আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সা.) এর ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন এবং ইসলাম ধর্ম নিয়ে ফরাসি প্রেসিডেন্টের বিরূপ মন্তব্যের জেরে মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে ইমানুয়েল ম্যাক্রোর পক্ষ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারণা চালাচ্ছে ভারতীয়রা।
সোমবার (২৬ অক্টোবর) #আইস্ট্যান্ডউইথফ্রান্স, #উইস্ট্যান্ডউইথফ্রান্স (আমি ফ্রান্সের পাশে আছি এবং আমরা ফ্রান্সের সাথে আছি) শিরোনামে এবং মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) ভারতের হাজারো টুইটার ব্যবহারকারী ফ্রান্সের প্রতি সংহতি জানিয়েছে।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা জানিয়েছে, ফ্রান্সের মুসলমানদের ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ এবং সারা বিশ্বে ‘ইসলাম ধর্ম সংকট তৈরি করছে’ মন্তব্য করে মুসলিম বিশ্বে ক্ষোভ ছড়িয়ে দেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রো।
সম্প্রতি শ্রেণিকক্ষে মহানবী মুহাম্মদ (স.) এর ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শনের পর খুন হন ফরাসি এক শিক্ষক। পরে ম্যাক্রো সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় ফ্রান্সের সরকারি ভবনে ওই ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন শুরু হয়।
এ দিকে ম্যাক্রোর সমর্থনে করা টুইট বার্তায় ভারতীয়রা বলেন, উগ্র ইসলামি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ফ্রান্স যা কিছু করছে তাতে আমি আনন্দিত। উগ্রবাদী মাজহাবি সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ম্যাক্রোর লড়াইয়ে ভারতীয়দের সমর্থন দেওয়া প্রয়োজন।
তারা আরও লিখেছেন, ফ্রান্সের প্রশংসা করা উচিৎ। ভারত সবসময় ফ্রান্সের পাশে আছে। ‘হ্যাশট্যাগ ওয়েলডান ফ্রান্স’, ‘হ্যাশট্যাগ আই স্ট্যান্ডউইথ ফ্রান্স।’
যদিও অনেক আরব খ্রিস্টানরাও প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোর এই কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছেন। তাদের মতে বিশ্বের কোনো ধর্মের মহামানবদের নিয়ে কটূক্তি করা খ্রিস্টানরা সমর্থন করে না।
অ্যাংকর জালাল চাহদা নামে আল-জাজিরার (আরবি) একজন সিনিয়র সাংবাদিক নিজের ফেসবুক, টুইটার ও ইন্সটাগ্রামে এ ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
তিনি লিখেছেন, আমি জালাল চাহদা একজন আরব লেভান্তিন খ্রিস্টান। আমি ইসলামের নবী- বার্তাবাহক মোহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ (সা.)কে অবমাননার বিষয়টি জোরালোভাবে প্রত্যাখ্যান করছি। মহানবী (সা.) এর অবমাননাকে জোরালোভাবে প্রত্যাখ্যান করছি এবং নিন্দা জানাচ্ছি।
এছাড়াও মুসলিমদের আরব খ্রিস্টান বন্ধু ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফ্রান্স ও ম্যাক্রোর প্রতি প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছেন।
তাহলো- জর্ডানের আইমান দাবাবনেহ এক টুইট বার্তায় জানান, যে মুসলিম ভাইদের অপমান করে এবং তাকে সম্মান করে না; জর্ডানের একজন খ্রিস্টান হিসেবে তারা আমাকেও সম্মান করে না। তিনি টুইটারে আরও লিখেন- ইসলাম বিদ্বেষীদের বিরুদ্ধে আমি একজন খ্রিস্টান।
মাইকেল আইয়ুব টুইটারে বলেছিলেন, আমি সেই ব্যক্তিকে সত্যিই ঘৃণা করি যিনি অন্যের ধর্মের অবমাননা করে বা তাকে বা তার রসুলদের উপহাস করে।
ফ্রান্সে যা ঘটছে তা একটি অবক্ষয়। আর এ অবক্ষয়ের মাধ্যমে বুঝা যায় যে, তারা বাইবেলের শিক্ষা থেকেও অনেক দূরে অবস্থান করছে।
এমনকি প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোর এমন কর্মকাণ্ডে ইউরোপের অনেক দেশই এখনো ফ্রান্সকে সমর্থন করেনি। সেক্ষেত্রে ভারতীয় কট্টর হিন্দুত্ববাদীরা কেন এককভাবে দেশটিকে সমর্থন করছেন?
বিশ্লেষকদের মতে, ভারতীয়রা হ্যাশট্যাগ ব্যবহারের মাধ্যমে সরাসরি ফ্রান্সকে সমর্থন জানালেও বিষয়টির পেছনে তাদের অতীত ইতিহাস জড়িয়ে আছে।
কট্টর হিন্দুত্ববাদীরা আগে থেকেই মুসলিম বিদ্বেষী। মূলত এ কারণেই তারা সুযোগ পেলে ইসলাম ধর্ম এবং মুসলমানদের উস্কানি দিতে ছাড়েন না।
অপর দিকে ইসলাম ধর্মকে অবমাননার ক্ষোভ এবং প্রতিবাদ জানাতে সড়কে নামেন লাখ লাখ মুসলমান। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ বাংলাদেশ, তুরস্ক, পাকিস্তান, সিরিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মুসলমানরা রাজপথের বিক্ষোভে অংশ নেন।
এ সময় তারা সকলেই ফরাসি পণ্য বয়কট, ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত বহিষ্কারসহ নানা দাবি জানান।উল্লেখ্য, বিশ্বজুড়ে বিক্ষুব্ধ পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার বিবৃতির মাধ্যমে ফ্রান্স নিজেদের নাগরিকদের মুসলিম অধ্যুষিত রাষ্ট্র ইন্দোনেশিয়া, বাংলাদেশ, ইরাক, তুরস্ক, ইরান, পাকিস্তান ও মৌরিতানিয়ায় বসবাস কিংবা ভ্রমণ করার ব্যাপারে সাবধান করে দিয়ে বাড়তি পূর্বসতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছে।