ঢাকা ০১:৪১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দুর্ভোগ এড়াতে আগেই বাড়ির পথে যাত্রীরা

মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি : স্ত্রী ফারহানাকে নিয়ে ঢাকার কদমতলী থেকে মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাটে এসেছেন আরিফুল ইসলাম। ঘাটে এসে ফেরি না পেয়ে একহাতে স্ত্রীকে ধরে, অন্য হাতে স্যুটকেস নিয়ে লঞ্চের দিকে ছুটছেন। উদ্দেশ্য পদ্মা পাড়ি দিয়ে শরীয়তপুরের গোশাইরহাট নাগেরপাড়ায় পৌঁছানো।

ঈদের এখনো বাকি ৮ দিন। তবে আগেভাগেই গ্রামে চলে যাচ্ছেন এই দম্পতি। গ্রামে ফেরার আনন্দের সঙ্গে চোখে যেন এখনো ভয়ের ছাপ। গতবছর এই নৌরুটে যাত্রার সময় ফেরিতে যাত্রীর চাপে চোখের সামনে মৃত্যু দেখছিলেন দুজনই। সেই যাত্রায় প্রাণে বেঁচেছেন তাই এবছর আগে ভাগেই বাড়ির পানে তাদের ছুটে চলা।

শনিবার (২৩ এপ্রিল) দুপুরে শিমুলিয়া লঞ্চঘাটে কথা হয় এই দম্পতির সঙ্গে। করোনা পরিস্থিতির আগে প্রবাস থেকে দেশে এসে আর ফিরতে পারেননি আরিফুল ইসলাম। এখন কদমতলীতে টি-শার্ট তৈরির কারখানা দেখাশুনার কাজ তার।

আরিফুল ইসলাম জানান, গ্রামে স্বজনরা আছেন, তাদের সঙ্গে আনন্দ করে ঈদ উদযাপন করবো, তাই গ্রামে যাচ্ছি। প্রতিবছর ফেরিতে আমাদের চরম ভোগান্তি হয়। গত বছরতো বাঁচবো না মরবো সেই নিশ্চয়তা ছিলো না। আমরা যে ফেরিতে গেছি সেই ফেরির কয়েকজন মারা গেছে। বাসার সবাই কান্নাকাটি শুরু করেছিল।

এবার এজন্য ১০ দিন আগেই চলে যাচ্ছি। শুনলাম ফেরি সীমিত। মাত্র ৬-৭টি চলছে। তাই স্ত্রী যেন দুর্ভোগে না পড়ে সেজন্য দশ দিন আগেই ওকে নিয়ে রওনা দিলাম।

অভিযোগ করে আরিফুলবলেন, এতদিন আগে এসেও ফেরি পেলাম না। গাড়ি নিয়ে আসছিলাম ফেরি না থাকায় গাড়ি পাঠিয়ে দিতে হয়েছে। এখন নদী পার হতে হবে লঞ্চে করে। কয়দিন পর এলে হয়তো যন্ত্রণাটা আরো বেশি হতো।

শিমুলিয়া-বাংলাবাজার ও মাঝিকান্দি নৌরুটে বেশ কয়েক মাস যাবতই সীমিত সংখ্যক ফেরি সচল রয়েছে। গত বছর এ নৌরুটে ১৫-১৭টি ফেরি চললেও এবছর চলছে ৭টি ফেরি। ফেরি স্বল্পতায় এবারের ঈদযাত্রায় আরিফুলের মতো দুর্ভোগের আশংকা এ রুটের প্রায় সকল যাত্রীর।

শনিবার আরিফুল-ফারহানার মতো আরো অনেককে দেখা যায় ভোগান্তি এড়াতে আগেভাগেই বাড়ির পানে ছুটতে।

বিআইডব্লিউটিসি ও বিআইডব্লিটিএ সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে এরুটে ১৫৩টি স্পিডবোট, ৮৭টি লঞ্চ ও ৭টি ফেরি দিয়ে যাত্রী ও যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে।

বিআইডব্লিউটিসি শিমুলিয়া ঘাটের ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) জামাল হোসেন জানান, শনিবার সকালের দিকে যানবাহনের উপস্থিতি বেশি থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পর্যায়ক্রমে এসব যানবাহন পারাপার করা হয়। শিমুলিয়া-বাংলাবাজার ও মাঝিকান্দি নৌরুটে ১টি মিনি রোরো, দুইটি মিডিয়াম ও দুইটি ডাম্পসহ ৭টি ফেরি দিয়ে যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে।

তিনি জানান, শিমুলিয়া বাংলাবাজার ও শিমুলিয়া মাঝিকান্দি নৌরুটে ঈদে ফেরি থাকবে ১০টি। বর্তমানে নৌরুটে ৬টি ফেরি রয়েছে। আরো ৪টি যুক্ত করা হবে। শিমুলিয়া-বাংলাবাজারে ২৪ ঘণ্টা ফেরি চলাচলের জন্য আমরা কর্তৃপক্ষকে একটি চিঠি দিয়েছি এবং আশা করছি এটি অনুমোদন হবে। সেক্ষেত্রে শিমুলিয়া-বাংলাবাজার এবং শিমুলিয়া মাঝিকান্দি নৌরুটে ২৪ ঘণ্টা ফেরি চলাচল করবে।

এই নৌরুটে যেহেতু শুধুমাত্র ছোট গাড়ি পার হবে সেক্ষেত্রে ১০টি ফেরি পর্যাপ্ত মনে হয়। যানজটের আশঙ্কাও কম থাকবে, তাই সমস্যা হবে না বলে মনে করেন এ কর্মকর্তা।

ট্যাগস
সর্বাধিক পঠিত

আলিশান চাল, নওগাঁ

বিজ্ঞাপন দিন

দুর্ভোগ এড়াতে আগেই বাড়ির পথে যাত্রীরা

আপডেট সময় ১২:১৪:০৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২২

মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি : স্ত্রী ফারহানাকে নিয়ে ঢাকার কদমতলী থেকে মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাটে এসেছেন আরিফুল ইসলাম। ঘাটে এসে ফেরি না পেয়ে একহাতে স্ত্রীকে ধরে, অন্য হাতে স্যুটকেস নিয়ে লঞ্চের দিকে ছুটছেন। উদ্দেশ্য পদ্মা পাড়ি দিয়ে শরীয়তপুরের গোশাইরহাট নাগেরপাড়ায় পৌঁছানো।

ঈদের এখনো বাকি ৮ দিন। তবে আগেভাগেই গ্রামে চলে যাচ্ছেন এই দম্পতি। গ্রামে ফেরার আনন্দের সঙ্গে চোখে যেন এখনো ভয়ের ছাপ। গতবছর এই নৌরুটে যাত্রার সময় ফেরিতে যাত্রীর চাপে চোখের সামনে মৃত্যু দেখছিলেন দুজনই। সেই যাত্রায় প্রাণে বেঁচেছেন তাই এবছর আগে ভাগেই বাড়ির পানে তাদের ছুটে চলা।

শনিবার (২৩ এপ্রিল) দুপুরে শিমুলিয়া লঞ্চঘাটে কথা হয় এই দম্পতির সঙ্গে। করোনা পরিস্থিতির আগে প্রবাস থেকে দেশে এসে আর ফিরতে পারেননি আরিফুল ইসলাম। এখন কদমতলীতে টি-শার্ট তৈরির কারখানা দেখাশুনার কাজ তার।

আরিফুল ইসলাম জানান, গ্রামে স্বজনরা আছেন, তাদের সঙ্গে আনন্দ করে ঈদ উদযাপন করবো, তাই গ্রামে যাচ্ছি। প্রতিবছর ফেরিতে আমাদের চরম ভোগান্তি হয়। গত বছরতো বাঁচবো না মরবো সেই নিশ্চয়তা ছিলো না। আমরা যে ফেরিতে গেছি সেই ফেরির কয়েকজন মারা গেছে। বাসার সবাই কান্নাকাটি শুরু করেছিল।

এবার এজন্য ১০ দিন আগেই চলে যাচ্ছি। শুনলাম ফেরি সীমিত। মাত্র ৬-৭টি চলছে। তাই স্ত্রী যেন দুর্ভোগে না পড়ে সেজন্য দশ দিন আগেই ওকে নিয়ে রওনা দিলাম।

অভিযোগ করে আরিফুলবলেন, এতদিন আগে এসেও ফেরি পেলাম না। গাড়ি নিয়ে আসছিলাম ফেরি না থাকায় গাড়ি পাঠিয়ে দিতে হয়েছে। এখন নদী পার হতে হবে লঞ্চে করে। কয়দিন পর এলে হয়তো যন্ত্রণাটা আরো বেশি হতো।

শিমুলিয়া-বাংলাবাজার ও মাঝিকান্দি নৌরুটে বেশ কয়েক মাস যাবতই সীমিত সংখ্যক ফেরি সচল রয়েছে। গত বছর এ নৌরুটে ১৫-১৭টি ফেরি চললেও এবছর চলছে ৭টি ফেরি। ফেরি স্বল্পতায় এবারের ঈদযাত্রায় আরিফুলের মতো দুর্ভোগের আশংকা এ রুটের প্রায় সকল যাত্রীর।

শনিবার আরিফুল-ফারহানার মতো আরো অনেককে দেখা যায় ভোগান্তি এড়াতে আগেভাগেই বাড়ির পানে ছুটতে।

বিআইডব্লিউটিসি ও বিআইডব্লিটিএ সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে এরুটে ১৫৩টি স্পিডবোট, ৮৭টি লঞ্চ ও ৭টি ফেরি দিয়ে যাত্রী ও যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে।

বিআইডব্লিউটিসি শিমুলিয়া ঘাটের ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) জামাল হোসেন জানান, শনিবার সকালের দিকে যানবাহনের উপস্থিতি বেশি থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পর্যায়ক্রমে এসব যানবাহন পারাপার করা হয়। শিমুলিয়া-বাংলাবাজার ও মাঝিকান্দি নৌরুটে ১টি মিনি রোরো, দুইটি মিডিয়াম ও দুইটি ডাম্পসহ ৭টি ফেরি দিয়ে যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে।

তিনি জানান, শিমুলিয়া বাংলাবাজার ও শিমুলিয়া মাঝিকান্দি নৌরুটে ঈদে ফেরি থাকবে ১০টি। বর্তমানে নৌরুটে ৬টি ফেরি রয়েছে। আরো ৪টি যুক্ত করা হবে। শিমুলিয়া-বাংলাবাজারে ২৪ ঘণ্টা ফেরি চলাচলের জন্য আমরা কর্তৃপক্ষকে একটি চিঠি দিয়েছি এবং আশা করছি এটি অনুমোদন হবে। সেক্ষেত্রে শিমুলিয়া-বাংলাবাজার এবং শিমুলিয়া মাঝিকান্দি নৌরুটে ২৪ ঘণ্টা ফেরি চলাচল করবে।

এই নৌরুটে যেহেতু শুধুমাত্র ছোট গাড়ি পার হবে সেক্ষেত্রে ১০টি ফেরি পর্যাপ্ত মনে হয়। যানজটের আশঙ্কাও কম থাকবে, তাই সমস্যা হবে না বলে মনে করেন এ কর্মকর্তা।