নাটোর প্রতিনিধি: নাটোরের লালপুরে সরকারি হটলাইন ‘৩৩৩’ নম্বরে ফোন করে ত্রাণ সহায়তা চাওয়ায় শহিদুল ইসলাম (৫৫) নামে এক দিনমজুরকে মারধরের ঘটনায় ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুস সাত্তারকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
শুক্রবার (১৭ এপ্রিল) সকাল ১০টার দিকে অভিযান চালিয়ে পাবনার ঈশ্বরদী এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। পরে দুপুর ১২টার দিকে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান, পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা।
এরআগে, ১৫ এপ্রিল ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুস সাত্তারসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন ভুক্তভোগি দিনমজুর শহিদুল ইসলাম।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, লালপুরের ৯ নম্বর অর্জুনপুর বরমহাটি (এবি) ইউনিয়নের আঙ্গারিপাড়া গ্রামের দিনমজুর শহিদুল ইসলামসহ প্রায় ২০০ জন মানুষ করোনা ভাইরাসের প্রভাবে বেকার হয়ে পড়েন। গণমাধ্যমের মাধ্যমে শহিদুল জানতে পেরে গত ১০ এপ্রিল সরকারি হটলাইন নম্বর ৩৩৩ এ ফোন করে খাদ্য সহায়তা চান।
এরপর সেখান থেকে সহায়তার আশ্বাস মেলে। ৩৩৩ এর মাধ্যমে অবগত হয়ে স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অর্জনপুর-বরমহাটী ইউপি চেয়ারম্যানকে ওই এলাকায় ত্রাণ সহায়তার নির্দেশ দেন।
এর দুইদিন পর গত ১২ এপ্রিল স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান এবং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুস সাত্তার গ্রাম পুলিশ দিয়ে ডেকে এনে কৃষক শহিদুল ইসলামকে ইউপি কার্যালয়ের ভেতর নিজেই লাঠি দিয়ে মারধর করেন।
এ সময় চেয়ারম্যান বলেন, ৩৩৩ নম্বরে ফোন করায় এলাকার সম্মান নষ্ট হয়েছে। এ ঘটনা বাহিরের কাউকে জানালে তোকে আরও শাস্তি দেওয়া হবে।
পরে ঘটনাটি স্থানীয়রা জানতে পেরে উপজেলা প্রশাসনকে বলেন। খবর পেয়ে ইউএনও উম্মুল বানীন দ্যুতি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং চেয়ারম্যানকে তিনদিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন।
কিন্তু তার জবাব দেননি চেয়ারম্যান। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয় এবং দেশজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। তবে দিনমজুর শহিদুলের পরিবর্তে অন্য একটি রক্তাক্ত ছবি ভাইরাল হয়।
এঘটনায় গত মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) বুধবার দিনমজুর শহিদুল ইসলাম বাদি হয়ে চেয়ারম্যান আব্দুস সাত্তার, মেম্বার রেজাউল ও গ্রাম পুলিশ রুবেলের নাম উল্লেখ করে লালপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
এরপর থেকেই চেয়ারম্যান ও তার দুই সহযোগী পলাতক ছিলেন। মামলা দায়েরের পর পুলিশ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে পাবনার ঈশ্বরদী থেকে চেয়ারম্যানকে গ্রেফতার করে। তার দুই সহযোগীকে ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
এ ব্যাপারে নাটোর স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক (ডিডিএলজি) গোলাম রাব্বি জানান, অভিযুক্ত চেয়ারম্যান ক্ষমতার অপব্যবহার ও জনস্বার্থ বিরোধী কাজে লিপ্ত থাকার অভিযোগে বরখাস্তের প্রস্তাবনা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।