অতিরিক্ত মুনাফার লোভ দেখিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রায় ৬০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া একটি বৃহৎ প্রতারক চক্রের মূলহোতাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির নাম মো. নাজিম উদ্দিন তনু (৩৭)। তিনি নওগাঁ জেলার জগৎসিংহপুর এলাকার বাসিন্দা এবং ‘বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশন’ নামের কথিত এনজিওর পরিচালক হিসেবে পরিচিত।
সিআইডির এলআইসি ইউনিট আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে তথ্য বিশ্লেষণ ও ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে তনুর অবস্থান শনাক্ত করে অভিযান পরিচালনা করে তাকে গ্রেপ্তার করে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, নওগাঁ সদরের অফিসপাড়া এলাকায় অবস্থিত ‘বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশন’ (রেজি. নং রাজ–৩৭০)-এ শত শত গ্রাহক সঞ্চয় জমা, মাসিক ডিপিএস এবং এককালীন ঋণ গ্রহণের উদ্দেশ্যে নিবন্ধন করেছিলেন। অনেকে এককালীন আমানত হিসেবেও জমা দেন লাখ লাখ টাকা।
গ্রাহকদের লভ্যাংশের প্রলোভন হিসেবে বলা হতো—
প্রতি ১ লাখ টাকার বিপরীতে মাসে ২ হাজার টাকা লভ্যাংশ।
বাদীর নিজস্ব আমানত ছিল ২০ লাখ টাকা। দাবি করা হয়, প্রতিষ্ঠানে মোট প্রায় ১৫০ কোটি টাকার আমানত ছিল বিভিন্ন গ্রাহকের।
তদন্তে উঠে এসেছে, শুরুতে পরিচালনা পর্ষদ নিজেদের মনোনীত কিছু গ্রাহককে নিয়মিত লভ্যাংশ প্রদান করে প্রতিষ্ঠানটির প্রতি জনআস্থা তৈরি করে। সেই আস্থার সুযোগ নিয়েই প্রতারক চক্রটি নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষের সঞ্চিত অর্থ হাতিয়ে নেয়। ২০২৪ সালের আগস্টের পর প্রতিষ্ঠানটির লেনদেনে অস্বচ্ছতা দেখা দেয়। গ্রাহকরা আমানতের হিসাব পাচ্ছিলেন না, উত্তোলনেও নানা অজুহাত দেখানো হচ্ছিল।
অভিযোগ পাওয়া সত্ত্বেও পরিচালক নাজিম উদ্দিন আশ্বাস দিয়ে সময়ক্ষেপণ করেন। একপর্যায়ে গত বছরের নভেম্বর মাসে গ্রাহকরা নওগাঁ অফিসে অর্থ ফেরতের দাবি জানাতে গেলে কর্তৃপক্ষ স্পষ্ট জানিয়ে দেয়—তাদের কোনো অর্থ ফেরত দেওয়া হবে না। পরে গ্রাহকদের জোর করে অফিস থেকে বের করে দেওয়া হয়।
ঘটনার পর এক ভুক্তভোগী ১২ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে নওগাঁ সদর থানায় মামলা (নং–২০) দায়ের করেন। এতে পেনাল কোডের ৪০৬/৪২০ ধারায় অভিযোগ আনা হয়। প্রাথমিক তদন্তে এখন পর্যন্ত ৮০০-র বেশি গ্রাহকের কাছ থেকে পাঁচ শতাধিক কোটি টাকা আত্মসাৎ করার তথ্য সিআইডি পেয়েছে, যা আরও বাড়তে পারে।
মামলাটির তদন্ত করছে সিআইডির নওগাঁ জেলা ইউনিট। ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে এখন পর্যন্ত নাজিম উদ্দিন তনুসহ ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। চক্রের অন্যান্য সদস্যদের সনাক্তকরণ, অবৈধ অর্থপ্রবাহ উদঘাটন এবং আদায় হওয়া অর্থ আইনি প্রক্রিয়ায় ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে সিআইডির তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।

স্টাফ রিপোর্টার নওগাঁ: 




















