সিলেট প্রতিনিধিঃ বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলছে। বাংলাদেশে আক্রান্ত হয়েছে ২৭ এবং দুইজনের মৃত্যু হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে সরকার। এরই মাঝে সিলেটে করোনা আক্রান্তের বিভিন্ন লক্ষণ নিয়ে মারা গেছেন যুক্তরাজ্য ফেরত ষাটোর্ধ্ব এক নারী।
ছোঁয়াচে হওয়ায় করোনা আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে না যাওয়া এবং জ্বর, সর্দি-কাশি হলে স্বেচ্ছায় হোম কোয়ারেন্টিন, হ্যান্ডশেক, কোলাকুলি এড়িয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। সরকারের পক্ষ থেকেও জনসচেতনায় নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন পদক্ষেপ।
কিন্তু এতকিছুর পরও আবেগে ভুল করে মানুষ। নিয়ে যায় বিপদের দরজায়। আর সে ভুল তখন পুরো পরিবার, সমাজ এমনকি জাতির জন্য বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। দিতে হয় এর খেসারতও। যার উদহারণ পুরো বিশ্ব।
শত নিষেধাজ্ঞা, কড়াকড়ির পরও সিলেটে করোনা সন্দেহে আইসোলেশনে থাকা মৃত নারীর দাফনে দেখা গেল উৎসুক মানুষেরি ভিড়। আর তা মরদেহ থেকে নিশ্বাস দূরত্বের।
দুপুর সোয়া একটার দিকে সিলেট সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগের তত্ত্বাবধানে এবং যথাযথ নিয়ম মেনে মানিক পীর (র.) মাজার সংলগ্ন কবরস্থানে ওই নারীর দাফন সম্পন্ন হয়।
এ সময় সিসিক-এর কর্মীদের সুরক্ষিত পোশাক পরতে দেখা গেলেও অন্যদের ক্ষেত্রে সে ব্যবস্থা দেখা যায়নি। অথচ সেখানে অন্যদের যাওয়ার কথাও নয়। কিন্তু ওই নারীর দাফনকালে উৎসুক জনতা কবরস্থানে প্রবেশ করেন।
এমনকি পুলিশ সদস্যদেরও মরদেহ বহনকরা অ্যাম্বুলেন্স থেকে খানিকটা দূরে অবস্থান করতে দেখা গেছে। উৎসুক জনতার অনেকে কাছ থেকে গিয়ে ভিডিওচিত্র ধারণ ও ছবি তুলেছেন। সাধারণ মানুষের এমন আচরণে অবাক করেছে খোদ সিটি করপোরেশনের কর্মীরাও।
সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা সব কিছু সঠিক নিয়মে করেছি। কিন্তু উৎসুক জনতাকে আমরা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারিনি। কয়েকজন দাফনের সময়ও ঢুকে পড়েন কবরস্থানে। তারা জেনেও ভুল করেছেন।
এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সবাইকে সচেতন ও সতর্ক থাকতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
যোগাযোগ করা হলে স্বাস্থ্য অধিদফতর সিলেটের সহকারী পরিচালক আনিসুর রহমান বলেন, রোববার বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে করোনা ভাইরাস নিয়ে অনুষ্ঠিত জরুরি সভায় ওই নারীর দাফনকালে লোক সমাগম বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
‘যদিও আমরা সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ও সুরক্ষিত অবস্থায় মরদেহ দাফনের জন্য নিয়েছি। তারপরও জনসাধারণের প্রবেশ করা উচিত হয়নি। এক্ষেত্রে সাধারণ মানুষকেও সচেতন হওয়া জরুরি। তাছাড়া যাদের স্বজন মারা গেছে, তাদের অবস্থার কথা চিন্তা করে ছবি ও ভিডিওচিত্র ধারণ থেকে বিরত থাকা দরকার।
সংশ্লিষ্টরা জানান, করোনা সন্দেহে ওই নারীর মৃত্যু হয়েছে, এমনটি ধারণা করা হচ্ছে। মৃত নারীর ব্লাড সেম্পল ঢাকায় আইইডিসিআরে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। ততক্ষণ পর্যন্ত চিকিৎসকরা মৃতৃ নারীর রোগ ছড়ানো নিয়েও শঙ্কিত রয়েছেন।
কেননা তিনি যদি করোনা আক্রান্ত হন, তাহলে তার বাসায় এবং অন্যত্র যাদের সঙ্গে মিশেছেন তাদেরও আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে সিলেটের স্থাস্থ্য বিভাগের একটি সূত্র জানায়, মৃত নারীর পরিবারের সদস্যদেরও কোয়ারেন্টিনে রাখা হবে।