চলতি বছর শীত শুরু হয়েছে দেরিতে। সেই সঙ্গে সারা দেশে শীতের তীব্রতাও অন্য বছরের তুলনায় কম। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, চলতি মাসে প্রতিদিনই সর্বনিম্ন তাপমাত্রা থাকছে ১ থেকে ২ ডিগ্রি বেশি। উত্তরাঞ্চলের শীতপ্রবণ এলাকাগুলোতেও এবার যেন অনুপস্থিত পৌষের তীব্র হাড়-কাঁপানো শীত।
এর কিছুটা প্রভাব পড়ছে শীতকালীন শস্যেও। সব মিলিয়ে কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তাদের কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন, এবার শীতকালীন শস্যের উৎপাদন কিছুটা কম হতে পারে। এদিকে গতকালও দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়, ১১.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ নিয়ে টানা ৯ দিন পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হলো। বেশ কিছুদিন ধরেই দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকলেও আজ থেকে তা সামান্য কমতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক গতকাল রাতে বলেন, ‘এখন থেকে ডিসেম্বরের বাকি দিনগুলোতে তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে। তবে কমলেও অন্যান্য বছরের ডিসেম্বর মাসের চেয়ে বেশি থাকবে এবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। সারা দেশে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা গড়ে স্বাভাবিকের চেয়ে ১ থেকে ২ ডিগ্রি বেশি থাকছে।
এ ছাড়া চলতি মাসে শৈত্যপ্রবাহের সম্ভাবনা তেমন নেই। মাসের একবারে শেষের দিকে দুই-একটা অঞ্চলে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নামতে পারে। চুয়াডাঙ্গায় এ বছর কমেছে শীতের তীব্রতা। আগের বছরগুলোতে এই সময়ে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে থাকলেও এ বছর ডিসেম্বরের শেষের দিকে এসেও তাপমাত্রা ১০.৪ ডিগ্রির নিচে নামেনি।
শীতের সময় তাপমাত্রা বেশি থাকায় কৃষিতে এর প্রভাব পড়ছে। সদর উপজেলার গাড়াবাড়িয়া গ্রামের কৃষক শরীফ উদ্দিন বলেন, এ বছর তীব্র শীত নেই, কিন্তু কুয়াশা আছে। এ জন্য পোকার আক্রমণ দেখা দিচ্ছে। তা ছাড়া শীত কম থাকলে গম, সরিষা ও আলুতে ফলন কম হবে। চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ মো. জামিনুর রহমান বলেন, এল নিনোর কারণে উপসাগরীয় গরম হাওয়ার প্রভাবে এবার শীত কম পড়ছে। ডিসেম্বরে তাপমাত্রা ১ অঙ্কের ঘরে নেমে এলেও এ বছর এখন পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গায় তা হয়নি। গত ১৭ ডিসেম্বর চুয়াডাঙ্গার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১০.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আগের বছরগুলোতে দিনাজপুরে ডিসেম্বর মাসে যে রকম শীত ছিল, এবার তার কিছুটা ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে। দিনাজপুর আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান জানান, অন্যান্য বছর ডিসেম্বরের শেষ দিকে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে থাকলেও এবার এর ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে। এবার আবহাওয়ার বড় তিনটি পরিবর্তন দেখা গেছে। আর তা হচ্ছে দেরিতে শীত আসা, শীতের শুরুতেই বৃষ্টি হওয়া এবং রাতে শীত বেশি ও দিনে গরম।
বিরল উপজেলার কৃষক মতিউর রহমান আড়াই বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছেন। তিনি বলেন, এবার খুব একটা শীত নেই। তাই আলুর গাছ ভালো হলেও রাতে শীত আর দিনে গরমের কারণে আলুর আকার ছোট হয়ে যাচ্ছে।
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. নুরুজ্জামান বলেন, রবিশস্যের জন্য যে পরিমাণ শীত প্রয়োজন তা এখনো নামেনি। শীত কম হলে রবিশস্যের দানা বা আকার ছোট হয়ে যায়। বীজের জন্য চাষ করা সবজির পুষ্প মঞ্জরি ভালো হয় না, পেঁয়াজের ঢেপ আগেই চলে আসে। সব মিলিয়ে উৎপাদন কমে যাওয়ার একটা আশঙ্কা থাকে। তবে এখনো কোনো প্রকার প্রভাব পড়েনি।