স্টাফ রিপোর্টার, নওগাঁ: যে বয়সে বই নিয়ে স্কুলে যাওয়ার কথা, সেই বয়সে সংসারের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছিল তুফান (১৪)। জীবন সংগ্রামের শুরুতে ছোট হাতে শক্ত করে ধরেছিল ইজি বাইকের হ্যান্ডেল (ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা)।
কিন্তু একটি দুর্ঘটনায় চোখে সর্ষে ফুল দেখছে তুফান। সঠিক চিকিৎসা না পেলে শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করতে হতে পারে তার বাম পা। প্রতিদিন তার ওষুধসহ আনুষঙ্গিক খরচ হচ্ছে ৯০০ থেকে হাজার টাকা। যা তার দরিদ্র পরিবারের পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কিশোর তুফান যখন তার মায়ের (খতেজা বিবি) গর্ভে তখন বাবা-মায়ের মধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। এরপর থেকে তুফানের মা তার বাবার (জদু মন্ডল) বাড়ি উপজেলার শ্রীমন্তপুর ইউনিয়নের চকশিতা গ্রামে আশ্রয় নেন।
তুফান নানার বাড়িতে তার মায়ের কাছে বড় হতে থাকে। তুফানের বাবা মফিজ উদ্দিন তার কোনো খোঁজখবর রাখেন না।
তুফান স্থানীয় মালঞ্চী মাদরাসার পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনা করেছে। কিন্তু অভাবের সংসারে আর লেখাপড়া করা সম্ভব না হওয়ায় সংসারের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিতে চেয়েছিল।
এ জন্য বাড়িতে লালন-পালন করা সংসারের একটি মাত্র সম্বল একটি গাভি প্রায় ৩৫ হাজার টাকায় বিক্রি ও ঋণ করে গত ৩-৪ মাস আগে তার মা একটি ইজিবাইক (ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা) কিনে দেয়।
ছোট হাতে শক্ত করে ইজিবাইকের হ্যান্ডেল ধরেছিল তুফান। প্রতিদিনের আয় দিয়ে কিস্তি শোধের পর টেনেটুনে সংসার চলতো।
কিন্তু গত ৩০ সেপ্টেম্বর দুপুরে উপজেলার বন বিভাগের সামনের রাস্তায় অটোরিকশার সঙ্গে ইজিবাইকের সংঘর্ষের পর থেকে কিশোর তুফানের জীবনে বইছে ঝড়। দুর্ঘটনায় তার বাম পায়ের হাড় ভেঙে বেরিয়ে আসে।
তুফানকে উদ্ধার করে নিয়ামতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন রাসেল এবং জাভেদ নামে দুই যুবক। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তুফানকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
উপজেলা প্রশাসন থেকে তাৎক্ষণিকভাবে ৫ হাজার টাকা দেয়া হয়েছিল। অর্থাভাবে সেখান সপ্তাহ খানেক চিকিৎসার পর তাকে গ্রামের বাড়িতে ফিরিয়ে আনা হয়।
তুফানের চিকিৎসায় আট বছরের শিশু অর্ণব তার মাটির ব্যাংকের জমানো দুই হাজার ৫০০ টাকা প্রদান করেছে। স্থানীয় একটি ব্যাংকের ম্যানেজারসহ তার অফিসাররা দিয়েছেন পাঁচ হাজার টাকা।
এছাড়াও মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সাত্তার ও সুবাস সরকার নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য চাল, ডাল, তেল, লবণ দিয়ে তুফানের পরিবারকে সহযোগিতা করেন।
ইউএনও জয়া মারিয়া পেরেরা তুফানের পরিবারকে শুরু থেকে সহযোগিতা করে আসছেন। তুফানের চিকিৎসায় প্রতিদিন ওষুধসহ আনুষঙ্গিক খরচ হচ্ছে ৯০০ থেকে হাজার টাকা।
তার পায়ের দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন অনেক টাকা। যা তার পরিবারের পক্ষে বহন করা প্রায় অসম্ভব।
পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী কিশোর এখন অসহনীয় যন্ত্রণা নিয়ে শয্যাশায়ী। সঠিকভাবে চিকিৎসা না হলে হারাতে হতে পারে তার একটি পা।
তুফানের মা খতেজা বিবি বলেন, প্রতিদিন ছেলের চিকিৎসায় অনেক টাকা খরচ হচ্ছে। যা আমার পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়। একটু ভালোভাবে বাঁচতে ছেলেকে একটা ইজিবাইক কিনে দিয়েছিলাম।
কিন্তু দুর্ঘটনায় আজ চোখে মুখে অন্ধকার দেখছি। ছেলের কষ্ট সহ্য করতে পারছি না। সমাজের হৃদয়বানদের কাছে একটু আর্থিক সহযোগিতা পেলে আমার ছেলে সুস্থ হয়ে আবারও স্বাভাবিক হয়ে উঠবে।
নিয়ামতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জয়া মারিয়া পেরেরা বলেন, তুফানের চিকিৎসার জন্য আমার পক্ষ থেকে যথাসাধ্য সহযোগিতা করেছি এবং করে যাচ্ছি।
তবে একে অন্যের পাশে দাঁড়ালে তুফানরা একটু সুস্থভাবে বেঁচে থাকার সাহস পায়। আসুন চারপাশে ছড়িয়ে থাকা এমন অসহায় মানুষের সাহস হয়ে সাধ্য মতো পাশে দাঁড়াই।