ঢাকা ১০:২৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

১০ টাকা কেজির চাল, এক পরিবারেই যাচ্ছে ৯০ কেজি

স্বামী-স্ত্রীর নামে তিনটি কার্ড।

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি :  করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ রোধে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে সবাইকে ঘরে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সরকারে পক্ষ থেকে।

আর এ পরিস্থিতিতে কর্মহীন মানুষ যাতে না খেতে থাকে এজন্য সরকারবান্ধব কর্মসূচির ১০ টাকা কেজি দরের চাল অসহায় মানুষদের মধ্যে বিতরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। একই সঙ্গে এই চাল বিতরণে অনিয়ম হলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সকরার।

কিন্তু এর উল্টো হচ্ছে টাঙ্গাইল সদর উপজেলার কাকুয়া ইউনিয়নে। অভিযোগ উঠেছে, একই ব্যক্তি রাফিজুল ইসলামের নামে দুইটি কার্ড।

তার স্ত্রী বোনোয়ারা বেগম নামেও আরেকটি কার্ড। এভাবে একই পরিবারের দুইজনের নামে তিনটি কার্ড দিয়ে ১০ টাকা কেজি দরে প্রতিমাসে ৩০ কেজি করে মোট ৯০ কেজি চাল তুলছেন।

অভিযোগটি করেন টাঙ্গাইল সদর উপজেলার কাকুয়া ইউনিয়ন কৃষক লীগের আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান। মূল তালিকা দেখে এ অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়।

দেলধা গ্রামের রাফিজুলের সিরিয়াল ১০৪১ ও ১০৯৬। তার স্ত্রী’র ১১১১। একই ধরনের অভিযোগ রাঙ্গাচিড়া গ্রামের আবদুস সবুরের স্ত্রী বেনু বেওয়ার বিরুদ্ধে। তার নামেও রয়েছে দুইটি কার্ড। সিরিয়াল ৬১৪ ও ৬৯৭।

জানা যায়, রাঙ্গাচিড়া গ্রামের আব্দুস সবুর খলিফা মারা গেছেন অনেকদিন আগেই। তার নামেও কার্ড আছে (ক্রমিক নং ৭০০)। একইভাবে হাতেম আলী (১৪২), মোহাম্মদ (২৭৮) ও দুলাল হোসেন (৪৫৯)।

এরা তিনজন চরপৌলি গ্রামের। তারা মারা গেছেন। এরপরও তাদের নামে তোলা হচ্ছে ১০ টাকা কেজি দরের চাল।

টাঙ্গাইল সদর উপজেলার কাকুয়া ইউনিয়নে এভাবেই চলছে সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ১০ টাকা কেজি দরের চাল বিতরণ। দুর্নীতি, অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির অন্যতম এলাকায় পরিণত হয়েছে এই ইউনিয়ন।

৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সোলায়মান মণ্ডলের নিজের নামে কার্ড নেই। তবে তার ছেলের নামে কার্ড রয়েছে। লিটন মণ্ডল (৬৮৪), ছেলের বউ সালমা (৬৯২), ভাইয়ের নামে বাদশা মণ্ডল (৭৩৩), ভাই বউ বাহারুন বেগম (৭২৮), ভাইয়ের ছেলে আ. বাছেদ (৭৩১), তার স্ত্রী চামেলী বেগম (৭৩২) এর নামেও রয়েছে কার্ড।

এছাড়া তার মেয়ের জামাতার নামেও কার্ড তৈরি করা হয়েছে। ৪, ৫, ৬ সংরক্ষিত আসনের মহিলা সদস্য পারুলের সতীন সখিনা বেগমের (৭৬৮) নামে, শ্বাশুড়ি হাজেরা বেগমের নামেও (৭২৫) কার্ড রয়েছে।

বিপুল পরিমাণ সম্পত্তির মালিক হয়েও পানাকুড়া গ্রামের জহুরুল ইসলামেরও (৮৬৭) রয়েছে ১০ টাকা কেজি দরে চাল কেনার কার্ড। জহুরুল ইসলাম  জানান, তিনি কার্ডের মাধ্যমে যে চাল কিনেন। তা তার বাড়ির কবুতরের খাওয়ার জন্য।

যেখানে অনেক মানুষ খাবার জন্য এই চাল কেনেন সেখানে কবুতরকে এসব চাল খাওয়ানোর যৌক্তিকতা কতটুকু।

চরপৌলী গ্রামের সিরাজুল ইসলাম (৪৪৬) ও নুরতাজ (৫৮৭)। তারা দুজনে স্বামী-স্ত্রী। তারা দুজনেই কার্ড পেয়েছেন এবং তারা প্রতিমাসে ৬০ কেজি করে চাল কিনছেন।

কাকুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ  জানান, তিনি বিষয়টি শুনেছেন। এ কারণে পুরাতন সব কার্ড জমা নিয়ে সেগুলো যাচাই-বাছাই করে এই ধরনের কার্ড বাতিল করে নতুন করে কার্ড দেওয়া হবে।

টাঙ্গাইল সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আতিকুল ইসলাম  জানান, একই ব্যক্তি বা একটি বাড়িতে দুইটি কার্ড থাকতে পারে না। পুরাতন সব কার্ড যাচাই-বাছাই করে নতুন করে কার্ড দেওয়া হবে। এভাবে কেউ অনিয়ম করলে ছাড় দেওয়া হবে না।

