ঢাকার প্রতিটি থানা জনগণকে সেবাদানের রোল মডেল হিসেবে গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকা রেঞ্জ ডিআইজি রেজাউল করিম মল্লিক।
তিনি বলেন, ঢাকার প্রতিটি থানা, ফাঁড়ি, জেলা পুলিশ সার্কেল অফিসসহ পুলিশের সব কার্যালয়ে অভিযোগ বাক্স স্থাপন করা হবে। রেঞ্জের ৯৮টি থানার সেবা মনিটরিং করব নিজেই। সিসিটিভি স্থাপন করা হয়েছে। ঢাকার সব থানা হবে জনগণের। জনগণকে সেবাদানে ঢাকার প্রতিটি থানা হবে রোল মডেল।
রোববার (১১ মে) বেলা ১১টায় সেগুনবাগিচার ঢাকা রেঞ্জ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় রেঞ্জের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
ডিআইজি রেজাউল করিম মল্লিক বলেন, বিগত সময়ের উচ্চাভিলাষী ও অপেশাদার কতিপয় পুলিশ কর্মকর্তা সমগ্র পুলিশ বাহিনীকে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়। এরূপ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ পুলিশ যে অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছে, দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সামলাচ্ছে, এর পেছনে যার অবদানের কথা না বললেই নয়, তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ পুলিশের প্রাচীন, অন্যতম বৃহত্তম ও গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট ঢাকা রেঞ্জ পুলিশ। ভৌগোলিকভাবে এটি পুলিশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট। কারণ রংপুর বিভাগ ব্যতীত অন্যান্য সব বিভাগের সাথে ঢাকা বিভাগের সীমানা রয়েছে। রাজধানী ঢাকা এই রেঞ্জের আওতাধীন জেলাসমূহ দ্বারা পরিবেষ্টিত। বাংলাদেশ পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ এই ইউনিটের দায়িত্ব গ্রহণ করতে পেরে নিজেকে সম্মানিতবোধ করছি।
তিনি বলেন, ঢাকা রেঞ্জ ডিআইজি হিসেবে আমি আমার অফিসে সাধারণ মানুষের কথা শুনতে চাই। অপরাধীর বিরুদ্ধে বা আমার অধীন পুলিশের বিরুদ্ধে যেকোনো অভিযোগ সরাসরি আমাকে জানাতে পারেন। আমার অফিসে নির্ধারিত সময়ে ঢাকা রেঞ্জের আওতাধীন ১৩টি জেলার ৯৮টি থানার মানুষ আমার কাছে আসতে পারবে। রেঞ্জের সংশ্লিষ্ট অফিসে যদি কাঙ্ক্ষিত সেবা না পায়, তাহলে আমি নিজেই তাদের কথা শুনে সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা করব।
তিনি আশ্বস্ত করে বলেন, সাধারণ মানুষ যেন সুবিচার পায়, অন্যায়-জুলুম থেকে বাঁচতে পারে সেটি নিশ্চিত করা হবে। এমনকি আমিও আইনের ঊর্ধ্বে নই। আমি আপনাদের নিশ্চয়তা দিচ্ছি, ঢাকা রেঞ্জের কোনো পুলিশ সদস্য যদি কোনো ধরনের অনৈতিক ও অপেশাদার কর্মকাণ্ডের সাথে যুক্ত হয়-তাদের বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া হবে না। এসপি ওসিরাও যদি কোনো অন্যায় করেন, সরাসরি আমাকে জানাবেন। যদি প্রমাণিত হয়, আমি তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেবো। এ লক্ষ্যে, ঢাকা রেঞ্জ পুলিশের প্রতিটি থানা-ফাঁড়ি-ক্যাম্প-সার্কেল অফিস-এসপি অফিস এবং আমার অফিসেও অভিযোগবক্স স্থাপন করা হবে। কাঙ্ক্ষিত সেবা না পেলে অভিযোগ বক্সে সেবা গ্রহীতাগণ তাদের অভিযোগ জানাতে পারবেন এবং আমি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেবো।
দায়ের করা জিডি, অভিযোগ, মামলা নিজে মনিটরিং করার ঘোষণা দিয়ে ডিআইজি বলেন, একটি দক্ষ টিম দ্বারা প্রত্যেকটি জিডি, অভিযোগ, মামলা সুনিপুণভাবে মনিটরিং করা হবে। ঢাকা রেঞ্জের আওতাধীন ৯৮টি থানায় সিসিটিভি সংবলিত মনিটরিং সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। আমি নিজে মনিটরিং সেন্টারে থানায় সেবাগ্রহীতাদের এবং ভুক্তভোগীদের সাথে ভিডিও কলে সরাসরি কথা বলব যাতে একজন ভুক্তভোগী থানায় এসে সর্বোচ্চ সেবাটি পেতে পারেন। ঢাকা রেঞ্জের প্রতিটি থানাকে বাংলাদেশ পুলিশের রোল মডেল থানা হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।
‘গণঅভ্যুত্থানে দায়ের করা মামলা নিবিড়ভাবে মনিটরিংয়ের জন্য ডিআইজি অফিসে একটি বিশেষ মনিটরিং সেল খোলা হবে। মনিটরিং সেলে আমি প্রত্যেকটি মামলার বাদী, ভুক্তভোগী, গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহত পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলব এবং আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ঢাকা রেঞ্জের জনগণকে আহ্বান জানিয়ে রেজাউল করিম মল্লিক বলেন, আপনাদের প্রতি অনুরোধ, কোনো ধরনের অপরাধমূলক কাজে অংশ নেবেন না। যে যে জেলায় অবস্থান করছেন সবাই আইন ও বিধি মেনে চলুন। আমরা আপনাদের সেবার জন্য পাশে আছি। একই সঙ্গে আমরাও আপনাদের সহযোগিতা কামনা করি। আমাদের ওপর আস্থা রাখুন। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব দিয়ে ঢাকা রেঞ্জের আওতাধীন ১৩টি জেলায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় চেষ্টা করে যাবো।