বর্তমান বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার চায় বন্ধুরাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক নতজানু নয়, হবে বাস্তবভিত্তিক। যেখানে কোনো দুঃসাহস বা হঠকারিতার জায়গা হবে না।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে পরিবর্তন প্রশ্নে মাহফুজ আলম বলেন, ‘“সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়”—এটা একটা লক্ষ্য আকারে ছিল। এটা খুব বেশি পরিবর্তন হয়নি। বরং আমরা চাই, সবার সঙ্গে একটা বাস্তবভিত্তিক সম্পর্ক থাকুক, বন্ধুরাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে। যেটা বাস্তবভিত্তিক হবে; এখানে কোনো দুঃসাহস, কোনো হঠকারিতার জায়গা নেই।’
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে রোববার ‘নতুন বাংলাদেশ গঠন : অভ্যন্তরীণ সংস্কার ও পররাষ্ট্রনীতি’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম এ মন্তব্য করেছেন। পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দীনের সঞ্চালনায় আলোচনা অনুষ্ঠানে তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম অংশ নেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
আলোচনার বিষয়ে মাহফুজ আলম বলেন, পররাষ্ট্রনীতি কেমন হওয়া উচিত—মধ্যপ্রাচ্য থেকে শুরু করে ভারত, চীন, মিয়ানমারসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রের সঙ্গে যোগাযোগ কেমন হওয়া উচিত; এটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এ পর্যায়ে এসে আমরা রাষ্ট্রের কিছু সংস্কারের প্রস্তাবনা এবং পদক্ষেপ নিয়েছি। ওগুলো আসলে কীভাবে টেকসই করা যায় এবং এই সময়ে সংস্কারগুলো কীভাবে দৃশ্যমান করা যায়। সে ক্ষেত্রে আমাদের মতামত হিসেবে বলেছি, রাজনৈতিক দলসহ সব স্টেক হোল্ডারদের (অংশীজন) নিয়ে আমাদের একটা বিস্তৃত পরামর্শ দরকার।’
উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেন, ‘আমাদের দরকার সবাইকে নিয়ে একটা ঐকমতের দিকে এগোনো। পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে যে ঐকমত্য, এটা যেন জাতীয় জায়গা থেকে হয়, জাতীয় ঐকমত্য হয় এবং এটা কোনোভাবে যেন সরকার অদলবদলের ভিত্তিতে না হয়। বরং বাস্তবতার ভিত্তিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যেন বাংলাদেশকে বিশ্বমঞ্চে উপস্থাপন করে এবং আমরা যেন বাংলাদেশকে একটি মর্যাদাময় জায়গায় পুরো দুনিয়ার কাছে উপস্থাপন করতে পারি।’ তিনি বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করেছি। জনকূটনীতি, সফট পাওয়ার (যুক্তি-পরামর্শের ক্ষমতা) কীভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা যায় বাইরের দেশগুলোর সঙ্গে; কীভাবে আমরা বাংলাদেশকে তুলে ধরতে পারি, এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আরেকটা বিষয় হচ্ছে, আমাদের সামর্থ্য বাড়ানো।’
বিগত সময়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দলীয়করণ করা হয়েছিল উল্লেখ করে মাহফুজ আলম বলেন, ‘আমরা চাই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করবে। কোনো দলের হয়ে নয়, বরং বাংলাদেশকে উপস্থাপন করবে।…বাংলাদেশকে সামনে রাখার ক্ষেত্রে সব রাজনৈতিক দল এবং আমাদের যত স্টেক হোল্ডার আছে সবার ঐকমত্য চাই আমরা। এটাই হচ্ছে, এখন আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি।’
মাহফুজ আলম বলেন, ‘রাষ্ট্রের জায়গা থেকে আমাদের যেটা দরকার সেটা হলো বাস্তবতা। কোনো রকম হঠকারিতা আমরা করতে পারি না। আমরা রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব, জাতীয় নিরাপত্তা, অখণ্ডতা—আমাদের জায়গায় আমাদের কীভাবে শক্তি বৃদ্ধি করা যায়, সেখানে মনোযোগ দিতে চাই। কোন রাষ্ট্র কী করল সেটার চেয়ে বড় বিষয় আমাদের সক্ষমতা বাড়ানো, আমাদের দর-কষাকষির সক্ষমতা বাড়ানো। সক্ষমতা বাড়াতে পারলে জনগণকে উপকৃত করবে।’
বিগত সরকারের সময়ে এবং ৫ আগস্টের পরের হঠকারী সিদ্ধান্তের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মাহফুজ আলম বলেন, ‘গত সরকার হঠকারিতার চেয়ে যেটা বেশি করেছে সেটা হচ্ছে, নতজানু একটা পররাষ্ট্রনীতি তারা নিয়েছে। আর আমাদের সরকারের জায়গা থেকে আমরা চেষ্টা করছি, বাস্তবভিত্তিক পররাষ্ট্রনীতি। যদি কোনো হঠকারী বা ভুল থাকে, সেটা আমরা শোধরানোর চেষ্টা করব। ’
এক প্রশ্নের উত্তরে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম জানান, শেখ হাসিনাকে ভারত সরকার ফেরত দেবে না বলে শুনতে পেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এটা একটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ওনারা (ভারত) নিয়েছেন, ওনারা (ভারত) ওনাকে (শেখ হাসিনা) ফেরত দেবে না। এটা আমরা শুনতে পাচ্ছি।’