স্টাফ রিপোর্টারঃ আজ শনিবার, ১৬ মে। ঐতিহাসিক ফারাক্কা লংমার্চ দিবস। ১৯৭৬ সালের ১৬ মে রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদরাসা ময়দান থেকে লংমার্চ শুরু হয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাটে গিয়ে শেষ হয়।
৪৪ বছর আগে ১৯৭৬ সালের এই দিনে মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদরাসা ময়দান থেকে ফারাক্কা বাঁধ অভিমুখে লাখো জনতার লংমার্চ অনুষ্ঠিত হয়।
দিনটি ছিল রবিবার। সকাল ১০টায় রাজশাহী থেকে শুরু হয় জনতার পদযাত্রা। হাতে ব্যানার আর ফেস্টুন নিয়ে অসংখ্য প্রতিবাদী মানুষের ঢল নামে রাজশাহীর রাজপথে।
দুপুর দুইটায় হাজার হাজার মানুষের স্রোত জেলার গোদাগাড়ীর প্রেমতলী গ্রামে গিয়ে পৌঁছায়। সেখানে মধ্যাহ্ন বিরতির পর আবার যাত্রা শুরু হয়।
সন্ধ্যা ছয়টায় লংমার্চ চাঁপাইনবাবগঞ্জে গিয়ে রাতযাপনের জন্য সে দিনের মতো শেষ হয়। মাঠেই রাত যাপন করার পরদিন সোমবার সকাল আটটায় আবার যাত্রা শুরু হয় শিবগঞ্জের কানসাট অভিমুখে।
ভারতীয় সীমান্তের অদূরে কানসাটে পৌঁছানোর আগে মহানন্দা নদী পার হতে হয়। হাজার হাজার মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে যোগ দেয় এই লংমার্চে।
তারা নিজেরাই নৌকা দিয়ে সেতু তৈরি করে মহানন্দা নদী পার হয়। কানসাট হাইস্কুল মাঠে পৌঁছানোর পর সমবেত জনতার উদ্দেশে মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী তার জ্বালাময়ী ভাষণ দেন।
মওলানা ভাসানী ভারতের উদ্দেশে বলেন, ‘তাদের জানা উচিত বাংলার মানুষ এক আল্লাহকে ছাড়া আর কাউকে ভয় পায় না। কারো হুমকিকে পরোয়া করে না।
তিনি বলেন, আজ রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও কানসাটে যে ইতিহাস শুরু হয়েছে তা অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর নতুন অধ্যায়ের সৃষ্টি করবে।’
ভারতের ফারাক্কা বাঁধের বিরূপ প্রভাবে বাংলাদেশের বৃহৎ একটি অঞ্চল মরুভূমিতে পরিণত হতে চলেছে। বিশেষ করে রাজশাহী অঞ্চল ভয়াবহ হুমকির সম্মুখীন।
দেশের বৃহত্তম নদী পদ্মা আজ পানির অভাবে শুকিয়ে মরুভূমিতে পরিণত হতে চলেছে। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলসহ দক্ষিণাঞ্চলের অন্তত ৩০টি নদী আজ বিলুপ্তির পথে।
অন্য দিকে ফারাক্কার বিরূপ প্রভাবে বরেন্দ্র অঞ্চলের ভূগর্ভস্থ পানির স্তর অস্বাভাবিক হারে নিচে নেমে যাচ্ছে। বরেন্দ্র অঞ্চলে এখন পানির স্তর স্থান ভেদে ১০০ থেকে ১৩০ ফুট পর্যন্ত নিচে নেমে গেছে। আর নগরীতে অন্তত ৬০ থেকে ৭০ ফুট পর্যন্ত নিচে নেমে গেছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নদী ও পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন বাংলাদেশের সভাপতি অ্যাডভোকেট এনামুল হক বলেন, ভারত চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশকে পানি দেবে না, এটা এখন অনেকটা পরিষ্কার।
কারণ এত দিনেও তারা চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশকে পানির প্রাপ্যতা বুঝিয়ে দেয়নি। ফারাক্কা বাঁধের কারণে বাংলাদেশের যে ক্ষতি হয়েছে, সেই ক্ষতিপূরণ ভারতের কাছ থেকে আদায়ে বাংলাদেশ সরকারকে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
তিনি বলেন, জাতিসঙ্ঘের পানিপ্রবাহ আইন ১৯৯৭ এর বিধান অনুযায়ী এবং জাতিসঙ্ঘের মাধ্যমেই বিষয়টির সুরাহা করতে হবে। এজন্য সরকারকে কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করতে হবে।