স্টাফ রিপোর্টারঃ করোনা মহামারির মধ্যেই ৬৭ দিন পর সোমবার (১ জুন) সড়কে গণপরিবহন চলাচল শুরু হয়েছে। পরিবহন পরিচালনায় সরকার স্বাস্থ্যবিধি বেঁধে দিলেও বাস্তবে তা পুরোপুরি পালন করতে দেখা যায়নি।
তবে বাসের আসন ফাঁকা রাখার যে নির্দেশনা ছিল সেটি পালন হয়েছে। এছাড়া স্বাস্থ্যবিধি মনিটরিংয়ের দায়িত্বে থাকা সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোও চোখে পড়েনি।
রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে এমন চিত্র দেখা গেছে। সোমাবার সকালে সায়েদাবাদ টার্মিনাল থেকে গণপরিবহনে ঢাকার বিভিন্ন এলাকার উদ্দেশ্যে বাসে উঠেন যাত্রীরা। সেখানে ছিল না স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো চিহ্ন।
হেলপাররাও আগের মতো টেনে টেনে যাত্রী তুলছেন। কোনো পরিবহনে জীবাণুনাশক ছিটাতে দেখা যায়নি। তবে পরিবহন শ্রমিকরা দাবি করেছেন, পরিবহনগুলো বের হওয়ার আগেই জীবাণুমুক্ত করে রাখা হয়েছে।
এ ব্যাপারে বলাকা বাস চালকের সহযোগী সালমান হোসেন বলেন, গতকালই আমাদের সব বাস জীবাণুমুক্ত করা হয়ে গেছে।
এখনো হ্যান্ড স্যানিটাইজার পাইনি। তাই সেটা নিয়ে বের হতে পারিনি। তবে যাত্রীদের আমরা ধীরে বাসে উঠাচ্ছি এবং নামাচ্ছি। তিনি নিশ্চিত করেন পাশাপাশি দুটি সিটে কাউকে বসতে দেওয়া হচ্ছে না।
শাহবাগ এলাকায়ও গণপরিবহন চলতে দেখা গেছে। তবে যাত্রী সংখ্যা কম। এই এলাকার পরিবহন শ্রমিকরা জানিয়েছেন, সাধারণ মানুষও খুব বেশি পরিবহনে উঠছে না। যাদের একান্ত প্রয়োজন তারাই গণপরিবহন ব্যবহার করছেন।
রজনীগন্ধা বাসের চালক কবির রহমান বলেন, যাত্রী কম। আমরাও মানুষকে ডাকাডাকি করে পরিবহনে তুলছি না। মানুষকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে অনুরোধ করছি। বাসের ফাঁকা ফাঁকা স্থানে বসতে অনুরোধ করছি।
যাদের মুখে মাস্ক নেই তাদের উঠতে দিচ্ছি না। তিনি আরও বলেন, মালিক আমাদের হ্যান্ড স্যানিটাইজার দেয়নি। তাই হ্যান্ড স্যানিটাইজার দেওয়া হচ্ছে না। বাকি সব নিয়ম মানা হচ্ছে।
অপরদিকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে দেখা গেছে বেশ কয়েকটি গণপরিবহনে। খিলগাঁও এলাকায় মিডলাইন পরিবহনের চালকের সহযোগীর হাতে জীবাণুনাশক স্প্রে দেখা গেছে।
যাত্রীরা বাসে ওঠার সময় সবার হাতে প্রয়োজন মতো হ্যান্ড স্যানিটাইজার দেওয়া হচ্ছে। বাসটির ভেতরেও যাত্রীদের আসন ফাঁকা রেখে বসতে দেখা গেছে।
তরঙ্গ পরিবহনের যাত্রী শোভন বলেন, বনশ্রীতে বোনের বাসা। তিনি খুবই অসুস্থ। তাকে দেখতে মোহাম্মদপুরের বাসা থেকে বের হয়েছি।
বাধ্য হয়েই বাসে উঠেছি। আসলে যেসব স্বাস্থ্যবিধির কথা বলা হয়েছে সেগুলো পুরোপুরি পালন করা হচ্ছে না। যেখানে ঘন ঘন আসনগুলো জীবাণুনাশক দিয়ে স্প্রে করার দরকার সেখানে দিনে একবারও করা হচ্ছে কিনা সন্দেহ রয়েছে।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব ও ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্ল্যাহ বলেন, আজকের সার্বিক পরিস্থিতি অনেক ভালো।
যেসব নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সেগুলো পুরোপুরি পালনের চেষ্টা চলছে। দূরপাল্লার গাড়িগুলোও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চালানো হচ্ছে।
আমি এবং আমাদের মালিকরা সবস্থানেই তদারকি করছেন। আর যারা স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করবে তাদের গাড়ি রাস্তায় নামতে দেওয়া হবে না।
করোনা ভাইরাস সংকটের মধ্যেই অফিস খোলা ও গণপরিবহন সীমিত আকারে চলাচলের সরকারি সিদ্ধান্তের পর বাসের ভাড়া ৮০ শতাংশ বাড়ানোর সুপারিশ করেছিল সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)।
বিআরটিএ’র ওই সুপারিশকে গণবিরোধী উল্লেখ করে চলা সমালোচনার মধ্যেই গতকাল রবিবার বিআরটিএ এ সুপারিশের মাত্র ২০ শতাংশ কমিয়ে গণপরিবহনের ভাড়া ৬০ শতাংশ বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়।
সোমবার বর্ধিত ভাড়ায় রাজধানীসহ সারাদেশে গণপরিবহন চলাচল শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে সরকারের এই সিদ্ধান্তের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে রিট দায়ের করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হুমায়ন কবির পল্লব।