ঢাকা ০৭:৫১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বদলগাছীতে প্রধান শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি

শেরপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও মিজানুর রহমান

স্টাফ রিপোর্টার, নওগাঁ: নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার শেরপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে ভুয়া নিয়োগ বোর্ড গঠন করে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও নিয়োগ কমিটির বিরুদ্ধে।

করোনভাইরাস সংক্রমণের মধ্যে বিদ্যালয় বন্ধ থাকার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিমিয়ে গোপনে মিজানুর রহমান নামে একজনকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

তিনি উপজেলার ‘পাহাড়পুর আদিবাসী উচ্চ বিদ্যালয়ের’ সহকারী প্রধান শিক্ষক ছিলেন। তার বাড়ি উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নের চাকলা গ্রামে। এ নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

জানা গেছে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে ১৭ মার্চ থেকে উপজেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে শেরপুর উচ্চ বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

বিদ্যালয় বন্ধ থাকার মধ্যে ২৪ মার্চ নিয়োগ বোর্ড দেখিয়ে মিজানুর রহমানকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় গোপনে ভুয়া নিয়োগ বোর্ড গঠন করে এ নিয়োগ দেয়া হয়।

যেখানে নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি ছিলেন বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি দুলাল হোসেন, সদস্য সচিব ছিলেন সদ্যবিদায়ী ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেম, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এটিএম জিল্লুর রহমান, ডিজির প্রতিনিধি নওগাঁ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা নিলিমা আক্তার এবং নুনুজ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রশিদ।

শেরপুর গ্রামের বাসিন্দা একই বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক ফেরদৌস হোসেন, সহ-গ্রন্থাগারিক আব্দুস সামাদ ও পিয়ন নাজমুল জানান, ২৪ মার্চ স্কুল বন্ধ ছিল। করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে লকডাউন চলছিল।

তাই স্কুল খোলা হয়নি। যেহেতু স্কুল বন্ধ ছিল, তাই নিয়োগের কোনো কাজই স্কুলে করা হয়নি।

ভুয়া নিয়োগের রেজুলেশনে কেন স্বাক্ষর করলেন এমন প্রশ্নের জবাবে বিদ্যালয়ের সদ্যবিদায়ী ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেম বলেন, ২৪ মার্চ করোনারভাইরাসের সংক্রমণের কারণে স্কুল বন্ধ ছিল। শুধু বিদ্যালয় কেন, কোনো জায়গায় ওই দিন নিয়োগ বোর্ড গঠন করা হয়নি। ভুয়া বোর্ড গঠন করে আলাদা আলাদাভাবে সবার স্বাক্ষর নেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, যদি রেজুলেশনে স্বাক্ষর না করতাম তাহলে অবসরে যাওয়ার পর শিক্ষক মিজানুর রহমান আমার অবসর ফাইলে স্বাক্ষর করবে না বলে হুমকি দেন।

বাধ্য হয়ে এপ্রিল মাসের শেষের দিকে রাস্তায় দাঁড়িয়ে তারিখ না দিয়ে স্বাক্ষর করেছি। তবে নিয়োগের বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। কিছু জানার থাকলে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।

নিয়োগপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান বলেন, নিয়োগের বিষয়টি নিয়োগ কমিটির। যথাযথভাবে নিয়োগ হয়েছে। গত ১০ মে বিদ্যালয়ে যোগদান করেছি।

তবে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আবুল কাশেমকে হুমকি দেয়ার প্রশ্নই আসে না। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখাতে বললে অপারগতা প্রকাশ করেন তিনি।

বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি দুলাল হোসেন ভুয়া নিয়োগ বোর্ডের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ২৪ মার্চ স্কুলে নিয়োগ বোর্ড বসানো হয়েছিল। সেখানে কতজন প্রার্থী ছিলেন তা জানাতে পারেননি তিনি।

ডিজির প্রতিনিধি নওগাঁ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিলিমা আক্তার বলেন, নিয়োগ প্রক্রিয়ার দিনে বিদ্যালয়ে যথাযথভাবে পরীক্ষা এবং নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়।

বদলগাছী মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এটিএম জিল্লুর রহমান বলেন, পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেখে এবং বিধি মোতাবেক নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে।

এসব নিয়োগ স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি আগে থেকে ঠিক করে রাখে। আমরা শুধু আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে যাই। একজন প্রধান শিক্ষক নিয়োগ পেতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়।

