স্বাস্থ্য ডেস্কঃ খালি চোখে দেখা যায় না- এমন শত্রু করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯। যার বিষাক্ত ছোবলে যেন ভেঙেচুরে যাচ্ছে পুরো পৃথিবী। নিত্যদিন সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। এখন পর্যন্ত এই মরণব্যাধির নেই কোনো ওষুধ কিংবা প্রতিষেধক।
এমতাবস্থায় প্রাণঘাতী এই ভাইরাস নিয়ে চলছে নানা গবেষণা। এরই মধ্যে জানা গেছে, নোভেল করোনা ভাইরাসের ‘এটুএ’ ধরন (টাইপ) হচ্ছে সবচেয়ে সংক্রামক। করোনা ভাইরাসের গঠনগত পরিবর্তন নিয়ে দুই ভারতীয় বিজ্ঞানীর গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে। চীনের উহানে শনাক্তের পর এখন পর্যন্ত ভাইরাসটির ১১টি ধরন সম্পর্কে তারা তথ্য দিয়েছেন।
ওই দুই বিজ্ঞানীর ভাষ্য মতে, ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাইরাসটির ব্যাপকভাবে মিউটেশন বা পরিবর্তন ঘটেছে। এই ভাইরাসের জিনগত বৈশিষ্ট্যের (আরএনএ) তথ্য বিশ্লেষণ করে তা নিশ্চিত হওয়া গেছে। এসংক্রান্ত একটি গবেষণাপত্র সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে ‘ইন্ডিয়ান জার্নাল অব মেডিক্যাল রিসার্চ’-এ।
প্রাণঘাতী করোনার ১১টি ধরন চিহ্নিত করেছেন ভারতের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োমেডিক্যাল জিনোমিকসের বিজ্ঞানী নিধান কুমার বিশ্বাস ও পার্থপ্রতিম মজুমদার। ভাইরাসটির ‘এটুএ’ ধরন কেন অধিক সংক্রামক, তা-ও বিশ্লেষণ করেছেন তারা।
২০১৯ সালের ডিসেম্বর থেকে গত ৬ এপ্রিল পর্যন্ত ৫৫টি দেশের তিন হাজার ৬৩৬ জন করোনা রোগীর দেহ থেকে ভাইরাসের নমুনার আরএনএ সিকোয়েন্স নিয়ে গবেষণা করে দেখেছেন নিধান ও পার্থপ্রতিম। তারা জানিয়েছেন, অন্যান্য ভাইরাসের মতো এটিও নিজের চেহারা বদলেছে। এখন পর্যন্ত ‘ও’, ‘এ২’, ‘এ২এ’, ‘এ৩’, ‘বি’, ‘বি১’সহ মোট ১১ ধরনের ভাইরাস মিলেছে। এর মধ্যে চীনে প্রথম সংক্রমণ ঘটায় ‘ও’। বাকি ১০টি তৈরি হয়েছে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে। যার মধ্যে এখন সবচেয়ে সংক্রামক ‘এটুএ’।
বিজ্ঞানী পার্থপ্রতিম বলেন, অবাক করা বিষয়, বেশির ভাগ ভৌগোলিক এলাকাতেই দেখা যাচ্ছে দখল নিয়েছে নোভেল করোনা ভাইরাসের ‘এটুএ’। করোনার এই ধরন প্রথম ধরা পড়ে ২৪ জানুয়ারি। মার্চ মাসের শেষের মধ্যে মোটামুটি অন্য সবাইকে সরিয়ে দিয়ে ৬০ শতাংশ দেশে সংক্রমণ ঘটায় এ ধরনটি।’
আরেক গবেষক নিধান জানান, ইউরোপ-আমেরিকায় সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে ‘এটুএ’। সেখান থেকে ভারতে এসেছে ‘এটুএ’। আবার চীন থেকে এসেছে ‘ও’। ইরান থেকে এসেছে ‘এ৩’। ‘এটুএ’ এবং ‘ও’ দুটোই শক্তিশালী। তবে ‘এটুএ’ বেশি সংক্রামক।
‘এটুএ’র সংক্রমণ ক্ষমতা বেশি হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করেছেন নিধান ও পার্থপ্রতিম। তারা জানান, চরিত্র অনুযায়ী করোনা ফুসফুসে ঢুকে সংক্রমণ ছড়ায়। ভাইরাসটির স্পাইকে থাকা প্রোটিন মানুষের ফুসফুসে থাকা ‘এসিই২’ প্রোটিনকে কাজে লাগিয়ে কোষের উপরিভাগে ‘অ্যাংকর’ করে বা জুড়ে যায়। এর পর ফুসফুসে উপস্থিত অন্য একটি প্রোটিন তাকে কোষের ভেতরে প্রবেশ করাতে সহায়তা করে। ‘এটুএ’র ক্ষেত্রে তার স্পাইকে থাকা অ্যামিনো এসিডটি ‘অ্যাসপারটিক এসিড’ থেকে বদলে ‘গ্লাইসিন’-এ পরিণত হয়।’ যা তার সংক্রমণ ক্ষমতা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
দুই বিজ্ঞানীর ভাষ্য, যেহেতু ভাইরাসটির মধ্যে এত পরিবর্তন ঘটছে, তাই ভ্যাকসিন বা প্রতিষেধক তৈরি বেশ চ্যালেঞ্জিং। ভাইরাসটি সম্পর্কে পুরোপুরি জানতে না পারলে প্রতিষেধক তৈরি হলেও তা সবার শরীরে কাজ করবে না। সেই কাজে এই গবেষণা সহায়তা করতে পারবে বলে আশাবাদী এ দুই বাঙালি বিজ্ঞানী।