শর্তসাপেক্ষে ইসরায়েলের সঙ্গে সশস্ত্র লড়াই বন্ধে ইচ্ছুক ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন গাজা ভিত্তিক গোষ্ঠীটির একাধিক নেতা। তবে এক্ষেত্রে একটি শর্ত দিয়েছেন তারা, সেটি হল- ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে ইসরায়েল যেসব অঞ্চল দখল করেছিল, ওই অঞ্চলগুলো নিয়ে একটি ‘স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা’।
২০০৭ সাল থেকে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা শাসন করছে হামাস। সশস্ত্র গোষ্ঠীটির মূল লক্ষ্য ইসরায়েলের পতন। সেই লক্ষ্যে দীর্ঘদিন ধরে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে সংগঠনটি। কিন্তু গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় শুরু হওয়া ইসরায়েলের অব্যাহত হামলায় হামাসের ভবিষ্যৎ অনেকটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে এমন ইঙ্গিত দিলেন সংগঠনটির নেতারা।
হামাসের এই নেতাদের একজন তুরস্কের ইস্তাম্বুলে বসবাসকারী বাসেম নাইম। তিনি হামাসের রাজনৈতিক শাখার সদস্য।
বৃহস্পতিবার তিনি সিএনএনকে বলেন, “জেরুজালেমকে রাজধানী করে যদি একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন করা হয়, আর শরণার্থীদের সেখানে ফেরার অধিকার দেওয়া হয়, তাহলে আল কাশেম ব্রিগেডকে (হামাসের সামরিক শাখা) ভবিষ্যতে জাতীয় সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।”
হামাসের শর্ত মেনে নেওয়া হলে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সশস্ত্র লড়াই ‘অবশ্যই’ বন্ধ করা হবে বলেও জানিয়েছেন বাসেম নাইম। তিনি আরও বলেন, ফিলিস্তিন লিবারেশন অর্গানাইজেশন (পিএলও) যদি তাদের গঠনতন্ত্র ও প্রশাসনে ‘সংস্কার’ আনে, তাহলে সংগঠনটির সঙ্গে যোগ দিতে চায় হামাস।
এর আগে একই ধরনের ইঙ্গিত দিয়েছেন হামাসের আরেক শীর্ষ নেতা খলিল আল-হাইয়া। সংগঠনটির এই প্রবাসী নেতা বলেন, “গোষ্ঠীটি ইসরায়েলের সাথে পাঁচ বছর বা তার বেশি যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হতে এবং একটি রাজনৈতিক দলে রূপান্তর হতে ইচ্ছুক যদি ‘দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধান’ বাস্তবায়িত হয়।”
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আল-হাইয়া তুরস্কের রাজধানী ইস্তাম্বুলে এপির সাথে একটি সাক্ষাত্কারে বলেন, হামাস গাজা এবং পশ্চিম তীরের জন্য একটি ঐক্যবদ্ধ সরকার গঠনে অংশ নিতে চায়।
তিনি বলেন, “অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়- বিশ্বজুড়ে যারা দখলদারদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে, যখন তারা স্বাধীন হয়েছে এবং তাদের অধিকার ও রাষ্ট্র পেয়েছে, তখন তারা কী করেছে? তারা রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়েছে এবং তাদের রক্ষাকারী যুদ্ধ বাহিনী জাতীয় সেনাবাহিনীতে পরিণত হয়েছে।”
আল-হাইয়া আরও বলেন, রাফা শহরে ইসরায়েলের পরিকল্পিত স্থল আক্রমণ হামাসকে ধ্বংস করতে সফল হবে না।
ইসরায়েলি বাহিনী “[হামাসের] ক্ষমতার ২০ শতাংশের বেশি ধ্বংস করতে সক্ষম হয়নি, না যোদ্ধা বা মাঠে,” যোগ করেন তিনি। তিনি বলেন, “তারা যদি হামাসকে ধ্বংস করতে না পারে, তাহলে সমাধান কী? সমাধান হল ঐক্যমতের দিকে যাওয়া।”
তবে হামাসের এই নেতারা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে শর্ত সাপেক্ষে অস্ত্র প্রত্যাহারের কথা বললেও আনুষ্ঠানিকভাবে সংগঠনটির পক্ষ থেকে এখনও কোনও বিবৃতি দেওয়া হয়নি। আর বিদেশে অবস্থান করা হামাসের নেতাদের বক্তব্য গাজায় থাকা সংগঠনটির সামরিক শাখার নেতাদের চিন্তাভাবনার সঙ্গে মেলে কি না, তাও স্পষ্ট নয়।
সূত্র: সিএনএন