রংপুর প্রতিনিধিঃ রংপুর অফিস তিস্তা নদী থেকে উদ্ধার হওয়া পোষাক শ্রমিক মৌসুমী আক্তারের লাশ নিয়ে তোলপাড় চলছে রংপুর ও লালমনিরহাটে।
শনিবার মধ্যরাতে রংপুরের মর্ডাণ এলাকায় পণ্যবাহী একটি ট্রাক থেকে পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে। ময়নাতদন্ত শেষে ওই দিনই লাশ পরিবারের কাছে হস্তাস্তর করে।
কিন্তু ঈদের আগের দিন রবিবার বিকালে মহিষখোচায় তিস্তা নদী থেকে সেই লাশ আবারও উদ্ধার করে লালমনিরহাটের আদিতমারী থানা পুলিশ।
মৌসুমীর বাবা পাটগ্রামের ফকিরপাড়া গুচ্ছগ্রামের গোলাম মোস্তফা পুলিশের কাছে বলেছেন, ইউপি চেয়ারম্যানের হুমকীতে মেয়ের লাশ গ্রামে নিয়ে যেতে না পেরে রংপুর মেডিকেল থেকে লাশটি যে অ্যাম্বুলেন্সে নিয়ে ফিরছিলেন, সেই অ্যাম্বুলেন্সের চালককে লাশটি অন্য কোথাও দাফনের জন্য ৫ হাজার টাকা দিয়েছিলেন।
পরে কীভাবে সেই লাশ নদীতে গেছে তা তিনি জানেন না। পুলিশ ও পরিবারিক সূত্রে জানা গেছে, অসুস্থ্যতার কারণে গত শনিবার সকালে ঢাকা থেকে একটি পণ্যবাহী ট্রাকে করে গ্রামের বাড়ি লালমনিরহাটের পাটগ্রামের উদ্দেশ্য রওনা দেন মৌসুমী।
এদিন মধ্যরাতে তাজহাট থানার ২শ গজের মধ্যে মর্ডাণ মোড়ে একটি ট্রাক থেকে তার লাশ উদ্ধার করে তাজহাট থানা পুলিশ।
পরে রংপুর মেডিকেলে ময়নাতদন্ত ও করোনার নমুনা সংগ্রহ শেষে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করে পুলিশ।
ট্রাকটি আটক করলেও ট্রাকের চালক ও হেল্পারকে ছেড়ে দেয়া হয়। তাজহাট থানার অফিসার ইনচার্জ রোকনুজ্জামান দাবি করেন, ঢাকা থেকে আসার পথে গাজীপুরেই মৌসুমীর মৃত্যু হয়।
কিন্তু করোনায় আক্রান্ত হয়ে তার মৃত্যু হয়েছে সন্দেহ করে ট্রাকের চালক থানায় খবর দিলে তারা মর্ডাণ এলাকা থেকে লাশ উদ্ধার করেন।
কিন্তু মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক মামুনুর রশীদ বলেছেন, ৯৯৯ থেকে খবর পেয়ে তারা লাশটি উদ্ধার করেছেন।
কোন অভিযোগ না থাকায় মৃত মৌসুমীর বাবা গোলাম মোস্তফার জিম্মায় ট্রাকের চালক ও হেল্পারকে ছাড়া হয়েছে।
আদিতমারী থানার অফিস ইনচার্জ সাইফুল ইসলাম জানান, রবিবার বিকালে লাশ উদ্ধার করে তার বাবার কাছে হস্তান্তর করতে চাইলে তিনি মেয়ের লাশ নিতে অস্বীকৃতি জানানোয় পুলিশের উদ্যোগে পাটগ্রাম কবরস্থানে দাফন করা হয়।
তিনি জানান, লাশ গ্রামে নিতে চেয়ারম্যান বাঁধা দেয়ার অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। লাশ মৌসুমীর বাবা বাবা নাকী অন্য কেউ নদীতে ফেলেছেন তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
তাজহাট থানা পুলিশের তত্বাবধানে মর্ডাণ মোড় থেকে লাশ উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেলে এবং ময়নাতদন্ত শেষে একই অ্যাম্বুলেন্সে করে পাটগ্রামে নিয়ে যাবার তথ্য থাকলেও ওই চালককে এখনও খুঁজে পায়নি পুলিশ।
আদিতমারী থানার অফিস ইনচার্জ জানান, রংপুর মেডিকেলে অনেক অ্যাম্বুলেন্স থাকায় অভিযুক্ত চালককে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
এদিকে লাশ দাফনে বাঁধা দেয়ার যে অভিযোগ করেছেন মৌসুমির বাবা গোলাম মোস্তফা যে অভিযোগ করেছেন তা অস্বীকার করে পুরো ঘটনা পূর্ণতদন্তের দাবি জানিয়েছেন পাটগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান আবু সাইদ নেওয়াজ নিশাদ।
তিনি বলেন, মৌসুমীর মায়ের মাধ্যমে জানতে পেরে পাটগ্রাম থানার অফিসার ইনচার্জের মাধ্যমে তাজহাট থানা পুলিশের সঙ্গে কথা বলে তিনিই ময়নাতদন্ত করে লাশটি আনার ব্যাবস্থা করেন।
কিন্তু রংপুর মেডিকেল থেকে লাশ গ্রহণের পর পাটগ্রাম থানার ওসিসহ তিনি গোলাম মোস্তফার সঙ্গে চেষ্টা করেও আর যোগাযোগ করতে পারেননি বলে দাবি করেন।
মৌসুমীর বাবা গোলাম মোস্তফা অভিযোগ করছেন, চেয়ারম্যানের হুমকীর কারণে তিনি মেয়ের লাশ গ্রামে আনতে না পেরে বাধ্য হয়ে অ্যাম্বুলেন্সের চালককে মেয়ের লাশ অন্য কোথাও দাফনের জন্য দেন।
এ জন্য ওই চালককে ৫ হাজার টাকাও দিয়েছিলেন বলে জানান গোলাম মোস্তফা। তাকে উদ্ধৃত করে ‘মেয়ের লাশ দাফন করতে না পেরে নদীতে ভাসিয়ে দিলেন বাবা” শীরোনামে কয়েকটি গণমাধ্যমে খবর প্রকাশের পর এ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে রংপুর ও লালমনিরহাটে।