ঢাকা ১০:২৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ :
Logo বিয়ে না, সম্পর্ক ও রোমান্স করতে চান নায়িকা Logo পোড়া অফিস দেখে বিমর্ষ উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ Logo দেশে ফিরেছেন জনপ্রিয় ইসলামি আলোচক মাওলানা মিজানুর রহমান আজহারী Logo চোখের জলে নয়নকে বিদায় জানালো ফায়ার সার্ভিস Logo ইসরায়েলে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র পাঠাচ্ছে জার্মানি Logo সচিবালয়ে আগুন নাশকতা কি না তদন্তের পর জানা যাবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা Logo সরকারকে ব্যর্থ করার ষড়যন্ত্রে কেউ জড়িত থাকলে তাদের ছাড় দেওয়া হবে না: উপদেষ্টা আসিফ Logo কুষ্টিয়া ভাড়া বাসা থেকে নারী পুলিশ সদস্যের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার Logo কিশোরগঞ্জে খেজুরের রস পান করে ‘জয় বাংল’ স্লোগান, কারাগারে ১৫ যুবক Logo সচিবালয়ে আগুন, সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আট ও নয় তলা

কবর দিতে দেওয়া হচ্ছে না মুসলিমদের মরদেহ

কবর দিতে দেওয়া হচ্ছে না মুসলিমদের মরদেহ

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ  ফাতিমা রিনোজা, বয়স ৪৪; বাড়ি শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোয়। গত ৪ মে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। শ্বাসকষ্টের উপসর্গ ছিল মুসলিম এ নারীর।

ফাতিমার স্বামী মোহাম্মদ শফিক বলেন, তার স্ত্রীকে যেদিন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, সেদিনই তাদের বাড়িতে ‘হানা’ দেয় কর্তৃপক্ষ। পুলিশ ও মিলিটারির পাশাপাশি সরকারি কর্মকর্তারা হাজির হন তাদের দরজায়।

‘আমাদের ঘর থেকে বের করে দিয়ে সারাবাড়ি স্প্রে করে তারা। আমরা সবাই ভয়ে ছিলাম, আমাদের কিছু জানানো হচ্ছিল না।

তিন মাসের বাচ্চাটিকেও পরীক্ষা করা হয় এবং আমাদের কুকুরের মতো টেনে কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়।’

তিনি বলেন, ‘সারারাত রেখে পরেরদিনই আমাদের ছেড়ে দেয়া হয় এবং দুই সপ্তাহ কোয়ারেন্টাইনে থাকতে বলা হয়। সেসময় আমরা খবর পাই, ফাতিমা হাসপাতালে মারা গেছে।’

ফাতিমার প্রাপ্তবয়স্ক ছেলে হাসপাতালে যেতে চেয়েছিলেন তার মায়ের মরদেহ শনাক্ত করতে। কিন্তু তাকে জানানো হয়, করোনার উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু হওয়ায় মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে না।

এর বদলে জোর করে মরদেহ পোড়ানোর অনুমতিপত্রে সই নেয়া হয় ছেলেটির।

শফিক বলেন, ‘তাকে (ছেলে) বলা হয়, আরও পরীক্ষার জন্য তার (ফাতিমা) শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আলাদা করা দরকার। তার যদি করোনা থাকে তাহলে শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কী দরকার তাদের?’

ফাতিমার পরিবারসহ শ্রীলঙ্কার মুসলিম সম্প্রদায়ের দাবি, করোনায় মৃতদের কবর দেয়া গেলেও কর্তৃপক্ষ জোর করে মুসলিমদের মরদেহ পুড়িয়ে তাদের অধিকার নষ্ট করছে।

তাদের দাবি, শ্রীলঙ্কায় সংখ্যালঘু মুসলিম নিপীড়নের এটা নতুন উদাহরণ। অনেকেই মনে করছেন, গত বছরের এপ্রিলে কলম্বোর একাধিক চার্চ ও হোটেল ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর থেকেই মুসলিমদের ওপর নিপীড়ন বেড়ে গেছে।

গত ৩১ মার্চ দেশটিতে করোনায় প্রথম মুসলিমের মৃত্যুর পর স্থানীয় বেশ কিছু মিডিয়া প্রাণঘাতী এই ভাইরাস ছড়ানোর জন্যে সরাসরি মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপরই দোষ চাপাচ্ছে।

যদিও শ্রীলঙ্কায় এ পর্যন্ত করোনায় মাত্র ১১ জন মারা গেছেন। তাদের সবার মরদেহই পোড়ানো হয়েছে।

শ্রীলঙ্কান সরকারের প্রধান মহামারি বিশেষজ্ঞ ডা. সুগাথ সামারাভিরা বলেন, ‘করোনাভাইরাসে আক্রান্তসহ যারা সন্দেহজনকভাবে (উপসর্গযুক্ত) মারা গেছেন, তাদের সবার মরদেহই পোড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।’

এ কর্মকর্তার দাবি, করোনায় মৃতদের মরদেহ কবর দিলে তা ভূগর্ভস্থ পানিকে দূষিত করতে পারে।

এ বিষয়ে শ্রীলঙ্কা মুসলিম কংগ্রেস পার্টির জ্যেষ্ঠ নেতা ও সাবেক মন্ত্রী আলি জাহির মাওলানা বলেন, ‘করোনায় মৃতদের কবর দেয়া জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর- এর উপযুক্ত প্রমাণ থাকলে সরকারের এই নীতি মেনে নেবে মুসলিম সম্প্রদায়।’

