ঢাকা ০৭:২৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ :
Logo আদানির বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি Logo ইউক্রেনের প্রথম আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ল রাশিয়া Logo সেনাকুঞ্জে খালেদা জিয়াকে সম্ভাষণ জানালেন ড. ইউনূস Logo সুমন হত্যা মামলার প্রধান আসামি বুলবুল গাজীপুর থেকে গ্রেপ্তার Logo সাফ চ্যাম্পিয়ন তিন নারী খেলোয়াড়কে সাতক্ষীরায় গণসংবর্ধনা Logo আপত্তিকর ভিডিও ধারণের অভিযোগ তিশার Logo আমরা সব রাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্ব বজায় রাখব : প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস Logo নতুন আইজিপি হিসেবে দায়িত্ব পেলেন বাহারুল আলম Logo সিরিয়ার ঐতিহ্যবাহী পালমিরা শহরে ইসরায়েলি ভয়াবহ হামলায়, নিহত ৩৬, আহত ৫০ Logo ঢাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধের নির্দেশ দেওয়ায় চালকদের বিক্ষোভ

‘দুই বেলা ভাত খাওয়ার টাকা নাই তার মধ্যে লুঙ্গি কিনমু কেমনে?

পটুয়াখালী প্রতিনিধি: যতদিন শরীরে শক্তি ছিল, কাজ করেই সংসার চালাতেন মো. সুলতান। তখন ভালোই চলছিল সুলতান-সকিনা দম্পতির সংসার।

এখন বয়সের ভারে কাজ করতে পারেন না তাই অভাব হয়েছে নিত্যসঙ্গী। দুই ছেলেও খোঁজ-খবর নেন না। থাকেন অন্যের জমিতে তালা ভাঙা ঘরে।

জোটে না দুবেলা খাবার। ভিক্ষা করে লোকের বাড়ি থেকে চেয়ে আনা পান্তা ভাত শুকিয়ে চাল হলে সেগুলো ফের রান্না করে খান। এভাবেই লোকের দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা করে খাবার যোগাড় করেন সুলতানের স্ত্রী সকিনা বেগম।

আক্ষেপের সুরে এই বৃদ্ধ বলছিলেন, ‘দুই বেলা ভাত জোটে না, তার মধ্যে লুঙ্গি? টাকার অভাবে বৌয়ের ওড়না পরে থাকি।’

৯৫ বছরের বৃদ্ধ সুলতান এলাকায় সুলতান ডাক্তার নামে পরিচিত। পটুয়াখালী পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের ১ম লেন বোহালগাছিয়া এলাকায় সত্তরোর্ধ্ব স্ত্রী সকিনা বেগমকে নিয়ে থাকেন তিনি।

এই দম্পতির দুই ছেলে মোস্তফা ও মোশাররফ। তারা যে যার মতো থাকেন। বাবা-মায়ের খোঁজ নেন না।

সুলতান ডাক্তার বলেন, ‘করোনার কারণে তিন মাস ঘর থেকে নামতে পারি নাই। তখন আল্লাহ চালাইছে। মানুষ কিছু কিছু সহায়তা দিয়েছে। এখন মানুষের কাছে ভিক্ষার জন্য গেলে দুই টাকা দিলে এক টাকা ফেরত চায়। কাজ করতে পারি না।

কিন্তু প্রতিদিন ৪০ টাকার ঔষধ খাওয়া লাগে। ঔষধ না খেলে বিছানা থেকে ওঠা দায়। বৌকে খেটে খাওয়ানোর কথা ছিলো আমার, কিন্তু এখন বৌ আমাকে ভিক্ষা করে খাওয়ায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘দুই বেলা ভাত খাওয়ার টাকা নাই তার মধ্যে লুঙ্গি কিনমু কেমনে? আমার পরার মতো কিচ্ছু নাই। পুরান লুঙ্গিগুলোরও সব জায়গা দিয়ে ছেঁড়া।

তাই ঘরে বৌয়ের ওরনা পরে থাকি। জব্বার দারোগা নামে একজনের বাসায় একশ টাকার বিনিময়ে থাকি। তিনি অনেক ভালো মানুষ তাই আমাদের কষ্ট দেখে এখানে থাকতে দিয়েছেন। ঘরে কোনো বিদ্যুৎ নাই। বৃষ্টির দিনেও পানি পড়ে।’

তার স্ত্রী সকিনা বেগম বলেন, ‘আমরা ভিক্ষা করে খাই। স্বামী বয়সের সময় বড় গাড়ি চালাইছে। তখন সুখের দিন ছিল। তিনি এখন আর কোনো কাজ করতে পারেন না।

আমি ভিক্ষা করে যা পাই তা ওষুধ কিনতে চলে যায়। সরকারি কোনো সহায়তা পাই না। বয়স্ক ভাতার জন্য মেম্বার (পটুয়াখালী পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর নিজাম উদ্দিন) অনেক আগে নাম নিয়েছে। কিন্তু এখনও বয়স্ক ভাতার কোনো খবর নাই।’

বর্তমানে কেমন দিন কাটছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মানুষের বাসা থেকে পানি ভাত ভিক্ষা করে এনে সেই ভাত শুকাই।

শুকনো ভাত যখন চাল হয় তখন সেই চাল আবার রান্না করে খাই। মানুষের বাসার একদিনের তরকারি না ফালাইয়া আমাদেরকে দেয় আমরা সেগুলো জ্বাল দিয়ে খাই।’

‘ভিক্ষা করে যে টাকা পাই তা দিয়ে কেরোসিন, বুড়ো-বুড়ির ওষুধ আর ঘরভাড়ার পেছনে চলে যায়। সরকার থেকে আমাদের জন্য একটু ভাতার ব্যবস্থা করলে জীবনের শেষ সময়টা ভালোভাবে খেতে পারতাম।’

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য পটুয়াখালী পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর নিজাম উদ্দিনের মোবাইল ফোন একাধিকবার কল করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার লতিফা জান্নাতি বলেন, ‘বিষয়টি আমার নজরে এসেছে, আমি ওই পরিবারকে সহায়তা করতে তাদের বাড়ি যাচ্ছি।’

ট্যাগস

আদানির বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি

আলিশান চাল, নওগাঁ

বিজ্ঞাপন দিন

‘দুই বেলা ভাত খাওয়ার টাকা নাই তার মধ্যে লুঙ্গি কিনমু কেমনে?

