আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ নভেল করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন নেয়ার পর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মেয়ে ক্যাটেরিনা তিখোনোভা মারা গেছেন বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি খবর ভাইরাল হয়েছে।
এতে বলা হচ্ছে, রাশিয়ার বিজ্ঞানীদের তৈরি কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন স্পুটনিক-৫ নেয়ার পর পুতিনের কন্যা ক্যাটেরিনা মারা গেছেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল এই সংবাদ আদৌ সত্য নাকি গুজব? এ বিষয়ে ফ্যাক্ট চেক করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম আইবি টাইমস।
ব্রিটিশ এই সংবাদমাধ্যম বলছে, গত ১১ আগস্ট বিশ্বে প্রথম নভেল করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনের চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় রাশিয়া,-
যা মানবদেহে প্রয়োগে রুশ সরকারের সবুজ সংকেত পায়। মানবদেহে প্রয়োগের জন্য ইতোমধ্যে এই ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ উৎপাদন করেছে দেশটি।
পুতিন কন্যার মৃত্যু নিয়ে ভাইরাল দাবিটা কি?
করোনাভাইরাস মহামারির বিরুদ্ধে বিশ্বের প্রথম ভ্যাকসিনের ঘোষণা দেয়ার সময় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছিলেন, এটি নিরাপদ এবং কার্যকর। শুধু তাই নয়, ভ্যাকসিনটি তার মেয়ের শরীরে প্রয়োগ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
রুশ এই প্রেসিডেন্টের দুই মেয়ে রয়েছে; যাদের সম্পর্কে জনসম্মুখে খুব কমই কথা বলতে দেখা যায় পুতিনকে। তার এ ঘোষণার পর একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে ছড়িয়ে পড়ে।
এতে দেখা যায়, একটি মেয়েকে স্পুটনিক-৫ ভ্যাকসিন পুশ করা হচ্ছে। এই ভিডিওর ক্যাপশনে লেখা হয়, করোনাভাইরাসের প্রথম ভ্যাকসিন তৈরি করেছে রাশিয়া।
দেখুন— পুতিনের মেয়ে প্রথমে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন নিচ্ছেন। যদিও ভিডিওতে দেখা যাওয়া মেয়ের সঙ্গে পুতিনের মেয়ের কোনও মিল নেই।
গত ১৫ আগস্ট টরোন্টো ট্যুডে নামের একটি সংবাদমাধ্যমের ওয়েবসাইটে ভুয়া একটি খবর প্রকাশিত হয়। এই সংবাদের শিরোনামে বলা হয়, কোভিড ভ্যাকসিনের-
দ্বিতীয় ডোজ নেয়ার পর মারা গেছেন ভ্লাদিমির পুতিনের কন্যা। এই সংবাদটি মুহূর্তের মধ্যেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে ছড়িয়ে পড়ে।
এই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘চিকিৎসকরা ভ্যাকসিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছেন। পুতিনের কন্যা ক্যাটেরিনা তিখোনোভা ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ নেয়ার পরপরই মারা যান।
রাশিয়ার পরীক্ষামূলক কোভিড ভ্যাকসিন নেয়ার পর অপ্রত্যাশিত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় ভোগেন পুতিনকন্যা। পরে মস্কোতে মারা যান তিনি। ক্রেমলিন এখনও তার মৃত্যু নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোনও বিবৃতি দেয়নি।
এই দাবি জোরাল করতে সংবাদমাধ্যমটি অজ্ঞাত একটি সূত্রের বরাত দিয়ে জানায়, ‘রাশিয়ার একটি সূত্র বলেছে— ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ নেয়ার-
পরপরই পুতিনের কন্যা ক্যাটেরিনার শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। চিকিৎসকরা ভ্যাকসিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ঠেকাতে সক্ষম হননি। গতকাল সন্ধ্যায় তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়েছে।’
ইউটিউবেও একটি চ্যানেলে পুতিনকন্যার মৃত্যুর খবর প্রকাশ করা হয়। যদি পরবর্তীতে ওই চ্যানেল থেকে ভিডিওটি মুছে ফেলা হয়েছে।
ভুয়া দাবিই বিশ্বাস করেন অনেকে
ফ্যাক্টচেকিং ওয়েবসাইট স্নোপস বলছে, প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং ক্রেমলিন এই বিষয়ে কোনও ধরনের বিবৃতি না দেয়ায় ক্যাটেরিনার মৃত্যুর দাবিটি ভিত্তিহীন বলে তারা নিশ্চিত হয়েছেন।
এছাড়া যে সংবাদমাধ্যমটি থেকে পুতিনকন্যার মৃত্যুর খবরটি ভাইরাল হয়ে ছড়িয়েছে; সেই ওয়েবসাইটটিও সংবাদটি প্রকাশের মাত্র কয়েকসপ্তাহ আগে তৈরি করা হয়েছে।
পুতিনের কন্যার মারা যাওয়ার এই দাবি টুইটারে অনেকেই বিশ্বাস করেন; মুহূর্তের মধ্যে ট্রেন্ড হয়ে যায় এই ভুয়া দাবি। একজন ব্যবহারকারী লেখেন, প্রচুর মৃত্যুর পরীক্ষা চলছে।
পুতিনের মেয়েও মারা গেলেন। ১৬টি পরীক্ষার মধ্যে ৬ থেকে ৭ জনই মারা যাচ্ছেন। অল্প মৃত্যু। আমি মনে করি, এটি বাধ্যতামূলক আত্মহত্যা।
আসলে পুতিন কন্যার মৃত্যুর দাবিটি ভুয়া। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল এই সংবাদ বিশ্বাস করার কোনও নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া যায়নি।
কোনও সূত্রই এই সংবাদের সত্যতা নিশ্চিত করেনি। এমনকি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পরিবারের পক্ষ থেকেও কোনও বিবৃতি দেয়া হয়নি। সূত্র: ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস টাইমস।