ঢাকা ০৮:৩১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাদশাহ’র আজকের বাদশাহ হয়ে ওঠার গল্প

বিনোদন ডেস্কঃ বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিতের মেধাবী ছাত্র ছিলেন। কিন্তু সেই কোর্স সম্পূর্ণ না করে পড়তে গেলেন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং। ইঞ্জিনিয়ার হওয়াও হলো না। আদিত্য প্রতীক সিংহ সিসৌদিয়া হয়ে গেলেন র‌্যাপার বাদশা।

বাদশার জন্ম দিল্লিতে, ১৯৮৫ সালের ১৯ নভেম্বর। পীতমপুরার বালভারতী স্কুলে পড়ার সময় থেকেই ঝোঁক গানবাজনার দিকে। স্কুলে তাঁর গানের দলও ছিল। গানের প্রতি সেই আকর্ষণই জয়ী হল পরবর্তীকালে। ইঞ্জিনিয়ার হওয়া হল না। কিন্তু চণ্ডীগড়ের ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে পড়ার সময় থেকেই র‌্যাপের প্রতি আকর্ষণ জন্মায়। লিখতে শুরু করেন গান। বাদশা জানিয়েছিলেন, তিনি পারফরর্মার না হলে হয়তো আইএএস অফিসার হতেন।

গানের দুনিয়ায় আসার পর থেকেই তিনি ছদ্মনাম ব্যবহার করেন। প্রথমে তাঁর ছদ্মনাম ছিল ‘কুল ইক্যুয়াল’। পরে তা পাল্টে করেন ‘বাদশা’।
২০০৬ সালে তাঁর ক্যারিয়ার শুরু ইয়ো ইয়ো হানি সিংহের সঙ্গে। তাঁর দলেই গান করতেন সহ-গায়ক হিসেবে। ২০১২-এ তিনি হানি সিংহের দল ছেড়ে দেন। সে বছরই তিনি প্রকাশ করেন হরিয়ানার লোকসঙ্গীত, ‘কর গয়ি চুল’। পরে সেটি ‘কাপুর অ্যান্ড সন্স’ ছবিতেও ব্যবহার করা হয়।

হানি সিংহের সঙ্গে বাদশা জড়িয়ে পড়েন প্রকাশ্য বাকবিতণ্ডায়। এক সাক্ষাৎকারে হানি সিংহ তাঁকে টাটা ন্যানোর মতো কমদামি গাড়ির সঙ্গে তুলনা করে নিজেকে রোলস রয়েস-এর মতো মহার্ঘ্য গাড়ির সঙ্গে তুলনা করেন।

পাল্টা উত্তরও দেন বাদশা। বলেন, রাস্তায় রোলস রয়েসের থেকে টাকা ন্যানোই বেশি দেখা যায়। কারণ ওটাই বেশি জনপ্রিয়। বিতর্ক সত্ত্বেও গানের দুনিয়ায় আত্মপ্রকাশেই বাজিমাত করেন বাদশা। তাঁর প্রথম সিঙ্গল ‘ডি জে ওয়ালে বাবু’ মুক্তি পাওয়ার পরেই ভেঙে চুরমার করে দেয় আগের সব রেকর্ড। গানটি মুক্তির সঙ্গে সঙ্গে এর ‘ভিউজ’ ছাপিয়ে যায় কয়েক লক্ষ।

২০১৯ সালে বাদশার গান ‘পাগল’ ইউটিউবে মুক্তির ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ‘ভিউজ’ ছাপিয়ে যায় সাড়ে সাত কোটি। তবে এই নিয়ে দেখা দেয় বিতর্কও। অভিযোগ ওঠে, এই ভিউজ-এর সবটা আসল নয়। এরমধ্যে নকল ইউজারও আছে। তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেন বাদশা।

হিন্দি সিনেমাতেও বাদশার গানের জনপ্রিয়তা অপ্রতিরোধ্য। ‘হাম্পটি শর্মা কে দুলহনিয়া’, ‘খুবসুরত’, ‘বজরঙ্গী ভাইজান’, ‘এবিসিডি টু’, ‘অল ইজ ওয়েল’, ‘সনম রে’, ‘বদ্রীনাথ কি দুলহনিয়া’, ‘সুলতান’, ‘দাবাং থ্রি’, ‘গুড নিউজ’, ‘স্ট্রিট ডান্সার থ্রি’-সহ সাম্প্রতিক বহু ছবির সঙ্গে আইকনিক হয়ে গিয়েছে বাদশার গান।

