এম অার রকি:
কোনো এক শ্রাবণ সন্ধ্যায়,
অথবা অাষাঢ়ের মধ্য দুপরে,
হৃদয়ের প্রেম বড় উতলা উদাস
বেণু বন, বিরহী কেকা
অথবা চাতকীর চতুর্ভুজ চেতনার
জল তৃষা,
হিজলের অথবা তমাল তরু
তার পাশে বসা,
মেঘ ছুঁবে তুমি রমণীয়া?
কবির এমন উদাশ করা কবিতার রুপ রসের স্বাদ গ্রহনের দিন অাজ ।
ষড়ঋতুর বাংলায় এসেছে আষাঢ়। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায় ‘আবার এসেছে আষাঢ় আকাশও ছেয়ে… আসে বৃষ্টিরও সুবাস ও বাতাসও বেয়ে।’
রূপময় ঋতু বর্ষার প্রথম দিন পয়লা আষাঢ় আজ। আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হলো ঋতু বর্ষার। বর্ষাকাল চলবে শ্রাবণের শেষ দিনটি পর্যন্ত।
কবিগুরু এই বর্ষাকে নিয়েই লিখেছেন- ‘ঐ আসে ঐ ঘন গৌরবে নবযৌবন বরষা, শ্যাম গম্ভীর সরসা…’ কিংবা ‘এমনও দিনে তারে বলা যায়, এমনও ঘনঘোর বরষায়…’।
আমাদের জাতীয় কবি নজরুল লিখেছেন- রিমঝিম রিমঝিম ঘন দেয়া বরষে/ কাজরি নাচিয়া চল, পুর-নারী হরষে/ কদম তমাল ডালে দোলনা দোলে/ কুহু পাপিয়া ময়ূর বোলে,/ মনের বনের মুকুল খোলে/ নট-শ্যাম সুন্দর মেঘ পরশে.।
এবার বর্ষা আমাদের দ্বারে এসেছে এক অভিশপ্ত করোনাকালে। করোনায় মৃত্যু দেখতে দেখতে চারদিকে শোকাতুর পরিবেশ। শোকে আচ্ছন্ন গোটা দেশ। মধুময় বর্ষার রূপরস উপলব্ধির সময় কোথায়?
এবার বর্ষা এমন সময়ে এলো যখন গরমের দাপট চলছে । বৃষ্টি হচ্ছে ক’দিন ধরেই, কিন্তু গরম কমছে না।আকাশেও মেঘের ঘনঘটা। আছে নিম্নচাপ, অন্যদিকে ঝিরঝির বৃষ্টি। আসলে প্রকৃতি যেন বলেই দিচ্ছে সময়টা এখন বর্ষার ।
এ সময়ে আবহাওয়ার পূর্বাভাস এ রকম- মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের উপর সক্রিয়। রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা ,চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং ময়মনসিংহ বিভাগের কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে থেকে মাঝারী ধরনের বৃষ্টি ও বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।সেই সাথে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারী ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। রাজধানী ঢাকায় জ্যৈষ্ঠের শেষদিনে বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতা ছিল ৯৭ শতাংশ।
ইতিহাস বলে এ সময় জলীয় বাষ্পবাহী দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু সক্রিয় হয়ে ওঠে। ফলে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। বছরের সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি রেকর্ড করা হয় বর্ষায়। তাই চারপাশের পরিবেশ বদলে যায়।
চিরকালই আষাঢ় সাজে নানা রূপে। বৃষ্টিরধারায় নবতর জীবন আসে পুষ্প-বৃক্ষে, পত্রপল্লবে, নতুন প্রাণের সঞ্চার করে প্রকৃতির অবয়বে। নতুন সুরের বার্তা নিয়ে সবুজের সমারোহে আগমন বর্ষার। বর্ষা বাঙালী জীবনে চিরকালই কামনার। আজও ফুরায়নি সে আবেদন। কারণ, বর্ষা মানেই সতেজ বাতাসে জুঁই, কামিনি, বেলি, রজনীগন্ধা, দোলনচাঁপা আরো কত ফুলের সুবাস। উপচেপড়া পুকুরে রঙিন হয়ে ফোঁটে পদ্ম, সে কেবলই বর্ষাকে পাওয়ার জন্য। কেয়ার বনেও কেতকীর মাতামাতি। আহা কত না মধুর এই বরষা। যদিও সে বর্ষা এখন কল্পনাতেই বেশি খুঁজে নিতে হয়।
কবিগুরুর একটি গানের প্রথম লাইন- ‘বাদল-দিনের প্রথম কদম ফুল করেছ দান’। সম্ভবত এজন্যই কী গ্রাম, কী নগর সর্বত্রই বর্ষার আগমনী বার্তা দেয় ‘কদম ফুল’। যেন একই কথার জানান দিতে পেখম মেলে ময়ূর। বৃষ্টির জল গায়ে নিয়ে নৃত্য করে। তুলে ধরে বর্ষায় প্রকৃতির এমন পরিবর্তনের কথা।
সুখ স্মৃতিগুলো মনে রেখেই প্রতিবছর বর্ষাকে বরণ করে নেয় বাঙালী। বিশেষ করে শহরে নগরে হরেক আয়োজনে চলে বর্ষা বন্দনা। প্রতিবারের মতো এবার করোনা পরিস্থিতির জন্য রাজধানীতে এবার বর্ষাবরণের নানা আয়োজন হয়তো থাকবেনা। তাই বলে প্রতিটি মনেই বেজে ওঠা বর্ষার রাগিনীকে দমিয়ে রাখা যাবেনা।
বর্ষা যেমন আনন্দের, তেমনি বিষাদে ভরিয়ে তোলারও। তবুও বর্ষা বাঙালী জীবনে নতুনের আবাহন।