আপডেট সময় ০৩:৫২:৩৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২০

পটুয়াখালী প্রতিনিধি: যতদিন শরীরে শক্তি ছিল, কাজ করেই সংসার চালাতেন মো. সুলতান। তখন ভালোই চলছিল সুলতান-সকিনা দম্পতির সংসার।

এখন বয়সের ভারে কাজ করতে পারেন না তাই অভাব হয়েছে নিত্যসঙ্গী। দুই ছেলেও খোঁজ-খবর নেন না। থাকেন অন্যের জমিতে তালা ভাঙা ঘরে।

জোটে না দুবেলা খাবার। ভিক্ষা করে লোকের বাড়ি থেকে চেয়ে আনা পান্তা ভাত শুকিয়ে চাল হলে সেগুলো ফের রান্না করে খান। এভাবেই লোকের দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা করে খাবার যোগাড় করেন সুলতানের স্ত্রী সকিনা বেগম।

আক্ষেপের সুরে এই বৃদ্ধ বলছিলেন, ‘দুই বেলা ভাত জোটে না, তার মধ্যে লুঙ্গি? টাকার অভাবে বৌয়ের ওড়না পরে থাকি।’

৯৫ বছরের বৃদ্ধ সুলতান এলাকায় সুলতান ডাক্তার নামে পরিচিত। পটুয়াখালী পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের ১ম লেন বোহালগাছিয়া এলাকায় সত্তরোর্ধ্ব স্ত্রী সকিনা বেগমকে নিয়ে থাকেন তিনি।

এই দম্পতির দুই ছেলে মোস্তফা ও মোশাররফ। তারা যে যার মতো থাকেন। বাবা-মায়ের খোঁজ নেন না।

সুলতান ডাক্তার বলেন, ‘করোনার কারণে তিন মাস ঘর থেকে নামতে পারি নাই। তখন আল্লাহ চালাইছে। মানুষ কিছু কিছু সহায়তা দিয়েছে। এখন মানুষের কাছে ভিক্ষার জন্য গেলে দুই টাকা দিলে এক টাকা ফেরত চায়। কাজ করতে পারি না।

কিন্তু প্রতিদিন ৪০ টাকার ঔষধ খাওয়া লাগে। ঔষধ না খেলে বিছানা থেকে ওঠা দায়। বৌকে খেটে খাওয়ানোর কথা ছিলো আমার, কিন্তু এখন বৌ আমাকে ভিক্ষা করে খাওয়ায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘দুই বেলা ভাত খাওয়ার টাকা নাই তার মধ্যে লুঙ্গি কিনমু কেমনে? আমার পরার মতো কিচ্ছু নাই। পুরান লুঙ্গিগুলোরও সব জায়গা দিয়ে ছেঁড়া।

তাই ঘরে বৌয়ের ওরনা পরে থাকি। জব্বার দারোগা নামে একজনের বাসায় একশ টাকার বিনিময়ে থাকি। তিনি অনেক ভালো মানুষ তাই আমাদের কষ্ট দেখে এখানে থাকতে দিয়েছেন। ঘরে কোনো বিদ্যুৎ নাই। বৃষ্টির দিনেও পানি পড়ে।’

তার স্ত্রী সকিনা বেগম বলেন, ‘আমরা ভিক্ষা করে খাই। স্বামী বয়সের সময় বড় গাড়ি চালাইছে। তখন সুখের দিন ছিল। তিনি এখন আর কোনো কাজ করতে পারেন না।

আমি ভিক্ষা করে যা পাই তা ওষুধ কিনতে চলে যায়। সরকারি কোনো সহায়তা পাই না। বয়স্ক ভাতার জন্য মেম্বার (পটুয়াখালী পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর নিজাম উদ্দিন) অনেক আগে নাম নিয়েছে। কিন্তু এখনও বয়স্ক ভাতার কোনো খবর নাই।’

বর্তমানে কেমন দিন কাটছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মানুষের বাসা থেকে পানি ভাত ভিক্ষা করে এনে সেই ভাত শুকাই।

শুকনো ভাত যখন চাল হয় তখন সেই চাল আবার রান্না করে খাই। মানুষের বাসার একদিনের তরকারি না ফালাইয়া আমাদেরকে দেয় আমরা সেগুলো জ্বাল দিয়ে খাই।’

‘ভিক্ষা করে যে টাকা পাই তা দিয়ে কেরোসিন, বুড়ো-বুড়ির ওষুধ আর ঘরভাড়ার পেছনে চলে যায়। সরকার থেকে আমাদের জন্য একটু ভাতার ব্যবস্থা করলে জীবনের শেষ সময়টা ভালোভাবে খেতে পারতাম।’

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য পটুয়াখালী পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর নিজাম উদ্দিনের মোবাইল ফোন একাধিকবার কল করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার লতিফা জান্নাতি বলেন, ‘বিষয়টি আমার নজরে এসেছে, আমি ওই পরিবারকে সহায়তা করতে তাদের বাড়ি যাচ্ছি।’