ঢাকা ১২:১৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ :
Logo নারায়ণগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গাড়িবহরে হামলা Logo ঢাকায় এলেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব Logo বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের টানা দ্বিতীয়বারের মতো এশিয়া কাপ জয় Logo নওগাঁয় চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতির বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগে মানব বন্ধন Logo নওগাঁয় মোবাইল কোর্টে ব্যবসায়ী ও ট্রাক চালকের জরিমানা Logo সেবা প্রার্থীদের বিশ্রামের জন্য নিজ উদ্যোগে ব্রেঞ্চ দিলেন বেলাল Logo বাংলাদেশ ব্যাটিং ব্যর্থতায় এক ম্যাচ আগেই সিরিজ হার Logo মানুষ আমার প্রেমে পড়ে, আমি পড়ি না: পরীমণি Logo বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত ব্যবসা বন্ধ করলে তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে: উপদেষ্টা সাখাওয়াত Logo অন্তর্বর্তী সরকার আ.লীগকে নিষিদ্ধ করতে পারে না: জিএম কাদের

১৩ মাস পর কার্ড পেলেন নারী, ৩৬০ কেজি চাল উধাও

ভুক্তভোগী মদিনা

 

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি: কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার খলিসাকুন্ডিতে এক নারীর ভিজিডি’র কার্ডের ১২ বস্তা চালের কোনো হদিসনেই। সেই সঙ্গে কার্ড হওয়ার দীর্ঘ ১৩ মাস পর হাতে পেয়েছেন ওই নারী।

জানা যায়, ২০১৯ সালের ১১ মার্চ দৌলতপুর উপজেলা খলিসাকুন্ডি এলাকার মদিনা খাতুনের নামে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের দেওয়া ভিজিডির কার্ড হয়।

কার্ড নম্বর ৭১। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য এই কার্ড হওয়ার ব্যাপারে কিছুই জানতেন না ভুক্তভোগী মদিনা। এদিকে তার ওই কার্ড ব্যবহার করে ১২ মাসের ৩০ কেজি করে খাদ্যশস্য উত্তোলন করে নেয় ইউপি চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে একটি দল।

যেহেতু কার্ডের স্বত্বাধিকারী মদিনা নিজেই কিন্তু কার্ডের বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। তাহলে কোথায় গেল এই ১২ মাসের খাদ্যশস্য? এমনই প্রশ্ন এলাকার সচেতন মানুষের।

ভুক্তভোগী মদিনা খাতুন বলেন, ২০১৯ সালের প্রথমের দিকে স্থানীয় মহিলা মেম্বার আমাকে ভিজিডি চালের কার্ড করে দেওয়ার কথা বলে। আমি তার কথা অনুসারে আমার ছবি এবং ভোটার আইডি কার্ড তার কাছে দিয়েছিলাম।

কিন্তু অনেক দিন পার হলেও আমার নামে কোনো কার্ড হয়নি বলে জানান মহিলা মেম্বার। পরে আমাদের এলাকার যাদের নামে কার্ড হয়েছে তারা চাল উত্তোলন করতে গিয়ে দেখেন মদিনার স্বামী কাউসার নামে একটি কার্ডে চাল উত্তোলন হচ্ছে।

শুনে আমি ইউনিয়ন পরিষদে খোঁজ নিলে আবারও আমাকে জানায় আমার নামে কোনো ভিজিডির চালের কার্ড হয়নি। বিষয়টি জানা জানি হলে ২২ এপ্রিল আমার কাছে কার্ড পৌঁছে দেন ইউপি সদস্য মনিরুল ইসলাম।

তিনি আরও বলেন, আমি নিজের নাম স্বাক্ষর করতে জানি। কিন্তু এই কার্ডে ১২ বার চাল উঠেছে টিপসই দিয়ে, আমার চাল গেল কোথায়? আমি এটার তদন্ত করে বিচার দাবি করছি।

এ ব্যপারে জানতে চাইলে সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্য কুটিলা খাতুন  বলেন, এ ব্যপারে আমি কিছুই জানি না। আমি কার্ড করে দেওয়ার জন্য তার কাছ থেকে কাগজপত্র নিয়েছিলাম। ইউনিয়ন পরিষদে জমাও দিয়েছিলাম। কিন্তু সে সময় তার কার্ড হয়েছিল না।

১২ মাসে তার কার্ডের চাল কে উত্তোলন করেছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা ইউপি সদস্য মনিরুজ্জামান বলতে পারবেন।

আমি যে একজন সংরক্ষিত আসনের সদস্য তারা আমাকে মানেই না। সে আর ইউনিয়ন পরিষদের লোকজন জানে। আমি কিছুই জানি না এ ব্যাপারে।

ইউপি সদস্য মনিরুল ইসলাম জানান, কার্ড হয়েছে কি হয়নি এটা আমি জানতাম না। গত ২২ এপ্রিল জানতে পারি কার্ড হয়েছে। তবে তারা খোঁজ নেয় না বিধায় কার্ড ইউনিয়ন পরিষদেই পড়ে ছিলো।

চাল কে উত্তোলন করেছে এ ব্যাপারে তিনি বলেন, চাল সম্পর্কে আমি কিছু জানি না। এর মধ্যে আমি নাই। সচিব সোহেল রানা জানাতে পারবে হয়তো।

খলিসাকুন্ডি ইউনিয়ন পরিষদের সচিব সোহেল রানা  জানান, বিষয়টি অফিসিয়ালভাবে কিভাবে কি হয়েছে আমি বুঝতে পারছি না। আর যেহেতু ওই নারী কার্ড নিয়ে যায়নি, তারপরেও তার কার্ডের চাল উত্তোলন হয়েছে বিষয়টি নিয়ে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরে তদন্ত করছে।

খলিসাকুন্ডি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজুল বিশ্বাস  জানান, বিষয়টি আমি শুনেছি। তবে আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ আসলে খতিয়ে দেখা হবে।

তবে এমন অভিন্ন প্রায় ডজন খানেক অভিযোগ রয়েছে ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারের বিরুদ্ধে। এলাকার অসহায় মানুষদের চাল আত্মসাতের ঘটনা ওই এলাকায় নতুন না বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।

দৌলতপুর উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা ইশরাত জাহান  জানান, বৃহস্পতিবার ঘটনাটি শোনা মাত্রই সেখানে গিয়ে ছিলাম। মহিলাটি আমাদের কার্ডভোগী, তবে তার কার্ডের চাল তিনি পাননি।

আমরা অভিযোগের সত্যতা পেয়েছি। রোববার (২৬ এপ্রিল) আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রতিবেদন দাখিল করবো।উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শারমিন আক্তার জানান, বিষয়টি আমি শুনেছি। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।

ট্যাগস
সর্বাধিক পঠিত

নারায়ণগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গাড়িবহরে হামলা

আলিশান চাল, নওগাঁ

বিজ্ঞাপন দিন

১৩ মাস পর কার্ড পেলেন নারী, ৩৬০ কেজি চাল উধাও

আপডেট সময় ০৫:৪১:২৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২০

 

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি: কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার খলিসাকুন্ডিতে এক নারীর ভিজিডি’র কার্ডের ১২ বস্তা চালের কোনো হদিসনেই। সেই সঙ্গে কার্ড হওয়ার দীর্ঘ ১৩ মাস পর হাতে পেয়েছেন ওই নারী।

জানা যায়, ২০১৯ সালের ১১ মার্চ দৌলতপুর উপজেলা খলিসাকুন্ডি এলাকার মদিনা খাতুনের নামে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের দেওয়া ভিজিডির কার্ড হয়।

কার্ড নম্বর ৭১। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য এই কার্ড হওয়ার ব্যাপারে কিছুই জানতেন না ভুক্তভোগী মদিনা। এদিকে তার ওই কার্ড ব্যবহার করে ১২ মাসের ৩০ কেজি করে খাদ্যশস্য উত্তোলন করে নেয় ইউপি চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে একটি দল।

যেহেতু কার্ডের স্বত্বাধিকারী মদিনা নিজেই কিন্তু কার্ডের বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। তাহলে কোথায় গেল এই ১২ মাসের খাদ্যশস্য? এমনই প্রশ্ন এলাকার সচেতন মানুষের।

