স্টাফ রিপোর্টারঃ করোনা ভাইরাস নিয়ে গুজব রটিয়ে ফেঁসে যাচ্ছেন সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকটিভিস্ট এ কে এম ওয়াহিদুজ্জামান। বিদেশে বসে নানা গুজব রটানোর অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। শুধুমাত্র তার পোস্টের পরই দুইটি বিষয়ে খোঁজ নিয়ে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ানের (র্যাব) সদস্যরা জানতে পারেন দুইটি বিষয়ই ভুয়া।
তাই তাকে ধরতে চেষ্টা চালাচ্ছে র্যাব। ওই পোস্টগুলোতে সরাসরি তিনি করোনা ভাইরাসের কথা উল্লেখ না করলেও পরিস্থিতির কারণে তার এমন পোস্ট করোনা ভাইরাসকেই ইঙ্গিত করে বলে মনে করছেন মনোবিদরা।
করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরুর পর থেকেই এর এটি প্রতিরোধে সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের সমালোচনা ও মানুষের মাঝে ‘আতঙ্ক ছড়ানো শুরু করেন’ এ কে এম ওয়াহিদুজ্জামান।
গেল ৪ এপ্রিল ফুটপাতে পড়ে থাকা অচেতন এক ব্যক্তির ছবি দিয়ে ক্যাপশনে তিনি লেখেন, ‘ঘটনাস্থল কাকরাইল রোডের ফুটপাত’। পোস্টে তিনি করোনা ভাইরাস শব্দটি উল্লেখ না করলেও তার আগের পোস্ট এবং বর্তমান পরিস্থিতিতে অনেকেই ধারণা করেন এটা করোনা সংক্রান্ত। যা ফুটে ওঠে ওই পোস্টের কমেন্টেই। সবুজ চৌধুরী নামের এক ব্যক্তি ওই পোস্টের কমেন্টে লেখেন, মনে হচ্ছে ইতালির মতো হয়ে যাচ্ছে। এ ঘটনার পর খোঁজ নেয়া শুরু করে র্যাব। পরে জানা যায়, এই ঘটনাটি সম্পূর্ণ ভুয়া। রমনা থানায় যোগাযোগ করে সময় নিউজও ওই ঘটনার কোনো সত্যতা পায়নি।
এরপর ৬ এপ্রিল অচেতন আরেক ব্যক্তির ছবি পোস্ট করে ফেসবুকে তিনি লেখেন, ঘটনাস্থল টাঙ্গাইল স্টেডিয়াম ব্রিজের পূর্বপাশ। এই মানুষটিও অনেকক্ষণ যাবত এইভাবে পড়ে আছে, ভয়ের কারণে কেউ কাছে যেতে সাহস পাচ্ছে না। এখানেও তিনি সরাসরি করোনা ভাইরাসের কিছু উল্লেখ না করলেও সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীরা এটিকে সেভাবেই নেন এবং ব্যাখ্যা করতে থাকেন।
মাহমুদুর রহমান নামের এক ব্যক্তি সেখানে লেখেন, মৃত ব্যক্তি করোনা ভাইরাস ছড়ায় না। সবার জানা উচিৎ। লাশগুলো এভাবে পড়ে থাকতে দেখলে কষ্ট লাগে। তবে ওই ঘটনার পরও মানুষ যখন এটিকে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বলে মনে করতে শুরু করে তখন খোঁজ নেয় র্যাব।
র্যাব সদস্যরা ওই ব্যক্তির বাড়িতে যায় এবং তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন। তার মধ্যে করোনা ভাইরাসের কোনো লক্ষণও পাননি তারা।
এ বিষয়ে টাঙ্গাইলে র্যাব-১২ সিপিসি-৩ এর কোম্পানি কমান্ডার আবু নাঈম তালাত জানান, র্যাব হেড কোয়ার্টারে নির্দেশে আমরা ওই অসুস্থ ব্যক্তির বাড়িতে যাই। সেখানে গিয়ে জানতে পারি তিনি একজন ভ্যান চালক। তিনি নেশা করে বাড়ি ফেরার সময় শহরের পার্ক বাজার মোড়ে রাস্তার পাশে পড়েছিলেন।
তিনি আরও বলেন, তার কোনো প্রকার করোনার উপসর্গ নাই। এ ব্যাপারে মিথ্যা গুজব সৃষ্টিকারীদের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
দুইটি পোস্টের কোথাও তিনি করোনা ভাইরাস শব্দটি উল্লেখ না করলেও সাধারণ মানুষ পরিস্থিতির কারণে এটিকে করোনা ভাইরাসের সঙ্গে যুক্ত করেছেন বলে মনে করেন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ডা. মো. তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, পরিস্থিতির কারণে অনেক সময় পূর্ণ মেসেজ না দিয়েও মানুষের মাঝে আতঙ্ক ছড়ানো যায়। এখানে তেমনটাই ঘটেছে।
এ ব্যাপারে সরকারের কঠোর নজরদারি দরকার বলেও মত দেন তিনি।
এ বিষয়ে র্যাবের মুখপাত্র সারওয়ার-বিন-কাশেম বলেন, দুইটি ঘটনার বিষয়েই আমরা খোঁজ নিয়েছি এবং দুইটি তথ্যই ভুয়া বলে প্রমাণ পেয়েছি। এগুলো খুবই গর্হিত অপরাধ। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
তিনি আরও বলেন, এই মুহূর্তে তিনি বিদেশে অবস্থান করছেন বলে আমাদের কাছ তথ্য রয়েছে। তবে তিনি যেখানেই অবস্থান করুন না কেন তাকে আমরা আইনের আওতায় আনতে সক্ষম।
সূত্রঃ সময় নিউজ