ঢাকা ০২:৩৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সৌদি প্রবাসি রমজান ও বারেক’র পরিবারে নেমে এসেছে শোকের ছায়া

অনেক ধার দেনা নিয়ে তারা সৌদিতে যান ভাগ্যের চাকা ঘুড়তে। ফিরবে সংসারে স্বচ্ছলতা নিয়ে। কিন্ত সব শেষ, এখন চলছে স্বজনদের বিলাপ। সৌদি আরবের একটি আসবাবপত্রের কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে নিহত দুইজনের বাড়ি নওগাঁর আত্রাই উপজেলায়।

তারা হলেন উপজেলার শাহাগোলা ইউনিয়নের ঝনঝনিয়া গ্রামের মৃত আজিজার প্রামাণিকের ছেলে রমজান আলী (৩৩) ও বিষা ইউনিয়নের উদয়পুর মণ্ডলপাড়া গ্রামের মৃত রহমান সরদারের ছেলে আব্দুল বারেক সরদার (৪৫)।
সংসারে সচ্ছলতা আনতে চার বছর আগে ঋণ করে সৌদি পাড়ি জমান রমজান আলী।

৯ বছর আগে রমজানের বাবা মারা যান। তারা দুই ভাই ও এক বোন। ভাইবোনের মধ্যে দ্বিতীয় রমজান। সবার ছোট ভাই ইমরান। তিনি সম্প্রতি মালয়েশিয়াতে পাড়ি জমিয়েছেন। আর রমজানের স্বামী পরিত্যক্তা বোন তার শিশু সন্তানকে নিয়ে মায়ের বাড়িতে থাকেন। সংসারের সব খরচ রমজান বহন করতেন।

কিন্তু শুক্রবার (১৪ জুলাই) বিকেলে রিয়াদ থেকে প্রায় সাড়ে তিনশো কিলোমিটার দূরে হুফুফ শহরের একটি সোফা তৈরির কারখানায় আকস্মিক আগুন লাগে। এতে কারখানাটির ভেতর আটকা পড়ে রমজান আলী ও আব্দুল বারেক সরদারসহ ৯ জন শ্রমিক নিহত হন। তাদের মধ্যে সাতজনই বাংলাদেশি।

রমজানের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, নিহতের স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে চারপাশ। প্রতিবেশীরা তাদের সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। রমজান আলীর মা রহিমা বেগম বলেন, দুইদিন আগেও ভিডিও কলে ছেলের (রমজান) সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, শুক্রবারের ঘটনা হলেও শনিবার সকালে ছেলে আগুনে মারা যাওয়ার বিষয়টি জানতে পারি। কেউ আমাকে খবরটা দেয়নি। তবে অনেকে জানতো। বেলা ১১টার দিকে খবর পাই। ছেলে বাড়ি করবে বলে অন্য কোনো কাজে টাকা খরচ করেনি। বিয়ে করে নতুন বাড়িতে ছেলের থাকার কথা ছিল। কিন্তু আর হলো না। আমার সব শেষ হয়ে গেলো।

এদিকে, সংসারে সচ্ছলতা আনতে ১২ বছর আগে সৌদি আরবে পাড়ি-জমান আব্দুল বারেক সরদার। দুই বছর আগে স্ট্রোক করে অচল হয়ে যান তিনি। দীর্ঘ দেড় বছর চিকিৎসা শেষে পুনরায় সৌদি আরবের ওই সোফা কারখানায় কাজ শুরু করেন তিনি। কিন্তু অগ্নিকাণ্ডে নিহত হন বারেকও।

নিহত বারেকের বড় ভাই শাহাদাত হোসেন বলেন, সবশেষ গত ২০২০ সালে ভাই বাড়িতে এসেছিলেন। এরপর আবারো যান সৌদি আরব। তার দুই মেয়ে আছে।

ওই পরিবারের বারেক ছিল একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। এভাবে তার চলে যাওয়া কিছুতেই মানতে পারছি না। বড় মেয়েটার বিয়ে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে এক মেয়েকে নিয়ে বারেকের স্ত্রী বাড়িতে থাকে।

আত্রাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ইকতেখারুল ইসলাম বলেন, সৌদিতে অগ্নিকাণ্ডে আমাদের উপজেলার দুইজন মারা যাওয়ার তথ্য পেয়েছি। তাদের মরদেহ দেশে আনার বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

