ঘূর্ণিঝড় হামুনের কারণে চট্টগ্রাম বন্দরে আজ সকালে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সতর্কতা ‘অ্যালার্ট-৩’ জারি করা হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর চট্টগ্রাম ও পায়রা বন্দরে ৭ নম্বর বিপৎসংকেত দেখাতে বলার পর এই সতর্কতা জারি করা হয়।
বন্দরের ‘অ্যালার্ট-৩’ জারির পর নিয়ম অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় পুরোদমে প্রস্তুতি নিতে হয়। জেটি থেকে সব জাহাজ সাগরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ঝড়ের সময় প্রচণ্ড বাতাস ও ঢেউয়ের তোড়ে জাহাজের ধাক্কায় জেটি যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে জন্য এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এ ছাড়া বন্দরের যন্ত্রপাতি ও স্থাপনা সুরক্ষায় নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বন্দরে দ্বিতীয় মাত্রায় সতর্কসংকেত জারি করার পর প্রথম কাজ হলো, জেটি থেকে জাহাজ সরিয়ে সাগরে নেওয়া। সাগর থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ আসা-যাওয়া করে জোয়ারের সময়। সকাল সাড়ে নয়টার পর সতর্কতা জারি করার সময় ভাটা শুরু হয়। ফলে খুব দ্রুত জাহাজ সরিয়ে নেওয়া যায়নি। তবে আজ বিকেলে জোয়ারের সময় জেটি থেকে জাহাজ সরিয়ে নেওয়া হবে। এখন সেই প্রস্তুতি চলছে।
জানতে চাইলে বন্দর সচিব মো. ওমর ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, জেটিতে এখন ২২টি জাহাজ রয়েছে। বিকেলের জোয়ারে এসব জাহাজ জেটি থেকে সরিয়ে নেওয়া হবে। তবে এখনই বন্দরের কনটেইনার ও পণ্য ওঠানো-নামানোর ক্রেন, পণ্য রাখা ছাউনি সুরক্ষিত করা হচ্ছে। ওমর ফারুক আলম জানান, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব মোকাবিলায় যেসব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে, তা পর্যালোচনা করতে এখন এ–সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির বৈঠক হচ্ছে।
১৯৯২ সালে বন্দর কর্তৃপক্ষ প্রণীত ঘূর্ণিঝড়-দুর্যোগ প্রস্তুতি ও ঘূর্ণিঝড়-পরবর্তী পুনর্বাসন পরিকল্পনা অনুযায়ী, আবহাওয়া অধিদপ্তরের সংকেত অনুসারে চার ধরনের সতর্কতা জারি করে বন্দর। আবহাওয়া অধিদপ্তর ৩ নম্বর সংকেত জারি করলে বন্দর প্রথম পর্যায়ের সতর্কতা বা ‘অ্যালার্ট-১’ জারি করে। আবহাওয়া অধিদপ্তর ৪ নম্বর সংকেত জারি করলে বন্দর ‘অ্যালার্ট-২’ জারি করে।
বিপৎসংকেত ৫, ৬ ও ৭ নম্বরের জন্য বন্দরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সতর্কতা ‘অ্যালার্ট-৩’ জারি করা হয়। মহা বিপৎসংকেত ৮, ৯ ও ১০ হলে বন্দরে সর্বোচ্চ সতর্কতা ‘অ্যালার্ট-৪’ জারি করা হয়।
আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’ আগামীকাল বুধবার সকাল থেকে দুপুর নাগাদ ভোলার কাছ দিয়ে বরিশাল-চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করতে পারে। আজ সকাল ৯টায় চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ৪৪৫ কিলোমিটার পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল এটি। ঘূর্ণিঝড়টি মোংলা বন্দর থেকে ৩২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। পায়রা বন্দর থেকে ৩১০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে। কক্সবাজার থেকে ৪১০ কিলোমিটার পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল ‘হামুন’।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার, যা দমকা বা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ১১০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছে। প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রের কাছে সাগর বিক্ষুব্ধ রয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় দমকা বা ঝোড়ো হাওয়াসহ ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে।
প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে। অতি ভারী বৃষ্টির প্রভাবে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলের কোথাও কোথাও ভূমিধস হতে পারে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা-ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।