অর্থনীতি ডেস্ক: আগামীকাল বৃহস্পতিবার নতুন অর্থবছরের (২০২১-২২) বাজেট প্রস্তাব তুলে ধরবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল। অর্থমন্ত্রী নতুন অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার আগেই রাজধানীর বাজারগুলোতে চাল, আটা, ময়দার দাম বেড়ে গেছে।
সেইসঙ্গে বেড়েছে তেল, পেঁয়াজ, রসুন, মশুর ডালের দাম। এর পাশাপাশি সিগারেটের দামও বেড়ে গেছে।
বুধবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, চিকন, মাঝারি ও মোটা সব ধরনের চালের দাম কেজিতে ১-২ টাকা বেড়ে গেছে। দাম বেড়ে চিকন চাল এখন বিক্রি হচ্ছে ৬২ থেকে ৬৬ টাকা, যা দু’দিন আগেও ৬০ থেকে ৬৪ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছিল।
গরিবের মোটা চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫২ টাকা, যা আগে ছিল ৪৮ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে। আর মাঝারি মানের চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫৬ থেকে ৫৮ টাকা, যা আগে ছিল ৫৪ থেকে ৫৬ টাকা।
চালের দাম বাড়ার তথ্য উঠে এসেছে সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের তথ্যেও। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, চিকন ও মাঝারি চালের দাম ৩০ মে এবং মোটা চালের দাম ১ জুন বেড়েছে।
এর মধ্যে চিকন চালের দাম বেড়েছে ৫ দশমিক ১৩ শতাংশ, মাঝারি চালের দাম বেড়েছে ১০ দশমিক ২০ শতাংশ এবং মোটা চালের দাম বেড়েছে ৪ দশমিক ৪৯ শতাংশ।
চালের দাম বাড়ার বিষয়ে মালিবাগ হাজীপাড়ার ব্যবসায়ী মো. আফজাল বলেন, নতুন চাল কয়েকদিন কিছুটা কম দামে বিক্রি হয়েছে। তবে পুরাতন চাল আগের দামেই বিক্রি হচ্ছিল।
এখন নতুন চালের দামও বাড়তে শুরু করেছে। গত ৩-৪ দিনে সব ধরনের চালের দাম কেজিতে দুই টাকার মতো বেড়ে গেছে।
রামপুরার ব্যবসায়ী রমজান আলী বলেন, আমাদের ধারণা ছিল নতুন চাল যেহেতু বাজারে এসেছে, কিছুদিনের মধ্যে চালের দাম কমে যাবে। কিন্তু হঠাৎ করেই পাইকারিতে চালের দাম বেড়ে গেছে। যে কারণে আমরাও দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছি।
চালের পাশাপাশি দাম বেড়েছে আটা ও ময়দার। ৩২ থেকে ৩৪ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া প্যাকেট আটার দাম বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৩৪ থেকে ৩৬ টাকা।
আর প্যাকেট ময়দার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪৪ থেকে ৪৬ টাকা, যা আগে ছিল ৪২ থেকে ৪৪ টাকার মধ্যে। ৩৪ থেকে ৩৬ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া খোলা ময়াদার দাম বেড়ে হয়েছে ৩৮ থেকে ৪০ টাকা।
চাল, আটার সঙ্গে ক্রেতাদের বাড়তি অর্থ গুনতে হচ্ছে সয়াবিন ও পাম তেলের জন্য। লুজ সয়াবিন তেলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা, যা গত শুক্রবার ছিল ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকার মধ্যে। আর পাম সুপার বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১২৫ টাকা, যা আগে ১১৫ থেকে ১২০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছিল।
তেলের দামের বিষয়ে সরকারি প্রতিষ্ঠান টিসিবি জানিয়েছে, গত এক সপ্তাহে লুজ সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে ২ শতাংশ। বোতলের ৫ লিটার সয়াবিন তেলের দাম ৫ দশমিক ৩০ শতাংশ বেড়েছে।
এছাড়া লুজ পাম অয়েলের দশমিক ৮৯ শতাংশ এবং সুপার পাম অয়েলের দশমিক ৮৬ শতাংশ দাম বেড়েছে। ৩০ থেকে ৩১ মে এই দুই দিনে তেলের দাম বেড়েছে।
এদিকে পেঁয়াজের দাম দুই দফায় কেজিতে ১৫ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে। গত শুক্রবার ৪৫ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া দেশি পেঁয়াজ এখন বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। এর সঙ্গে বেড়েছে রসুনের দাম। আমদানি করা রসুনের দাম বেড়ে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে, যা গত শুক্রবার ১২০ থেকে ১৩০ টাকার মধ্যে ছিল।
পেঁয়াজের দাম বাড়ার বিষয়ে খিলগাঁওয়া তালতলা বাজারের ব্যবসায়ী মো. আজজুর রহমান বলেন, পাইকারিতে দাম অনেক বেড়ে গেছে।
যে কারণে আমাদের বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। আগে এক কেজি পেঁয়াজ ৪৫ টাকা বিক্রি করেছি। এখন বাছাই করা পেঁয়াজের কেজি ৬০ টাকা এবং অবাছাই করাগুলো ৫৫ টাকা বিক্রি করতে হচ্ছে।
পেঁয়াজের দামের বিষয়ে শ্যামবাজারের ব্যবসায়ী মো. রাজু বলেন, এখন পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে না। দেশি পেঁয়াজের সরবরাহও কমে গেছে। এ কারণেই পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। দ্রুত পেঁয়াজ আমদানির ব্যবস্থা না করলে দাম আরও বেড়ে যেতে পারে।
এদিকে প্রতিবছর বাজেট আসলেই সিগারেটের দাম বাড়ার প্রবণতা দেখা যায়। আগের রীতি মেনে এবারও বাজেটের আগে সিগারেটের দাম বেড়ে গেছে। দু’দিন আগে ১৪ টাকা পিস বিক্রি হওয়া বেনসন সিগারেট এখন ১৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
কিছু কিছু ব্যবসায়ীরা গোল্ডলিফ সিগারেটেরও দামও এক টাকা বেশি রাখছেন। ১০ টাকার গোল্ডলিফ ১১ টাকা বিক্রি করছেন অনেক ব্যবসায়ী। অবশ্য কোথাও কোথাও ১০ টাকাতেও পাওয়া যাচ্ছে। অন্যান্য সিগারেটের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
সেগুনবাগিচার ব্যবসায়ী মো. তাহের বলেন, বাজেট ঘোষণার পর প্রতি বছর সিগারেটের দাম বাড়ে। এবার বাজেট ঘোষণার আগেই বেনসন সিগারেটের দাম প্রতিপিসে বেড়ে গেছে ১ টাকা করে। আগামীকাল বাজেট ঘোষণার পর অন্যান্য সিগারেটের দামও বাড়তে পারে।