ঢাকা ০৪:৩৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৪, ৮ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সেনাবাহিনীর সহায়তায় সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরল সাজেকের হাম আক্রান্ত ৫ ভাই

হেফাজত সবুজ রাঙামাটি:  রাঙামাটির দুর্গম সাজেক ইউনিয়নের হাম আক্রান্ত পাঁচ ভাই সুস্থ হয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে থেকে নিরাপদে বাড়ি ফিরেছে।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চট্টগ্রাম ২৪ পদাতিক ডিভিশনের সর্বিক সহযোগিতাচট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ১৭ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর শনিবার সুস্থ হয়ে পাঁচ ভাই বাড়ি ফিরে।
এরা হলো, সাজেকের লংথিয়ান পাড়ার বাসিন্দা অনি ভূষণ ত্রিপুরা ছেলে প্রতিল ত্রিপুরা (০৫), রোকেন্দ্র ত্রিপুরা (০৬), রাজেন্দ্র ত্রিপুরা (০৮), নহেন্দ্র ত্রিপুরা (১০) এবং দীপায়ন ত্রিপুরা (১৩)।
সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি রাঙামাটির সাজেকে ইউনিয়নের ১০ থেকে ১২টি গ্রামে হামের প্রাদুর্ভাব দেখা। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত হামসদৃশ রোগে আক্রান্ত হয়ে আট শিশুর মৃত্যু হয়, আক্রান্তের সংখ্যা আড়াই শতাধিক। এদিকে সাজেকে হাম পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দীর্ঘমেয়াদি কার্যক্রমের অংশ হিসেবে গত ৭ এপ্রিল থেকে সাজেকে বিশেষভাবে হাম-রুবেলা টিকা ক্যাম্পেইন শুরু হয়েছে। তিনটি ক্যাম্পেইনের আওতায় সাজেকের সবকটি গ্রামের ছয়মাস থেকে পনেরো বছরের নিচ পর্যন্ত প্রায় ১১-১২ হাজার শিশুকে এই টিকা ক্যাম্পেইনের আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ।

শিশুদের বাবা অনি ভূষণ ত্রিপুরা বলেন, সেনাবাহিনীর সহযোগিতার কারণে আমার বাচ্চাদের বাঁচানো সম্ভব হয়েছে। আমাদের গ্রামে কয়েকজন শিশুর মৃত্যুও হয়েছে। চিকিৎসা সহায়তায় এভাবে পাশে থাকায় সেনাবাহিনীকে ধন্যবাদ।
সাজেক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নেলসন চাকমা নয়ন জানিয়েছেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সার্বিক সহযোগীতায় ৫ শিশু মৃত্যুর কাছ থেকে ফিরে এসেছে। যে দুর্গম এলাকায় ওরা বসবাস করে সেখান থেকে চিকিৎসার জন্য বাঘাইছড়ি সদরে আসাই কঠিন ছিল। সেনাবাহিনীর সহযোগীর ফলে চট্টগ্রামে উন্নত চিসিৎসা সম্ভব হয়েছে। এর ফলে পরিবারসহ পুরো ইউনিয়নবাসী আনন্দিত

নেলশন চাকমা আরও জানান, বর্তমানে সাজেক ইউনিয়নের ‘হাম’ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে হাম-রুবেলা টিকা ক্যাম্পেইন শুরু হয়েছে; কিন্তু দুঃখের বিষয় ওইসব এলাকার লোকজন এখনো সচেতন না। ফলে কেউ টিকাগ্রহণে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। তাও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দিয়ে অনেকটা জোর করেই যতটুকু সম্ভব টিকার আওতায় আনার চেষ্টা করছি। আবার কাউকে কাউকে সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হবে এমন ভয় দেখিও টিকার আওতায় আনার কাজ করতে হচ্ছে। দুর্গম গ্রামের এসব মানুষ অশিক্ষিত হওয়ার ফলে এখনো কুসংস্কারে বিশ্বাসী।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ইফতেখার আহম্মেদ জানিয়েছেন, সন্ধ্যায় শিশুরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসার পর ওদের সাথে কথা হয়েছে। সবাই সুস্থ আছে। আমাদের টার্গেট অনুযায়ী তিনটি ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে সাজেকের সাড়ে ১১ হাজার শিশুকে হাম-রুবেলা টিকা প্রদানের কাজ চলমান আছে। কোনও শিশু যাতে টিকা গ্রহণ থেকে বাদ না পড়েন, সে বিষয়ে আমরা সর্বোচ্চ নজরদারি করছি। তিনি বলেন, ক্যাম্পেইনের আওতাভুক্ত এলাকাগুলোতে ক্যাম্পেইন চলাকালে দ্রুত ভ্যাকসিন পৌঁছাতে হেলিকপ্টারসহ সার্বিক সহযোগিতায় কাজ করছে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও উপজেলা প্রশাসন।

উল্লেখ্য, গত ২৪ মার্চ সেনাবাহিনীর একটি চিকিৎসক দল এবং বাঘাইছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ২ জন ডাক্তারসহ ৮ সদস্যের এক বিশেষ চিকিৎসক দল হেলিকপ্টারযোগে হামে আক্রান্ত এলাকায় দুই দিনে শতাধিক রোগীর চিকিৎসা দেয়। তখন আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে শিয়ালদহ এলাকার লংথিয়ান পাড়ার ৫ শিশুর অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাদেরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সেনাবাহিনী সহায়তায় তাদেরকে প্রথমে চট্টগ্রাম সেনানিবাসে এবং পরবর্তীতে সেখান থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।

ট্যাগস

সেনাবাহিনীর সহায়তায় সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরল সাজেকের হাম আক্রান্ত ৫ ভাই

আপডেট সময় ১১:১৬:৫২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ এপ্রিল ২০২০

হেফাজত সবুজ রাঙামাটি:  রাঙামাটির দুর্গম সাজেক ইউনিয়নের হাম আক্রান্ত পাঁচ ভাই সুস্থ হয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে থেকে নিরাপদে বাড়ি ফিরেছে।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চট্টগ্রাম ২৪ পদাতিক ডিভিশনের সর্বিক সহযোগিতাচট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ১৭ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর শনিবার সুস্থ হয়ে পাঁচ ভাই বাড়ি ফিরে।
এরা হলো, সাজেকের লংথিয়ান পাড়ার বাসিন্দা অনি ভূষণ ত্রিপুরা ছেলে প্রতিল ত্রিপুরা (০৫), রোকেন্দ্র ত্রিপুরা (০৬), রাজেন্দ্র ত্রিপুরা (০৮), নহেন্দ্র ত্রিপুরা (১০) এবং দীপায়ন ত্রিপুরা (১৩)।
সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি রাঙামাটির সাজেকে ইউনিয়নের ১০ থেকে ১২টি গ্রামে হামের প্রাদুর্ভাব দেখা। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত হামসদৃশ রোগে আক্রান্ত হয়ে আট শিশুর মৃত্যু হয়, আক্রান্তের সংখ্যা আড়াই শতাধিক। এদিকে সাজেকে হাম পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দীর্ঘমেয়াদি কার্যক্রমের অংশ হিসেবে গত ৭ এপ্রিল থেকে সাজেকে বিশেষভাবে হাম-রুবেলা টিকা ক্যাম্পেইন শুরু হয়েছে। তিনটি ক্যাম্পেইনের আওতায় সাজেকের সবকটি গ্রামের ছয়মাস থেকে পনেরো বছরের নিচ পর্যন্ত প্রায় ১১-১২ হাজার শিশুকে এই টিকা ক্যাম্পেইনের আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ।

শিশুদের বাবা অনি ভূষণ ত্রিপুরা বলেন, সেনাবাহিনীর সহযোগিতার কারণে আমার বাচ্চাদের বাঁচানো সম্ভব হয়েছে। আমাদের গ্রামে কয়েকজন শিশুর মৃত্যুও হয়েছে। চিকিৎসা সহায়তায় এভাবে পাশে থাকায় সেনাবাহিনীকে ধন্যবাদ।
সাজেক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নেলসন চাকমা নয়ন জানিয়েছেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সার্বিক সহযোগীতায় ৫ শিশু মৃত্যুর কাছ থেকে ফিরে এসেছে। যে দুর্গম এলাকায় ওরা বসবাস করে সেখান থেকে চিকিৎসার জন্য বাঘাইছড়ি সদরে আসাই কঠিন ছিল। সেনাবাহিনীর সহযোগীর ফলে চট্টগ্রামে উন্নত চিসিৎসা সম্ভব হয়েছে। এর ফলে পরিবারসহ পুরো ইউনিয়নবাসী আনন্দিত

নেলশন চাকমা আরও জানান, বর্তমানে সাজেক ইউনিয়নের ‘হাম’ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে হাম-রুবেলা টিকা ক্যাম্পেইন শুরু হয়েছে; কিন্তু দুঃখের বিষয় ওইসব এলাকার লোকজন এখনো সচেতন না। ফলে কেউ টিকাগ্রহণে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। তাও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দিয়ে অনেকটা জোর করেই যতটুকু সম্ভব টিকার আওতায় আনার চেষ্টা করছি। আবার কাউকে কাউকে সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হবে এমন ভয় দেখিও টিকার আওতায় আনার কাজ করতে হচ্ছে। দুর্গম গ্রামের এসব মানুষ অশিক্ষিত হওয়ার ফলে এখনো কুসংস্কারে বিশ্বাসী।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ইফতেখার আহম্মেদ জানিয়েছেন, সন্ধ্যায় শিশুরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসার পর ওদের সাথে কথা হয়েছে। সবাই সুস্থ আছে। আমাদের টার্গেট অনুযায়ী তিনটি ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে সাজেকের সাড়ে ১১ হাজার শিশুকে হাম-রুবেলা টিকা প্রদানের কাজ চলমান আছে। কোনও শিশু যাতে টিকা গ্রহণ থেকে বাদ না পড়েন, সে বিষয়ে আমরা সর্বোচ্চ নজরদারি করছি। তিনি বলেন, ক্যাম্পেইনের আওতাভুক্ত এলাকাগুলোতে ক্যাম্পেইন চলাকালে দ্রুত ভ্যাকসিন পৌঁছাতে হেলিকপ্টারসহ সার্বিক সহযোগিতায় কাজ করছে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও উপজেলা প্রশাসন।

উল্লেখ্য, গত ২৪ মার্চ সেনাবাহিনীর একটি চিকিৎসক দল এবং বাঘাইছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ২ জন ডাক্তারসহ ৮ সদস্যের এক বিশেষ চিকিৎসক দল হেলিকপ্টারযোগে হামে আক্রান্ত এলাকায় দুই দিনে শতাধিক রোগীর চিকিৎসা দেয়। তখন আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে শিয়ালদহ এলাকার লংথিয়ান পাড়ার ৫ শিশুর অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাদেরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সেনাবাহিনী সহায়তায় তাদেরকে প্রথমে চট্টগ্রাম সেনানিবাসে এবং পরবর্তীতে সেখান থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।