২০১৯ সালে মুক্তি পাওয়া ‘খানদানি শফাখনা’ ছবিতে অভিনয়ও করেছন বাদশা। প্রযোজনা করেছেন ‘দো দুনি পাঁচ’ ছবি। এক সাক্ষাৎকারে বাদশা জানিয়েছিলেন, তিনি আরও বেশ কিছু বার অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছেন। কিন্তু তিনি অভিনেতা হতে চান না। বরং তিনি খুশি তাঁর গায়ক পরিচয় নিয়েই।

অনুরাগীদের হৃদয়ে ঝড় তোলা বাদশা অন্দরমহলে পুরোদস্তুর ফ্যামিলিম্যান। স্ত্রী জেসমিনের সঙ্গে তিনিও দেখভাল করেন তাঁদের একমাত্র শিশুকন্যার।

গত ২৫ মার্চ ইউটিউবে মুক্তি পায় বাদশার ‘গেন্দা ফুল’ গান। যেখানে নতুন আঙ্গিকে পেশ করা হয় গ্রামবাংলার ‘বড়লোকের বিটি লো, লম্বা লম্বা চুল’ লোকসঙ্গীতটিকে। এর পরই ভিউজ-এর পাশাপাশি বিতর্ক-সমালোচনারও ঝড় ওঠে সোশ্যাল মিডিয়ায়। অভিযোগ ওঠে, প্রকৃত গীতিকার ও সুরকার রতন কাহারকে উপেক্ষা করেছেন বাদশা।

বিতর্কের কারণে বাদশা পাঁচ লক্ষ টাকা পাঠিয়ে দেন রতন কাহারকে। বলেন, ভিডিও প্রকাশের সময় তিনি জানতেন না প্রকৃত সুরকার ও গীতিকার কে। অন্য দিকে, বীরভূমের প্রত্যন্ত গ্রামে বসে রতন কাহার জানান, এক মঞ্চশিল্পী তাঁকে এই গানের ভিডিওটি দেখান। তার পরই তিনি জানতে পারেন।

টাকা পেয়ে বাদশার প্রতি কৃতজ্ঞতাও জানিয়েছেন রতন কাহার। জানিয়েছেন, অর্থের পাশাপাশি এত দিনে প্রাপ্য পরিচিতি পেয়ে তাঁর ভাল লাগছে।

সূত্র-আনন্দবাজার 

ট্যাগস

আলিশান চাল, নওগাঁ

বিজ্ঞাপন দিন

বাদশাহ’র আজকের বাদশাহ হয়ে ওঠার গল্প

আপডেট সময় ১২:০৭:১৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ এপ্রিল ২০২০

বিনোদন ডেস্কঃ বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিতের মেধাবী ছাত্র ছিলেন। কিন্তু সেই কোর্স সম্পূর্ণ না করে পড়তে গেলেন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং। ইঞ্জিনিয়ার হওয়াও হলো না। আদিত্য প্রতীক সিংহ সিসৌদিয়া হয়ে গেলেন র‌্যাপার বাদশা।

বাদশার জন্ম দিল্লিতে, ১৯৮৫ সালের ১৯ নভেম্বর। পীতমপুরার বালভারতী স্কুলে পড়ার সময় থেকেই ঝোঁক গানবাজনার দিকে। স্কুলে তাঁর গানের দলও ছিল। গানের প্রতি সেই আকর্ষণই জয়ী হল পরবর্তীকালে। ইঞ্জিনিয়ার হওয়া হল না। কিন্তু চণ্ডীগড়ের ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে পড়ার সময় থেকেই র‌্যাপের প্রতি আকর্ষণ জন্মায়। লিখতে শুরু করেন গান। বাদশা জানিয়েছিলেন, তিনি পারফরর্মার না হলে হয়তো আইএএস অফিসার হতেন।

গানের দুনিয়ায় আসার পর থেকেই তিনি ছদ্মনাম ব্যবহার করেন। প্রথমে তাঁর ছদ্মনাম ছিল ‘কুল ইক্যুয়াল’। পরে তা পাল্টে করেন ‘বাদশা’।
২০০৬ সালে তাঁর ক্যারিয়ার শুরু ইয়ো ইয়ো হানি সিংহের সঙ্গে। তাঁর দলেই গান করতেন সহ-গায়ক হিসেবে। ২০১২-এ তিনি হানি সিংহের দল ছেড়ে দেন। সে বছরই তিনি প্রকাশ করেন হরিয়ানার লোকসঙ্গীত, ‘কর গয়ি চুল’। পরে সেটি ‘কাপুর অ্যান্ড সন্স’ ছবিতেও ব্যবহার করা হয়।

