স্টাফ রিপোর্টারঃ বিশ্বব্যাপী মহামারি আকার ধারণ করা করোনা ভাইরাসের মারাত্মক প্রভাব পড়েছে চাঞ্চল্যকর ফেনীর মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলার বিচার কার্যক্রমের ওপরও।
মামলাটি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শুনানির জন্য মার্চের প্রথম সপ্তাহেই প্রধান বিচারপতি নির্দেশ দিলেও তা কার্যকর হয়নি। করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে আকষ্মিকভাবে আদালত বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মামলাটির শুনানিও আটকে গেছে।
ফলে মামলাটি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিষ্পত্তির উদ্যোগের সুফল মিলছে না। তবে রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, নিয়মিত আদালত খোলার পর মামলাটির শুনানির পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় ১৬ আসামির মৃত্যুদণ্ডের সাজা সম্বলিত মামলাটি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শুনানির জন্য গত ২ মার্চ হাইকোর্টের বেঞ্চ গঠন করেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন।
বিচারপতি সৌমেন্দ্র সরকারের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চে পাঠানো হয় মামলাটি। তবে তা সংশ্লিষ্ট আদালতে যাওয়ার পরপরই সুপ্রিম কোর্টে শুরু হয় অবকাশকালীন ছুটি।
গত ২৯ মার্চ অবকাশকালীন ছুটি শেষ হবার কথা থাকলেও এই অবকাশ শেষ হবার আগেই হানা দেয় করোনাভাইরাস। ফলে ২৪ মার্চ সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন আদালতে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে।
এর পর কয়েকদফা বাড়ানো হয় সাধারণ ছুটি। আপাতত আগামী ১৬ মে পর্যন্ত এই সাধারণ ছুটি বহাল রয়েছে। তবে সরকার সাধারণ ছুটি বাড়ালে আদালতেও ছুটি বাড়তে পারে। ফলে মামলাটির বিচার কাজ কবে শুরু হবে তা অনিশ্চিত।
সংশ্লিষ্ট আদালতে দায়িত্বরত রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বশির আহমেদ বলেন, আদালত খোলার পরপরই মামলাটি শুনানির উদ্যোগ নেওয়া হবে।
এ মামলায় ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গতবছর ২৪ অক্টোবর এক রায়ে ১৬ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। এ রায় অনুমোদনের জন্য ডেথ রেফারেন্স হিসেবে পাঠানো হয় হাইকোর্টে।
নিম্ন আদালতের রায়ের কপিসহ (ডেথ রেফারেন্স) যাবতীয় নথি গতবছর ২৯ অক্টোবর হাইকোর্টে পৌঁছার পর অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পেপারবুক তৈরি করে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন।
সরকারি ছাপাখানায় (বিজি প্রেস) পেপারবুক তৈরির কাজ শেষ হলে প্রধান বিচারপতি মামলাটি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শুনানির জন্য হাইকোর্ট বেঞ্চ নির্ধারণ করেন। এরপর মামলার নথি সংশ্লিষ্ট বেঞ্চে পাঠানো হয়। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে শুনানি শুরু করা যায়নি।
যৌন নির্যাতনের অভিযোগে গতবছর ২৭ মার্চ একই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলার বিরুদ্ধে মামলা করেন নুসরাতের মা শিরিন আক্তার।
মামলাটি প্রত্যাহারে রাজি না হওয়ায় গতবছর ৬ এপ্রিল পরীক্ষার হল থেকে ডেকে নিয়ে নুসরাতের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয় মুখোশধারী ও বোরকা পরা দুর্বৃত্তরা।
অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় নুসরাতকে প্রথমে স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে ফেনী সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তাঁর অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতবছর ১০ এপ্রিল বুধবার রাতে মারা যান নুসরাত।
ওই ঘটনায় দায়ের করা মামলায় তদন্ত শেষে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) গতবছর ২৯ মে মাদ্রাসার অধ্যক্ষসহ ১৬ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়। এরপর বিচার শেষে ১৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে রায় দেন ফেনীর আদালত।