ভুক্তভোগী মদিনা খাতুন বলেন, ২০১৯ সালের প্রথমের দিকে স্থানীয় মহিলা মেম্বার আমাকে ভিজিডি চালের কার্ড করে দেওয়ার কথা বলে। আমি তার কথা অনুসারে আমার ছবি এবং ভোটার আইডি কার্ড তার কাছে দিয়েছিলাম।

কিন্তু অনেক দিন পার হলেও আমার নামে কোনো কার্ড হয়নি বলে জানান মহিলা মেম্বার। পরে আমাদের এলাকার যাদের নামে কার্ড হয়েছে তারা চাল উত্তোলন করতে গিয়ে দেখেন মদিনার স্বামী কাউসার নামে একটি কার্ডে চাল উত্তোলন হচ্ছে।

শুনে আমি ইউনিয়ন পরিষদে খোঁজ নিলে আবারও আমাকে জানায় আমার নামে কোনো ভিজিডির চালের কার্ড হয়নি। বিষয়টি জানা জানি হলে ২২ এপ্রিল আমার কাছে কার্ড পৌঁছে দেন ইউপি সদস্য মনিরুল ইসলাম।

তিনি আরও বলেন, আমি নিজের নাম স্বাক্ষর করতে জানি। কিন্তু এই কার্ডে ১২ বার চাল উঠেছে টিপসই দিয়ে, আমার চাল গেল কোথায়? আমি এটার তদন্ত করে বিচার দাবি করছি।

এ ব্যপারে জানতে চাইলে সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্য কুটিলা খাতুন  বলেন, এ ব্যপারে আমি কিছুই জানি না। আমি কার্ড করে দেওয়ার জন্য তার কাছ থেকে কাগজপত্র নিয়েছিলাম। ইউনিয়ন পরিষদে জমাও দিয়েছিলাম। কিন্তু সে সময় তার কার্ড হয়েছিল না।

১২ মাসে তার কার্ডের চাল কে উত্তোলন করেছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা ইউপি সদস্য মনিরুজ্জামান বলতে পারবেন।

আমি যে একজন সংরক্ষিত আসনের সদস্য তারা আমাকে মানেই না। সে আর ইউনিয়ন পরিষদের লোকজন জানে। আমি কিছুই জানি না এ ব্যাপারে।

ইউপি সদস্য মনিরুল ইসলাম জানান, কার্ড হয়েছে কি হয়নি এটা আমি জানতাম না। গত ২২ এপ্রিল জানতে পারি কার্ড হয়েছে। তবে তারা খোঁজ নেয় না বিধায় কার্ড ইউনিয়ন পরিষদেই পড়ে ছিলো।

চাল কে উত্তোলন করেছে এ ব্যাপারে তিনি বলেন, চাল সম্পর্কে আমি কিছু জানি না। এর মধ্যে আমি নাই। সচিব সোহেল রানা জানাতে পারবে হয়তো।

খলিসাকুন্ডি ইউনিয়ন পরিষদের সচিব সোহেল রানা  জানান, বিষয়টি অফিসিয়ালভাবে কিভাবে কি হয়েছে আমি বুঝতে পারছি না। আর যেহেতু ওই নারী কার্ড নিয়ে যায়নি, তারপরেও তার কার্ডের চাল উত্তোলন হয়েছে বিষয়টি নিয়ে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরে তদন্ত করছে।

খলিসাকুন্ডি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজুল বিশ্বাস  জানান, বিষয়টি আমি শুনেছি। তবে আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ আসলে খতিয়ে দেখা হবে।

তবে এমন অভিন্ন প্রায় ডজন খানেক অভিযোগ রয়েছে ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারের বিরুদ্ধে। এলাকার অসহায় মানুষদের চাল আত্মসাতের ঘটনা ওই এলাকায় নতুন না বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।

দৌলতপুর উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা ইশরাত জাহান  জানান, বৃহস্পতিবার ঘটনাটি শোনা মাত্রই সেখানে গিয়ে ছিলাম। মহিলাটি আমাদের কার্ডভোগী, তবে তার কার্ডের চাল তিনি পাননি।

আমরা অভিযোগের সত্যতা পেয়েছি। রোববার (২৬ এপ্রিল) আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রতিবেদন দাখিল করবো।উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শারমিন আক্তার জানান, বিষয়টি আমি শুনেছি। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।