ঢাকা ১২:৫৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কোন দ্রব্য মিলছে না ৮০ টাকার নিচে

বাজারে এখন সবচেয়ে কম দামের সবজি পেঁপে আর আলু। সেগুলো কিনতেও কেজিপ্রতি গুণতে হচ্ছে ৫০ টাকা করে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে আলুর দামও কেজিতে ৫ টাকা বেড়েছে। এক কেজি আলু কিনতে ক্রেতাকে এখন দিতে হচ্ছে ৫০ টাকা। পেঁপের কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা। এ দুই পদ ছাড়া বাজারে কেজিপ্রতি ৮০ টাকার নিচে কোনো সবজিই মিলছে না।

সবজির এ চড়া দাম নিম্ন আয়ের ক্রেতাদের জন্য অস্বাভাবিক। এক কথায়, সাধারণ ক্রেতাদের জন্য সবজির বাজার এখন দারুণ অস্বস্তির। সবজির এমন দাম বাড়ার প্রবণতা চলছে গত সপ্তাহে টানা বৃষ্টির পর থেকে। বিক্রেতারা বলছেন, বৃষ্টির কারণে অনেক এলাকার খেত তলিয়ে গেছে। সবজি নষ্ট হয়েছে। ফলে সরবরাহে বিঘ্ন ঘটায় বেড়েছে দাম।

তবে খোদ বিক্রেতারাও বলছেন, সব ধরনের সবজির এমন চড়া দাম আগে কখনোই ছিল না। রেকর্ড দামে এবার বিক্রি হচ্ছে সবজি। মঙ্গলবার রাজধানীর সিপাহীবাগ, রামপুরা, তালতলা ও বাড্ডা এলাকার কয়েকটি কাঁচাবাজার ঘুরে ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।

বিক্রেতারা জানান, বৃষ্টির পর গত দু-তিনদিনের ব্যবধানে সবজির দাম আরেক দফা বেড়েছে। তাতে এখন বাজারে প্রতি কেজি পটল, ঢেঁড়শ বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। ঝিঙে, ধুন্দল, করলা, লম্বা বেগুন, কচু, কাকরোল, বরবটি, চিচিংগা ১০০ টাকা এবং গোল বেগুন ১২০-১৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

অন্যদিকে কাঁচামরিচের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৪০ থেকে ২৮০ টাকা, যা গত সপ্তাহেও প্রায় কেজিপ্রতি ৬০ টাকা কম ছিল। এদিকে, শাক-সবজির এমন চড়া দামে চরম বিপাকে পড়েছেন ক্রেতারা। বেশি বেকায়দায় পড়েছেন নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির লোকজন। বাধ্য হয়ে তারা সবজি খাওয়া কমিয়ে দিচ্ছেন। তাতে চাপ পড়ছে পরিবারের পুষ্টির জোগানে, যা উদ্বেগজনক।

রাজধানীর সিপাহীবাগের রিয়াজবাগ এলাকায় দরিদ্র মানুষের বসবাস বেশি। এ এলাকার বাসিন্দা পরিচ্ছন্নতাকর্মী বাবু ঘোষ। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, আমরা গরিব মানুষ। এত টাকা দিয়া সবজি কিনমু কেমনে? যা বেতন পাই, তার সবই যায় ঘরভাড়া দিতে। এরপর চাল, ডাল তেলের দাম সাধ্যের বাইরে। আমাগোর টিকে থাকাই মুশকিল।

বাজারে এসে কিছু সবজি ও অন্যান্য নিত্যপণ্য কেনার পর তার কাছে আর ২০ টাকা অবশিষ্ট আছে বলে জানান। যা দিয়ে তিনি কিছু শাক কিনতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বাজার ঘুরে সস্তায় কোনো শাক কিনতে পারেননি তিনি। বাবু আরও বলেন, পুঁইশাকের আঁটি ৩০ টাকা চায়। শাক সবজির এত বেশি দাম আগে দেখিনি। কী খেয়ে বাঁচমু আমরা?

ওই বাজারের সবজি ব্যবসায়ী আরিফুল বলেন, বৃষ্টি হলে সবজির দাম মাঝেমধ্যেই ওঠা-নামা করে। কিন্তু এখন অস্বাভাবিক বেড়ে রয়েছে। বৃষ্টি কমলেও সরবরাহ একদম বাড়েনি। কারণ টানা বৃষ্টিতে খেতে পানি জমে সবজি নষ্ট হয়ে গেছে।

তিনি বলেন, বিক্রেতারা সবজির দাম বেশি রাখছেন ব্যাপারটা এমন নয়। আড়ৎ থেকেই বেশি দামে সবজি কিনতে হচ্ছে। তাই বিক্রিও করতে হচ্ছে বেশি দামে। আরিফুল বলেন, এখন কারওয়ান বাজারে ভোরে সবজি নিয়ে টানাটানি লাগে। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ থাকে অর্ধেক। সকালে গেলে সবজি মেলে না।

যদিও ব্যবসায়ীদের এমন কথার সঙ্গে একমত নন ক্রেতারা। তারা বলছেন, বিভিন্ন অজুহাতে নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এখনো তাই করছেন তারা। বাজার দেখে মনে হয় না সবজির সরবরাহ কম। কোথাও কোনো সবজির কমতি নেই। তাদের এ অজুহাত বিশ্বাসযোগ্য নয়। বিক্রেতারা ইচ্ছা করেই দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন।

এদিকে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় এখন অন্তত ৩০ শতাংশ সবজির ট্রাক কম আসছে উল্লেখ করে বাংলাদেশ কাঁচামাল আড়ৎ মালিক সমিতির সভাপতি মো. ইমরান মাস্টার বলেন, আগে কারওয়ান বাজারে যে পরিমাণ সবজির ট্রাক আসতো, এখন তার ৭০ শতাংশও আসে না। গ্রামগঞ্জের মোকামেই সবজির টান পড়েছে। বৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে গেছে।

কোন দ্রব্য মিলছে না ৮০ টাকার নিচে

আপডেট সময় ০১:৩৬:৫৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ অক্টোবর ২০২৩

বাজারে এখন সবচেয়ে কম দামের সবজি পেঁপে আর আলু। সেগুলো কিনতেও কেজিপ্রতি গুণতে হচ্ছে ৫০ টাকা করে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে আলুর দামও কেজিতে ৫ টাকা বেড়েছে। এক কেজি আলু কিনতে ক্রেতাকে এখন দিতে হচ্ছে ৫০ টাকা। পেঁপের কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা। এ দুই পদ ছাড়া বাজারে কেজিপ্রতি ৮০ টাকার নিচে কোনো সবজিই মিলছে না।

সবজির এ চড়া দাম নিম্ন আয়ের ক্রেতাদের জন্য অস্বাভাবিক। এক কথায়, সাধারণ ক্রেতাদের জন্য সবজির বাজার এখন দারুণ অস্বস্তির। সবজির এমন দাম বাড়ার প্রবণতা চলছে গত সপ্তাহে টানা বৃষ্টির পর থেকে। বিক্রেতারা বলছেন, বৃষ্টির কারণে অনেক এলাকার খেত তলিয়ে গেছে। সবজি নষ্ট হয়েছে। ফলে সরবরাহে বিঘ্ন ঘটায় বেড়েছে দাম।

তবে খোদ বিক্রেতারাও বলছেন, সব ধরনের সবজির এমন চড়া দাম আগে কখনোই ছিল না। রেকর্ড দামে এবার বিক্রি হচ্ছে সবজি। মঙ্গলবার রাজধানীর সিপাহীবাগ, রামপুরা, তালতলা ও বাড্ডা এলাকার কয়েকটি কাঁচাবাজার ঘুরে ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।

বিক্রেতারা জানান, বৃষ্টির পর গত দু-তিনদিনের ব্যবধানে সবজির দাম আরেক দফা বেড়েছে। তাতে এখন বাজারে প্রতি কেজি পটল, ঢেঁড়শ বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। ঝিঙে, ধুন্দল, করলা, লম্বা বেগুন, কচু, কাকরোল, বরবটি, চিচিংগা ১০০ টাকা এবং গোল বেগুন ১২০-১৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

অন্যদিকে কাঁচামরিচের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৪০ থেকে ২৮০ টাকা, যা গত সপ্তাহেও প্রায় কেজিপ্রতি ৬০ টাকা কম ছিল। এদিকে, শাক-সবজির এমন চড়া দামে চরম বিপাকে পড়েছেন ক্রেতারা। বেশি বেকায়দায় পড়েছেন নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির লোকজন। বাধ্য হয়ে তারা সবজি খাওয়া কমিয়ে দিচ্ছেন। তাতে চাপ পড়ছে পরিবারের পুষ্টির জোগানে, যা উদ্বেগজনক।

রাজধানীর সিপাহীবাগের রিয়াজবাগ এলাকায় দরিদ্র মানুষের বসবাস বেশি। এ এলাকার বাসিন্দা পরিচ্ছন্নতাকর্মী বাবু ঘোষ। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, আমরা গরিব মানুষ। এত টাকা দিয়া সবজি কিনমু কেমনে? যা বেতন পাই, তার সবই যায় ঘরভাড়া দিতে। এরপর চাল, ডাল তেলের দাম সাধ্যের বাইরে। আমাগোর টিকে থাকাই মুশকিল।

বাজারে এসে কিছু সবজি ও অন্যান্য নিত্যপণ্য কেনার পর তার কাছে আর ২০ টাকা অবশিষ্ট আছে বলে জানান। যা দিয়ে তিনি কিছু শাক কিনতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বাজার ঘুরে সস্তায় কোনো শাক কিনতে পারেননি তিনি। বাবু আরও বলেন, পুঁইশাকের আঁটি ৩০ টাকা চায়। শাক সবজির এত বেশি দাম আগে দেখিনি। কী খেয়ে বাঁচমু আমরা?

ওই বাজারের সবজি ব্যবসায়ী আরিফুল বলেন, বৃষ্টি হলে সবজির দাম মাঝেমধ্যেই ওঠা-নামা করে। কিন্তু এখন অস্বাভাবিক বেড়ে রয়েছে। বৃষ্টি কমলেও সরবরাহ একদম বাড়েনি। কারণ টানা বৃষ্টিতে খেতে পানি জমে সবজি নষ্ট হয়ে গেছে।

তিনি বলেন, বিক্রেতারা সবজির দাম বেশি রাখছেন ব্যাপারটা এমন নয়। আড়ৎ থেকেই বেশি দামে সবজি কিনতে হচ্ছে। তাই বিক্রিও করতে হচ্ছে বেশি দামে। আরিফুল বলেন, এখন কারওয়ান বাজারে ভোরে সবজি নিয়ে টানাটানি লাগে। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ থাকে অর্ধেক। সকালে গেলে সবজি মেলে না।

যদিও ব্যবসায়ীদের এমন কথার সঙ্গে একমত নন ক্রেতারা। তারা বলছেন, বিভিন্ন অজুহাতে নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এখনো তাই করছেন তারা। বাজার দেখে মনে হয় না সবজির সরবরাহ কম। কোথাও কোনো সবজির কমতি নেই। তাদের এ অজুহাত বিশ্বাসযোগ্য নয়। বিক্রেতারা ইচ্ছা করেই দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন।

এদিকে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় এখন অন্তত ৩০ শতাংশ সবজির ট্রাক কম আসছে উল্লেখ করে বাংলাদেশ কাঁচামাল আড়ৎ মালিক সমিতির সভাপতি মো. ইমরান মাস্টার বলেন, আগে কারওয়ান বাজারে যে পরিমাণ সবজির ট্রাক আসতো, এখন তার ৭০ শতাংশও আসে না। গ্রামগঞ্জের মোকামেই সবজির টান পড়েছে। বৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে গেছে।