সরকারের এমন নীতির বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এ নেতা। তার দাবি, সরকার এসবের মাধ্যমে মুসলিমদের নিয়ে ‘কালো রাজনৈতিক এজেন্ডা’ বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে।

মরদেহ পোড়ানোর বিরুদ্ধে ইতোমধ্যেই শ্রীলঙ্কার সুপ্রিম কোর্টে একটি পিটিশন দাখিল হয়েছে। আগামী ১৩ জুলাই এর শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। সূত্র: বিবিসি

 

ট্যাগস
সর্বাধিক পঠিত

বিয়ে না, সম্পর্ক ও রোমান্স করতে চান নায়িকা

আলিশান চাল, নওগাঁ

বিজ্ঞাপন দিন

কবর দিতে দেওয়া হচ্ছে না মুসলিমদের মরদেহ

আপডেট সময় ০৮:০৮:২৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ৫ জুলাই ২০২০

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ  ফাতিমা রিনোজা, বয়স ৪৪; বাড়ি শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোয়। গত ৪ মে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। শ্বাসকষ্টের উপসর্গ ছিল মুসলিম এ নারীর।

ফাতিমার স্বামী মোহাম্মদ শফিক বলেন, তার স্ত্রীকে যেদিন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, সেদিনই তাদের বাড়িতে ‘হানা’ দেয় কর্তৃপক্ষ। পুলিশ ও মিলিটারির পাশাপাশি সরকারি কর্মকর্তারা হাজির হন তাদের দরজায়।

‘আমাদের ঘর থেকে বের করে দিয়ে সারাবাড়ি স্প্রে করে তারা। আমরা সবাই ভয়ে ছিলাম, আমাদের কিছু জানানো হচ্ছিল না।

তিন মাসের বাচ্চাটিকেও পরীক্ষা করা হয় এবং আমাদের কুকুরের মতো টেনে কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়।’

তিনি বলেন, ‘সারারাত রেখে পরেরদিনই আমাদের ছেড়ে দেয়া হয় এবং দুই সপ্তাহ কোয়ারেন্টাইনে থাকতে বলা হয়। সেসময় আমরা খবর পাই, ফাতিমা হাসপাতালে মারা গেছে।’

ফাতিমার প্রাপ্তবয়স্ক ছেলে হাসপাতালে যেতে চেয়েছিলেন তার মায়ের মরদেহ শনাক্ত করতে। কিন্তু তাকে জানানো হয়, করোনার উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু হওয়ায় মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে না।

এর বদলে জোর করে মরদেহ পোড়ানোর অনুমতিপত্রে সই নেয়া হয় ছেলেটির।

শফিক বলেন, ‘তাকে (ছেলে) বলা হয়, আরও পরীক্ষার জন্য তার (ফাতিমা) শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আলাদা করা দরকার। তার যদি করোনা থাকে তাহলে শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কী দরকার তাদের?’

ফাতিমার পরিবারসহ শ্রীলঙ্কার মুসলিম সম্প্রদায়ের দাবি, করোনায় মৃতদের কবর দেয়া গেলেও কর্তৃপক্ষ জোর করে মুসলিমদের মরদেহ পুড়িয়ে তাদের অধিকার নষ্ট করছে।

তাদের দাবি, শ্রীলঙ্কায় সংখ্যালঘু মুসলিম নিপীড়নের এটা নতুন উদাহরণ। অনেকেই মনে করছেন, গত বছরের এপ্রিলে কলম্বোর একাধিক চার্চ ও হোটেল ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর থেকেই মুসলিমদের ওপর নিপীড়ন বেড়ে গেছে।

গত ৩১ মার্চ দেশটিতে করোনায় প্রথম মুসলিমের মৃত্যুর পর স্থানীয় বেশ কিছু মিডিয়া প্রাণঘাতী এই ভাইরাস ছড়ানোর জন্যে সরাসরি মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপরই দোষ চাপাচ্ছে।

যদিও শ্রীলঙ্কায় এ পর্যন্ত করোনায় মাত্র ১১ জন মারা গেছেন। তাদের সবার মরদেহই পোড়ানো হয়েছে।

শ্রীলঙ্কান সরকারের প্রধান মহামারি বিশেষজ্ঞ ডা. সুগাথ সামারাভিরা বলেন, ‘করোনাভাইরাসে আক্রান্তসহ যারা সন্দেহজনকভাবে (উপসর্গযুক্ত) মারা গেছেন, তাদের সবার মরদেহই পোড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।’

এ কর্মকর্তার দাবি, করোনায় মৃতদের মরদেহ কবর দিলে তা ভূগর্ভস্থ পানিকে দূষিত করতে পারে।

এ বিষয়ে শ্রীলঙ্কা মুসলিম কংগ্রেস পার্টির জ্যেষ্ঠ নেতা ও সাবেক মন্ত্রী আলি জাহির মাওলানা বলেন, ‘করোনায় মৃতদের কবর দেয়া জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর- এর উপযুক্ত প্রমাণ থাকলে সরকারের এই নীতি মেনে নেবে মুসলিম সম্প্রদায়।’

সরকারের এমন নীতির বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এ নেতা। তার দাবি, সরকার এসবের মাধ্যমে মুসলিমদের নিয়ে ‘কালো রাজনৈতিক এজেন্ডা’ বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে।

মরদেহ পোড়ানোর বিরুদ্ধে ইতোমধ্যেই শ্রীলঙ্কার সুপ্রিম কোর্টে একটি পিটিশন দাখিল হয়েছে। আগামী ১৩ জুলাই এর শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। সূত্র: বিবিসি