ক্রীড়া ডেস্কঃ বার্সেলোনার সাজানো বাগান ছেড়ে বেশ ঘটা করে পিএসজিতে পাড়ি জমিয়েছিলেন নেইমার জুনিয়র। ফুটবলভক্তদের মধ্যে গুঞ্জন আছে, মূলত মেসির ছায়া থেকে বের হয়ে নিজস্ব অবস্থান তৈরি করা জন্য ক্যাম্প ন্যু ছেড়েছিলেন ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড।
কিন্তু অল্প কিছুদিন পরেই স্বপ্নভঙ্গ হয় তার। বুঝতে পারেন, বড় ভুল হয়ে গেছে।
২০১৩ সালে ব্রাজিলের সান্তোস থেকে অনেক বড় স্বপ্ন নিয়ে কাতালান জায়ান্টদের ঘরে প্রবেশ করেন নেইমার। এরপর চার বছর দলটির হয়ে ১২৩ ম্যাচ খেলে ৬৮ গোল করেন তিনি। এই সময়ে লা লিগা, চ্যাম্পিয়নস লিগ, ক্লাব বিশ্বকাপসহ সব বড় শিরোপা জেতার স্বাদও পেয়ে যান। এই সময়ে মেসি, সুয়ারেজ আর নেইমার মিলে গড়ে তোলেন বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী আক্রমনভাগ, যার নামই হয়ে যায়, ‘এমএসএন’।
একসঙ্গে খেলার সময় থেকেই মেসির সঙ্গে নেইমারে বন্ধুত্ব ছিল অতুলনীয়। শুধু মাঠে নয়, মাঠের বাইরেও তাদের বোঝাপড়া ছিল দারুণ। এজন্যই প্রিয় বন্ধুকে ছেড়ে প্যারিসে পাড়ি জমানোর পর এক মৌসুম না যেতেই নেইমার নিজের ভুল বুঝতে পারেন। তিনি বুঝতে পারেন, মেসিকে ছায়া থেকে বের হয়েছেন ঠিকই, কিন্তু যে উদ্দেশ্যে প্যারিসে পাড়ি জমালেন তার কোনোটাই এখন পূরণ হওয়ার নয়। কিন্তু ততক্ষণে দেরি হয়ে গেছে।
করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের পর ফ্রান্স ছেড়ে ব্রাজিলে ফিরে গেছেন নেইমার। সেখানেই সম্প্রতি মেসির সঙ্গে বার্সেলোনায় কাটানো সময়ের কথা মনে করে কেঁদে ফেলেন তিনি। তিনি স্বীকার করেন, আর্জেন্টাইন জাদুকরকে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে পাশে পেয়েছেন তিনি।
রেডিও গ্লোবো’র ‘এস্পোর্তে এসপেতাকুলার’কে নেইমার বলেন, ‘সত্যি বলতে, মেসি সম্পর্কে কথা বলা আমার জন্য খুব কঠিন। কারণ বার্সেলোনায় সঙ্গে কাটানো সময়গুলো আমার জন্য অনেক অনেক স্পেশাল। আমি সবাইকেই এটা বলি। আমার যখনই সবচেয়ে বেশি সমর্থন দরকার হতো, বিশ্বের সবচেয়ে সেরা খেলোয়াড় হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলতো: এসো, আমি তোমাকে সাহায্য করতে এসেছি।’
বার্সায় তরুণ নেইমারকে আগলে রাখতেন মেসি। ছয়বারের ব্যালন ডি’অর জয়ী নেইমারকে ‘লজ্জা’ পেতে নিষেধ করতেন এবং ক্লাবের কাউকে ভয় না পাওয়ার পরামর্শ দিতেন।
২০১৭ সালে বিশ্বরেকর্ড ২২২ মিলিয়ন ইউরো ট্রান্সফার ফি’তে পিএসজিতে পাড়ি জমান নেইমার। ২০১৮ সালে মেসি নিজেই আবার ব্রাজিলিয়ান তারকাকে বার্সায় ফিরে পাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন। স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম ‘মার্কা’কে তখন মেসি বলেছিলেন, ‘আমার মতে নেইমারের জন্য পিএসজি ছেড়ে আসা কঠিন। তবে খেলোয়াড় হিসেবে এবং ড্রেসিং রুমের জন্য তার ফিরে আসাটা হবে দারুণ। আমরা বন্ধু, একসঙ্গে আমাদের অনেক ভালো অভিজ্ঞতা আছে। কিন্তু পিএসজি তাকে ছাড়বে না।’
মেসির কথা সত্যি হয়েছে। গত মৌসুম শেষ নেইমারকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছিল বার্সা। কিন্তু পিএসজি তাকে কিছুতেই ছাড়তে রাজি হয়নি। আকাশছোঁয়া দাম হাঁকিয়ে বার্সার মনোবল ভেঙে দিয়েছে। সামনের দলবদলের বাজার থেকে ফের নেইমারকে কেনার স্বপ্ন দেখছে বার্সা। কিন্তু এবার করোনা ভাইরাসের প্রভাবে ক্লাবের আর্থিক অবস্থা খারাপ হয়ে যাওয়ায় সেই সম্ভাবনাও কমে যাচ্ছে।