হানি সিংহের সঙ্গে বাদশা জড়িয়ে পড়েন প্রকাশ্য বাকবিতণ্ডায়। এক সাক্ষাৎকারে হানি সিংহ তাঁকে টাটা ন্যানোর মতো কমদামি গাড়ির সঙ্গে তুলনা করে নিজেকে রোলস রয়েস-এর মতো মহার্ঘ্য গাড়ির সঙ্গে তুলনা করেন।

পাল্টা উত্তরও দেন বাদশা। বলেন, রাস্তায় রোলস রয়েসের থেকে টাকা ন্যানোই বেশি দেখা যায়। কারণ ওটাই বেশি জনপ্রিয়। বিতর্ক সত্ত্বেও গানের দুনিয়ায় আত্মপ্রকাশেই বাজিমাত করেন বাদশা। তাঁর প্রথম সিঙ্গল ‘ডি জে ওয়ালে বাবু’ মুক্তি পাওয়ার পরেই ভেঙে চুরমার করে দেয় আগের সব রেকর্ড। গানটি মুক্তির সঙ্গে সঙ্গে এর ‘ভিউজ’ ছাপিয়ে যায় কয়েক লক্ষ।

২০১৯ সালে বাদশার গান ‘পাগল’ ইউটিউবে মুক্তির ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ‘ভিউজ’ ছাপিয়ে যায় সাড়ে সাত কোটি। তবে এই নিয়ে দেখা দেয় বিতর্কও। অভিযোগ ওঠে, এই ভিউজ-এর সবটা আসল নয়। এরমধ্যে নকল ইউজারও আছে। তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেন বাদশা।

হিন্দি সিনেমাতেও বাদশার গানের জনপ্রিয়তা অপ্রতিরোধ্য। ‘হাম্পটি শর্মা কে দুলহনিয়া’, ‘খুবসুরত’, ‘বজরঙ্গী ভাইজান’, ‘এবিসিডি টু’, ‘অল ইজ ওয়েল’, ‘সনম রে’, ‘বদ্রীনাথ কি দুলহনিয়া’, ‘সুলতান’, ‘দাবাং থ্রি’, ‘গুড নিউজ’, ‘স্ট্রিট ডান্সার থ্রি’-সহ সাম্প্রতিক বহু ছবির সঙ্গে আইকনিক হয়ে গিয়েছে বাদশার গান।

২০১৯ সালে মুক্তি পাওয়া ‘খানদানি শফাখনা’ ছবিতে অভিনয়ও করেছন বাদশা। প্রযোজনা করেছেন ‘দো দুনি পাঁচ’ ছবি। এক সাক্ষাৎকারে বাদশা জানিয়েছিলেন, তিনি আরও বেশ কিছু বার অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছেন। কিন্তু তিনি অভিনেতা হতে চান না। বরং তিনি খুশি তাঁর গায়ক পরিচয় নিয়েই।

অনুরাগীদের হৃদয়ে ঝড় তোলা বাদশা অন্দরমহলে পুরোদস্তুর ফ্যামিলিম্যান। স্ত্রী জেসমিনের সঙ্গে তিনিও দেখভাল করেন তাঁদের একমাত্র শিশুকন্যার।

গত ২৫ মার্চ ইউটিউবে মুক্তি পায় বাদশার ‘গেন্দা ফুল’ গান। যেখানে নতুন আঙ্গিকে পেশ করা হয় গ্রামবাংলার ‘বড়লোকের বিটি লো, লম্বা লম্বা চুল’ লোকসঙ্গীতটিকে। এর পরই ভিউজ-এর পাশাপাশি বিতর্ক-সমালোচনারও ঝড় ওঠে সোশ্যাল মিডিয়ায়। অভিযোগ ওঠে, প্রকৃত গীতিকার ও সুরকার রতন কাহারকে উপেক্ষা করেছেন বাদশা।

বিতর্কের কারণে বাদশা পাঁচ লক্ষ টাকা পাঠিয়ে দেন রতন কাহারকে। বলেন, ভিডিও প্রকাশের সময় তিনি জানতেন না প্রকৃত সুরকার ও গীতিকার কে। অন্য দিকে, বীরভূমের প্রত্যন্ত গ্রামে বসে রতন কাহার জানান, এক মঞ্চশিল্পী তাঁকে এই গানের ভিডিওটি দেখান। তার পরই তিনি জানতে পারেন।

টাকা পেয়ে বাদশার প্রতি কৃতজ্ঞতাও জানিয়েছেন রতন কাহার। জানিয়েছেন, অর্থের পাশাপাশি এত দিনে প্রাপ্য পরিচিতি পেয়ে তাঁর ভাল লাগছে।

সূত্র-আনন্দবাজার