ট্যাগস

বদলগাছীতে প্রধান শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি

আপডেট সময় ০৭:৫৭:২৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২০

স্টাফ রিপোর্টার, নওগাঁ: নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার শেরপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে ভুয়া নিয়োগ বোর্ড গঠন করে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও নিয়োগ কমিটির বিরুদ্ধে।

করোনভাইরাস সংক্রমণের মধ্যে বিদ্যালয় বন্ধ থাকার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিমিয়ে গোপনে মিজানুর রহমান নামে একজনকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

তিনি উপজেলার ‘পাহাড়পুর আদিবাসী উচ্চ বিদ্যালয়ের’ সহকারী প্রধান শিক্ষক ছিলেন। তার বাড়ি উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নের চাকলা গ্রামে। এ নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

জানা গেছে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে ১৭ মার্চ থেকে উপজেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে শেরপুর উচ্চ বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

বিদ্যালয় বন্ধ থাকার মধ্যে ২৪ মার্চ নিয়োগ বোর্ড দেখিয়ে মিজানুর রহমানকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় গোপনে ভুয়া নিয়োগ বোর্ড গঠন করে এ নিয়োগ দেয়া হয়।

যেখানে নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি ছিলেন বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি দুলাল হোসেন, সদস্য সচিব ছিলেন সদ্যবিদায়ী ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেম, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এটিএম জিল্লুর রহমান, ডিজির প্রতিনিধি নওগাঁ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা নিলিমা আক্তার এবং নুনুজ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রশিদ।

শেরপুর গ্রামের বাসিন্দা একই বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক ফেরদৌস হোসেন, সহ-গ্রন্থাগারিক আব্দুস সামাদ ও পিয়ন নাজমুল জানান, ২৪ মার্চ স্কুল বন্ধ ছিল। করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে লকডাউন চলছিল।

তাই স্কুল খোলা হয়নি। যেহেতু স্কুল বন্ধ ছিল, তাই নিয়োগের কোনো কাজই স্কুলে করা হয়নি।

ভুয়া নিয়োগের রেজুলেশনে কেন স্বাক্ষর করলেন এমন প্রশ্নের জবাবে বিদ্যালয়ের সদ্যবিদায়ী ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেম বলেন, ২৪ মার্চ করোনারভাইরাসের সংক্রমণের কারণে স্কুল বন্ধ ছিল। শুধু বিদ্যালয় কেন, কোনো জায়গায় ওই দিন নিয়োগ বোর্ড গঠন করা হয়নি। ভুয়া বোর্ড গঠন করে আলাদা আলাদাভাবে সবার স্বাক্ষর নেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, যদি রেজুলেশনে স্বাক্ষর না করতাম তাহলে অবসরে যাওয়ার পর শিক্ষক মিজানুর রহমান আমার অবসর ফাইলে স্বাক্ষর করবে না বলে হুমকি দেন।

বাধ্য হয়ে এপ্রিল মাসের শেষের দিকে রাস্তায় দাঁড়িয়ে তারিখ না দিয়ে স্বাক্ষর করেছি। তবে নিয়োগের বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। কিছু জানার থাকলে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।

নিয়োগপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান বলেন, নিয়োগের বিষয়টি নিয়োগ কমিটির। যথাযথভাবে নিয়োগ হয়েছে। গত ১০ মে বিদ্যালয়ে যোগদান করেছি।

তবে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আবুল কাশেমকে হুমকি দেয়ার প্রশ্নই আসে না। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখাতে বললে অপারগতা প্রকাশ করেন তিনি।

বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি দুলাল হোসেন ভুয়া নিয়োগ বোর্ডের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ২৪ মার্চ স্কুলে নিয়োগ বোর্ড বসানো হয়েছিল। সেখানে কতজন প্রার্থী ছিলেন তা জানাতে পারেননি তিনি।

ডিজির প্রতিনিধি নওগাঁ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিলিমা আক্তার বলেন, নিয়োগ প্রক্রিয়ার দিনে বিদ্যালয়ে যথাযথভাবে পরীক্ষা এবং নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়।

বদলগাছী মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এটিএম জিল্লুর রহমান বলেন, পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেখে এবং বিধি মোতাবেক নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে।

এসব নিয়োগ স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি আগে থেকে ঠিক করে রাখে। আমরা শুধু আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে যাই। একজন প্রধান শিক্ষক নিয়োগ পেতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়।