ট্যাগস
সর্বাধিক পঠিত

আলিশান চাল, নওগাঁ

বিজ্ঞাপন দিন

১০ টাকা কেজির চাল, এক পরিবারেই যাচ্ছে ৯০ কেজি

আপডেট সময় ০৪:৫৯:৫৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২০

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি :  করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ রোধে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে সবাইকে ঘরে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সরকারে পক্ষ থেকে।

আর এ পরিস্থিতিতে কর্মহীন মানুষ যাতে না খেতে থাকে এজন্য সরকারবান্ধব কর্মসূচির ১০ টাকা কেজি দরের চাল অসহায় মানুষদের মধ্যে বিতরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। একই সঙ্গে এই চাল বিতরণে অনিয়ম হলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সকরার।

কিন্তু এর উল্টো হচ্ছে টাঙ্গাইল সদর উপজেলার কাকুয়া ইউনিয়নে। অভিযোগ উঠেছে, একই ব্যক্তি রাফিজুল ইসলামের নামে দুইটি কার্ড।

তার স্ত্রী বোনোয়ারা বেগম নামেও আরেকটি কার্ড। এভাবে একই পরিবারের দুইজনের নামে তিনটি কার্ড দিয়ে ১০ টাকা কেজি দরে প্রতিমাসে ৩০ কেজি করে মোট ৯০ কেজি চাল তুলছেন।

অভিযোগটি করেন টাঙ্গাইল সদর উপজেলার কাকুয়া ইউনিয়ন কৃষক লীগের আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান। মূল তালিকা দেখে এ অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়।

দেলধা গ্রামের রাফিজুলের সিরিয়াল ১০৪১ ও ১০৯৬। তার স্ত্রী’র ১১১১। একই ধরনের অভিযোগ রাঙ্গাচিড়া গ্রামের আবদুস সবুরের স্ত্রী বেনু বেওয়ার বিরুদ্ধে। তার নামেও রয়েছে দুইটি কার্ড। সিরিয়াল ৬১৪ ও ৬৯৭।

জানা যায়, রাঙ্গাচিড়া গ্রামের আব্দুস সবুর খলিফা মারা গেছেন অনেকদিন আগেই। তার নামেও কার্ড আছে (ক্রমিক নং ৭০০)। একইভাবে হাতেম আলী (১৪২), মোহাম্মদ (২৭৮) ও দুলাল হোসেন (৪৫৯)।

এরা তিনজন চরপৌলি গ্রামের। তারা মারা গেছেন। এরপরও তাদের নামে তোলা হচ্ছে ১০ টাকা কেজি দরের চাল।

টাঙ্গাইল সদর উপজেলার কাকুয়া ইউনিয়নে এভাবেই চলছে সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ১০ টাকা কেজি দরের চাল বিতরণ। দুর্নীতি, অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির অন্যতম এলাকায় পরিণত হয়েছে এই ইউনিয়ন।

৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সোলায়মান মণ্ডলের নিজের নামে কার্ড নেই। তবে তার ছেলের নামে কার্ড রয়েছে। লিটন মণ্ডল (৬৮৪), ছেলের বউ সালমা (৬৯২), ভাইয়ের নামে বাদশা মণ্ডল (৭৩৩), ভাই বউ বাহারুন বেগম (৭২৮), ভাইয়ের ছেলে আ. বাছেদ (৭৩১), তার স্ত্রী চামেলী বেগম (৭৩২) এর নামেও রয়েছে কার্ড।

এছাড়া তার মেয়ের জামাতার নামেও কার্ড তৈরি করা হয়েছে। ৪, ৫, ৬ সংরক্ষিত আসনের মহিলা সদস্য পারুলের সতীন সখিনা বেগমের (৭৬৮) নামে, শ্বাশুড়ি হাজেরা বেগমের নামেও (৭২৫) কার্ড রয়েছে।

বিপুল পরিমাণ সম্পত্তির মালিক হয়েও পানাকুড়া গ্রামের জহুরুল ইসলামেরও (৮৬৭) রয়েছে ১০ টাকা কেজি দরে চাল কেনার কার্ড। জহুরুল ইসলাম  জানান, তিনি কার্ডের মাধ্যমে যে চাল কিনেন। তা তার বাড়ির কবুতরের খাওয়ার জন্য।

যেখানে অনেক মানুষ খাবার জন্য এই চাল কেনেন সেখানে কবুতরকে এসব চাল খাওয়ানোর যৌক্তিকতা কতটুকু।

চরপৌলী গ্রামের সিরাজুল ইসলাম (৪৪৬) ও নুরতাজ (৫৮৭)। তারা দুজনে স্বামী-স্ত্রী। তারা দুজনেই কার্ড পেয়েছেন এবং তারা প্রতিমাসে ৬০ কেজি করে চাল কিনছেন।

কাকুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ  জানান, তিনি বিষয়টি শুনেছেন। এ কারণে পুরাতন সব কার্ড জমা নিয়ে সেগুলো যাচাই-বাছাই করে এই ধরনের কার্ড বাতিল করে নতুন করে কার্ড দেওয়া হবে।

টাঙ্গাইল সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আতিকুল ইসলাম  জানান, একই ব্যক্তি বা একটি বাড়িতে দুইটি কার্ড থাকতে পারে না। পুরাতন সব কার্ড যাচাই-বাছাই করে নতুন করে কার্ড দেওয়া হবে। এভাবে কেউ অনিয়ম করলে ছাড় দেওয়া হবে না।