শিক্ষার্থীদের মাঝে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে আত্মহত্যার প্রবণতা। গত নয় মাসে চার শতাধিক শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। যাদের বেশির ভাগই স্কুলছাত্রী।
শনিবার (২৯ অক্টোবর) বেসরকারি সংস্থা আঁচল ফাউন্ডেশনের জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। আঁচল ফাউন্ডেশন জানায়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যথাযথ কাউন্সিলিং না থাকায় এই আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, পড়াশোনার চাপ আর পরিবারের গগনচুম্বী প্রত্যাশাই এই ভয়াবহ পরিণতির জন্য দায়ী। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কাউন্সেলিং সেন্টার না থাকা এবং মানসিক স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণে অনীহায় এই প্রবণতা বাড়ছে বলে মত মনোবিজ্ঞানীদের। আর ফলনির্ভর শিক্ষাব্যবস্থা সংস্কারের পরামর্শ শিক্ষাবিদদের।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে এক শিক্ষার্থী বলেন, শিক্ষাজীবনের এই পর্যায়ে এসে মুখোমুখি হওয়া নানা চ্যালেঞ্জের কথা। একদিকে একাডেমিক চাপ, অন্যদিকে আর্থিক সংকট ও ক্যারিয়ার নিয়ে দুশ্চিন্তা অপির মতো অন্য শিক্ষার্থীদের ফেলেছে মানসিক বিড়ম্বনায়।
তারা বলছেন, সরকারি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ বা প্রথম সারির পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স না পেলে মনে করা হয় জীবন ব্যর্থ। আবার শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেলেই হয় না। ভালো মানের সাবজেক্ট না পেলেও অধিকাংশ সময় পরিবার বা সমাজের কথা শুনতে হয়। তখন নিজের মধ্যেও হীনম্মন্যতা কাজ করে।
আবার দেশে চাকরির ক্ষেত্রও খুব বেশি নেই। কিছু হাতে গোনা বিষয় ছাড়া অধিকাংশ বিষয়ে পড়াশোনা শেষ করার পর নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে চাকরি পাওয়া যায় না। তখন সবার মতো বিসিএস বা ব্যাংকের চাকরির প্রস্তুতি নিতে হয়। এই দীর্ঘ পথচলা নিজের জীবন ও পরিবারের জন্য মানসিক কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায় বলেই মনে করছেন অপির মতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া অধিকাংশ শিক্ষার্থী।
আঁচল ফাউন্ডেশনের জরিপ বলছে, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আত্মহত্যা করেছেন ৪০৪ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ২১৯ স্কুল শিক্ষার্থী রয়েছে তালিকার শীর্ষে। এরপরই রয়েছেন কলেজ শিক্ষার্থীরা, ৮৪ জন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আছেন ৫৭ আর সবচেয়ে কম ৪৪ জন মাদ্রাসার শিক্ষার্থী।
প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নেই মানসিক স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণের সুযোগ। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে নামমাত্র এই সেবা থাকলেও অপ্রতুল। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পর্যাপ্ত কাউন্সেলিং সেন্টার স্থাপনের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণে শিক্ষার্থীদের পরামর্শ মনোবিজ্ঞানীদের।
মনোবিজ্ঞানী কামাল উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী বলেন, সব স্কুলে কাউন্সিলর নেই। আবার কাউন্সিলর থাকলেও অনেক সময় তা কাজে আসে না। কারণ, হিসেবে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের জানতে হবে তার সমস্যা কোথায়, কার সঙ্গে পরামর্শ করলে তিনি ভালো সমাধান পাবেন। অনেক সময় শিক্ষার্থীরা ভয়ে কিছু বিষয় লুকিয়ে রাখে। এতে কাউন্সেলিং ভুল পথে যায়। তাই পরিবার, বন্ধু, আত্মীয়স্বজন, শিক্ষক এমনকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান একটা বড় ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করে।
ফলস্বর্বস্ব শিক্ষাব্যবস্থা শিক্ষার্থীদের মধ্যে অসুস্থ প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করেছে, যা শিক্ষার্থীদের বিকাশ বাধাগ্রস্ত করার পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যকে হুমকির মুখে ফেলেছে বলে মনে করেন শিক্ষাবিদরা। এ জন্য লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলা ও সংস্কৃতিচর্চার সঙ্গে যুক্ত করার পরামর্শ দিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাবেক উপাচার্য আধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক।