। তবে নিয়ম অনুযায়ী তাকে আরও ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে।