আন্তর্জাতিক ডেক্স : মাস দুয়েক আগে শ্রীলঙ্কার সম্মতি পেয়ে চীন থেকে বিপুল পরিমাণ সার নিয়ে কলম্বোর পথে রওয়ানা হয়েছিল একটি জাহাজ। হঠাৎ ওলট-পালট হয়ে গেলো সব। সেই জাহাজের কারণে কূটনৈতিক সম্পর্কে ফাটল ধরলো দুই দেশের, কালো তালিকাভুক্ত হলো একটি ব্যাংক, প্রশ্নবিদ্ধ হলো বিজ্ঞানীদের কার্যক্রম। কিন্তু হয়েছিল কী? জানতে হলে পড়তে থাকুন।
বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে শতভাগ জৈব সার ব্যবহারকারী হওয়ার লক্ষ্যে গত মে মাসে সব ধরনের রাসায়নিক সার আমদানি নিষিদ্ধ করে লঙ্কান সরকার। এরপর চরম সার সংকট দেখা দিলে জৈব সার আমদানি বাড়ানোর উদ্যোগ নেয় দেশটি। তারই পরিপ্রেক্ষিতে চীনের কিংদাও সিউইন বায়োটেক গ্রুপের কাছ থেকে ৪ কোটি ৯৭ লাখ ডলারে ৯৯ হাজার টন জৈব সার কেনার চুক্তি করে শ্রীলঙ্কা।
প্রথম চালানে গত সেপ্টেম্বরে ২০ হাজার টন জৈব সার নিয়ে চীন থেকে রওয়ানা হয় হিপো স্পিরিট নামে একটি জাহাজ। সমস্যার শুরু মূলত এর পরেই।
‘বিষাক্ত, আবর্জনা, দূষিত’
প্রশ্ন ওঠে চীনের পাঠানো সারের মান নিয়ে। লঙ্কান বিজ্ঞানীরা দাবি করেন, এই সার মাটির গুণাগুণ বৃদ্ধির বদলে উল্টো ক্ষতির কারণ হতে পারে।
শ্রীলঙ্কার কৃষি বিভাগের মহাপরিচালক ড. অজান্তা ডি সিলভা বলেন, আমাদের নমুনার পরীক্ষায় দেখা গেছে, (চীনা) সার জীবাণুমুক্ত নয়। আমরা এতে ব্যাকটেরিয়া পেয়েছি, যা গাজর ও আলুর মতো ফসলের জন্য ক্ষতিকর।
লঙ্কান বিজ্ঞানীরা জোর দিয়ে বলেন, যেহেতু এই সার দেশটির জৈব-নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ, তাই সেগুলো গ্রহণ করা যাবে না।
শ্রীলঙ্কার এই সিদ্ধান্তে তেলে-বেগুনে জ্বলে ওঠে চীনারা। কিংদাউ সিউইন অভিযোগ তোলে, লঙ্কান মিডিয়ায় ‘বিষাক্ত, আবর্জনা, দূষণ’-এর মতো নানা অবমাননাকর শব্দ ব্যবহার করে চীনা প্রতিষ্ঠান এবং চীন সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা হচ্ছে। এমনকি, শ্রীলঙ্কার ন্যাশনাল প্ল্যান্ট কোয়ারেন্টাইন সার্ভিসের (এনপিকিউ) পরীক্ষা পদ্ধতি এবং সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক প্রাণী ও উদ্ভিদ পৃথকীকরণ নীতিমালার বিরোধী বলেও অভিযোগ করে প্রতিষ্ঠানটি।
দ্বন্দ্ব আরও বেড়ে যায় যখন শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রায়ত্ত পিপলস ব্যাংককে ৯০ লাখ ডলারের বিল পরিশোধ আটকে দেওয়ার নির্দেশ দেন একটি স্থানীয় আদালত। এর জবাবে ব্যাংকটিকে কালো তালিকাভুক্ত করে কলম্বোর চীনা দূতাবাস। পাশাপাশি, বিতর্কের কারণে সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে অভিযোগ তুলে এনপিকিউ’র কাছে ৮০ লাখ ডলার ক্ষতিপূরণ দাবি করে কিংদাউ সিউইন।