আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের মেয়ের নাম জিয়াও মুজি; অবশ্য এটা তার দাদা রেখেছেন। কূটনৈতিক নিরাপত্তার কারণে ছদ্মনামে বেড়ে উঠেছেন তিনি।
চীনের প্রেসিডেন্টের মেয়ের আসল নাম জি মিংজে। তিনি সেভাবে প্রচারের আলোয় কার্যত আসতেই চান না। বাইরের দুনিয়া প্রায় জানেই না চীনের প্রেসিডেন্টের একমাত্র মেয়ের নাম।
শি জিনপিং এবং লোকসঙ্গীতশিল্পী স্ত্রী পেং লিউয়ানের মেয়ে জি মিংজের জন্ম ১৯৯২ সালের ২৭ জুন। ঝেজিয়াং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে-
আন্ডারগ্র্যাজুয়েট স্তরের পড়াশোনা শেষ করে জি পাড়ি দিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে। সেটাও ২০১০ সালের ঘটনা। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন তিনি।
কিন্তু তিনি যে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন, সে তথ্য অন্তত দুই বছর পর্যন্ত সেভাবে প্রকাশ হয়নি। চূড়ান্ত গোপনীয়তার মধ্যে ছদ্মনাম ও পরিচয়ে জি সেখানে পড়াশোনা করেন মনস্তত্ব এবং ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে।
জি যে সময় হার্ভার্ডে যান, তখনো তার বাবা চীনের প্রেসিডেন্ট হননি। কিন্তু জিয়ের দাদা জি ঝোংজুন ছিলেন চীনের কমিউনিস্ট পার্টির প্রভাবশালী নেতা।
মাও সে তুংয়ের শাসনে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন জি ঝোংজুন। ফলে প্রথম থেকেই হার্ভার্ডে চরম গোপনীয়তা রক্ষা করতে হয়েছে জি-কে।
সব সময়ই তাকে ছায়ার মতো অনুসরণ করত বিশেষ নিরাপত্তারক্ষী বাহিনী। বাইরে সাধারণ ছাত্রীর পরিচয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস করলেও-
নির্দেশ মতো বেশি শিক্ষার্থীর সঙ্গে তিনি বন্ধুত্ব করতে পারেননি। অবসর সময়ে জি ভালোবাসেন বিভিন্ন বিষয়ের ওপর বই পড়তে। ফ্যাশনেও আগ্রহ আছে তার।
৯০-এর দশকে জি’র শৈশবের কিছু ছবি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল। তার পর তিনি চলে যান গোপনীয়তার অন্তরালে।
সংবাদমাধ্যম বা সোশ্যাল মিডিয়া, কোথাও ছিলেন না তিনি। এখনো যে তাকে বিশেষ প্রকাশ্যে দেখা যায়, সে রকমও নয়। তার সম্বন্ধে তথ্য বা তার ছবি, দুই-ই বিরল।
তাকে প্রথম প্রকাশ্যে নিজের পরিচয়ে দেখা যায় ২০১৩ সালে। তার বাবার চীনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্বগ্রহণের পর। বাবা এবং মায়ের সঙ্গে তিনি দেশবাসীকে বসন্তোৎসব এবং নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানান।
চীনের ইয়ানান প্রদেশের লিয়াংজিয়াহে গ্রামেও গিয়েছিলেন জি। ওই গ্রামেই তার বাবা শি জিনপিং ১৯৬৯ থেকে ১৯৭৫, ছয় বছর কাটিয়েছিলেন। সে সময় দল থেকে দূরে সরে তাকে সমাজসেবামূলক কাজ করতে হয়েছিল।
চীনের সংবাদমাধ্যমে জি সম্বন্ধে যেটুকু বিবরণ প্রকাশিত হয়েছে, সেখানে তাকে সরল এবং মার্জিত তরুণী বলে বর্ণনা করা হয়েছে, যিনি সমাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
ছোট থেকেই সামাজিক কাজে আগ্রহ দেখিয়েছেন জি। তার মা পেং জানিয়েছেন, ২০০৮ সালে বিধ্বংসী ভূমিকম্প হয়েছিল চীনের সিচুয়ান প্রদেশে।
সে সময় জি স্কুলে আবেদন করেছিলেন ছুটির জন্য। যাতে তিনি সিচুয়ানে গিয়ে উদ্ধার কাজে সামিল হতে পারেন।
জি-র এ উদ্যোগে পূর্ণ সম্মতি ছিল তার বাবা-মার। পেং পরে জানিয়েছিলেন, সিচুয়ানের অভিজ্ঞতা তার মেয়েকে জীবন সংগ্রামের পথে তৈরি হতে সাহায্য করেছিল।
এরই মধ্যে জি-কে তার বাবার উত্তরসূরি বলা হচ্ছে। শোনা যাচ্ছে, পারিবারিক ধারা মেনে তিনিও রাজনীতিতে পা রাখবেন। কিন্তু বেশ কিছু মার্কিন ও তাইওয়ানের সংবাদমাধ্যমে আবার উল্টো সুরও শোনা যায়।
সেখানে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, জি নাকি চীনের জীবন থেকে বেশি পছন্দ করেন মার্কিন শহর ম্যাসাচুসেটসে কাটানো দিনগুলো।
মেয়ের ইচ্ছের কাছে হার মেনে চীনের প্রেসিডেন্ট নাকি তাকে আবার যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে পড়াশোনা করার অনুমতি দিয়েছেন।
প্রেসিডেন্ট নিজে কোনো দিন চীনের বাইরে গিয়ে থাকেননি। তার পড়াশোনার পর্বও সম্পূর্ণ কেটেছে নিজের জন্মভূমিতেই।
অথচ তার দুই পূর্বসূরি নেতা জিয়াং জেমিন (চীনের প্রেসিডেন্ট পদে ১৯৯৩-২০০৩) এবং ডেং জিয়াওপিং দু’জনেই সাবেক সোভিয়েত রাশিয়ায় গিয়েছিলেন উচ্চশিক্ষার জন্য। জিয়াওপিং তো কয়েক বছর কাটিয়েছেন ফ্রান্সেও।
কিন্তু শি জিনপেং কোসো দিন চীনের বাইরে থাকতে আগ্রহী ছিলেন না। শোনা যায়, এ কারণে নাকি প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে তার বিবাহবিচ্ছেদ অবধি হয়ে গিয়েছিল।
কারণ তার প্রথম স্ত্রী কে লিংলিং চীন ছেড়ে ব্রিটেনে গিয়ে থাকতে চেয়েছিলেন। লিংলিংয়ের সঙ্গে তিন বছরের দাম্পত্য শেষ হয়ে যায় ১৯৮২ সালে। তার পাঁচ বছর পরে পেং লিউয়ানকে বিয়ে করেন শি জিনপিং।
তবে বিশ্বের অন্যতম ক্ষমতাবান এবং প্রভাবশালী এই রাষ্ট্রনেতা তার মেয়ের ব্যক্তিগত জীবনকে পর্দার আড়ালে রাখতেই পছন্দ করেন। ফলে তার একমাত্র মেয়ে এখন কোথায় আছেন এবং কী করছেন, তা অজানা বাইরের বিশ্বের কাছে।