পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দল তেহরিক-ই-ইনসাফের প্রধান ইমরান খান গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) রাজধানী ইসলামাবাদ অভিমুখে লংমার্চকালে তাকে লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়। তার এক পায়ে গুলি লেগেছে।
গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ইমরান খানের কর্মী-সমর্থকদের বরাতে এ খবর দিয়েছে স্কাই নিউজ।
আগাম নির্বাচনের দাবিতে ‘হাকিকি আজাদি’ আন্দোলন শুরু করেছে ইমরান খানের দল পিটিআই। গত ২৮ অক্টোবর থেকে লাহোর থেকে রাজধানী ইসলামাবাদের উদ্দেশে লংমার্চ শুরু হয়। লাখো সমর্থক নিয়ে শুরু হওয়া লংমার্চের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ‘কাপ্তান’ ইমরান খান।
স্কাই নিউজ জানায়, বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) পাঞ্জাবের ওয়াজিরাবাদ শহরে ট্রাকের ওপর দাঁড়িয়ে শত শত কর্মী-সমর্থকের উদ্দেশে বক্তব্য দিচ্ছিলেন ইমরান খান। এ সময় তাকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় এক বন্দুকধারী। তিনি গুরুতর আহত হন। আহত হয়েছেন পিটিআই’র একাধিক সমর্থকও।
এরপর খুব দ্রুতই তাকে ঘটনাস্থল থেকে সরিয়ে নেয়া হয়। পিটিআই কর্মী-সমর্থকরা এ ঘটনাকে হত্যাচেষ্টা বলে অভিহিত করেছেন। তাদের মতে, অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গেছেন তাদের নেতা। পিটিআই কর্মকর্তা আজহার মাশওয়ানি জানিয়েছেন, পায়ে গুলি লাগলেও ‘কাপ্তান’ এখন বিপদমুক্ত। বন্দুকধারীকেও আটক করা হয়েছে।
নতুন করে নির্বাচনের দাবিতে দেশজুড়ে একের পর এক সমাবেশ করছেন পিটিআই প্রধান। গত ২৫ মে ইসলামাবাদ অভিমুখে প্রথম লংমার্চের ঘোষণা দেন। তবে সরকারের বাধায় কর্মসূচি সহিংস রূপ নিলে মাঝপথে হঠাৎ কর্মসূচি স্থগিত করেন তিনি।
সম্প্রতি একাধিক উপনির্বাচনে ভূমিধস জয়ের পর উজ্জীবিত ইমরান খানকে দুর্নীতির অভিযোগে রাজনীতিতে পাঁচ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করেছে পাকিস্তান নির্বাচন কমিশন। এরপরই আবারও ইসলামাবাদ অভিমুখে লংমার্চের ঘোষণা দেন।
জিও নিউজের প্রতিবেদনমতে, লাহোরের লিবার্টি চক থেকে লংমার্চ শুরু হয়। বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে লংমার্চের উদ্বোধন করেন পিটিআই চেয়ারম্যান।
এ সময় ইমরান খান বলেন, এই লংমার্চে রাজনীতি নেই, এটি সাধারণ কোনো আন্দোলনও নয়। তিনি জোর দিয়ে বলেন, এই কর্মসূচি হলো মুক্তির জন্য ‘জিহাদ’। ক্ষমতাসীনদের প্রতি ইঙ্গিত করে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘চোরদের’ দাস হয়ে থাকার চেয়ে মরে যাওয়া ভালো। নেতাকর্মীদের তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশকে মুক্ত করতে প্রস্তুত হোন।’
দাসত্ব মেনে নেবেন না বলেও প্রত্যয় জানান পিটিআই চেয়ারম্যান। এ সময় জনতার সুনামি ঠেকাতে সরকারের প্রতি চ্যালেঞ্জও ছুড়ে দেন তিনি। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনমতে, লংমার্চ শুরু থেকেই শান্তিপূর্ণ ছিল। তবে ষষ্ঠ দিনে এসে লংমার্চ সহিংস হয়ে উঠল।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে স্কাই নিউজ জানিয়েছে, লরি ও ট্রাকের মতো গাড়ির বিশাল বহর নিয়ে লংমার্চ করছিলেন ইমরান খান। বৃহস্পতিবার বিকালে পাঞ্জাবের ওয়াজিরাবাদে তার বক্তব্য শোনার জড়ো হাজার হাজার কর্মী-সমর্থক। খান বক্তব্য শুরু করার কিছুক্ষণ পরই হঠাৎ গুলির শব্দ শোনা যায়। এতে মুহূর্তে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
স্কাই নিউজের প্রত্যক্ষদর্শী এক সাংবাদিক জানান, কিছু মানুষ চিৎকার করে ওঠেন, ‘ইমরান খান মারা গেছে। সঙ্গে সঙ্গে ভয়ার্ত কণ্ঠে প্রশ্ন করে কেউ, ‘তিনি কি মারা গেছেন? মুহূর্তের মধ্যে ঘটনাস্থলের দিকে এগিয়ে আসে সশস্ত্র পুলিশ। সঙ্গে সঙ্গে সাইরেন বাজিয়ে পৌঁছে যায় অ্যাম্বুলেন্সও। এর মধ্যে রক্তাক্ত একজনকে অ্যাম্বুলেন্সে তুলতে দেখা যায়। এরপর আরও একজনকে।’
পিটিআইয়ের এক কর্মী জানান, ইমরান খানের পায়ে অন্তত ৩ থেকে ৪টি গুলি লেগেছে। ইমরান খান ছাড়া পিটিআই নেতা ও সিনেটর ফয়সাল জাভেদ এবং আহমেদ চিত্তা নামে আরেক নেতা আহত হয়েছেন। এছাড়া দলটির এক কর্মী প্রাণ হারিয়েছেন। এদিকে হামলাকারী গুলি করে পালানোর সময় ইমরান খানের এক সমর্থক তাকে জড়িয়ে ধরেন। পরে পুলিশ এসে তাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়।
এদিকে ইমরান খান হত্যাচেষ্টার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। সেই সঙ্গে ঘটনাটি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। বিরোধীরা গত প্রায় আট মাস ধরে আগাম নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে। শাহবাজ শরিফের সরকার বলছে, কোনো আগাম নির্বাচন নয়। নির্বাচন আগামী ২০২৩ সালের নির্ধারিত সময়েই হবে।