ট্যাগস

আলিশান চাল, নওগাঁ

বিজ্ঞাপন দিন

সৌদি প্রবাসি রমজান ও বারেক’র পরিবারে নেমে এসেছে শোকের ছায়া

আপডেট সময় ০৮:৪০:১২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ জুলাই ২০২৩

অনেক ধার দেনা নিয়ে তারা সৌদিতে যান ভাগ্যের চাকা ঘুড়তে। ফিরবে সংসারে স্বচ্ছলতা নিয়ে। কিন্ত সব শেষ, এখন চলছে স্বজনদের বিলাপ। সৌদি আরবের একটি আসবাবপত্রের কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে নিহত দুইজনের বাড়ি নওগাঁর আত্রাই উপজেলায়।

তারা হলেন উপজেলার শাহাগোলা ইউনিয়নের ঝনঝনিয়া গ্রামের মৃত আজিজার প্রামাণিকের ছেলে রমজান আলী (৩৩) ও বিষা ইউনিয়নের উদয়পুর মণ্ডলপাড়া গ্রামের মৃত রহমান সরদারের ছেলে আব্দুল বারেক সরদার (৪৫)।
সংসারে সচ্ছলতা আনতে চার বছর আগে ঋণ করে সৌদি পাড়ি জমান রমজান আলী।

৯ বছর আগে রমজানের বাবা মারা যান। তারা দুই ভাই ও এক বোন। ভাইবোনের মধ্যে দ্বিতীয় রমজান। সবার ছোট ভাই ইমরান। তিনি সম্প্রতি মালয়েশিয়াতে পাড়ি জমিয়েছেন। আর রমজানের স্বামী পরিত্যক্তা বোন তার শিশু সন্তানকে নিয়ে মায়ের বাড়িতে থাকেন। সংসারের সব খরচ রমজান বহন করতেন।

কিন্তু শুক্রবার (১৪ জুলাই) বিকেলে রিয়াদ থেকে প্রায় সাড়ে তিনশো কিলোমিটার দূরে হুফুফ শহরের একটি সোফা তৈরির কারখানায় আকস্মিক আগুন লাগে। এতে কারখানাটির ভেতর আটকা পড়ে রমজান আলী ও আব্দুল বারেক সরদারসহ ৯ জন শ্রমিক নিহত হন। তাদের মধ্যে সাতজনই বাংলাদেশি।

রমজানের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, নিহতের স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে চারপাশ। প্রতিবেশীরা তাদের সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। রমজান আলীর মা রহিমা বেগম বলেন, দুইদিন আগেও ভিডিও কলে ছেলের (রমজান) সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, শুক্রবারের ঘটনা হলেও শনিবার সকালে ছেলে আগুনে মারা যাওয়ার বিষয়টি জানতে পারি। কেউ আমাকে খবরটা দেয়নি। তবে অনেকে জানতো। বেলা ১১টার দিকে খবর পাই। ছেলে বাড়ি করবে বলে অন্য কোনো কাজে টাকা খরচ করেনি। বিয়ে করে নতুন বাড়িতে ছেলের থাকার কথা ছিল। কিন্তু আর হলো না। আমার সব শেষ হয়ে গেলো।

এদিকে, সংসারে সচ্ছলতা আনতে ১২ বছর আগে সৌদি আরবে পাড়ি-জমান আব্দুল বারেক সরদার। দুই বছর আগে স্ট্রোক করে অচল হয়ে যান তিনি। দীর্ঘ দেড় বছর চিকিৎসা শেষে পুনরায় সৌদি আরবের ওই সোফা কারখানায় কাজ শুরু করেন তিনি। কিন্তু অগ্নিকাণ্ডে নিহত হন বারেকও।

নিহত বারেকের বড় ভাই শাহাদাত হোসেন বলেন, সবশেষ গত ২০২০ সালে ভাই বাড়িতে এসেছিলেন। এরপর আবারো যান সৌদি আরব। তার দুই মেয়ে আছে।

ওই পরিবারের বারেক ছিল একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। এভাবে তার চলে যাওয়া কিছুতেই মানতে পারছি না। বড় মেয়েটার বিয়ে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে এক মেয়েকে নিয়ে বারেকের স্ত্রী বাড়িতে থাকে।

আত্রাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ইকতেখারুল ইসলাম বলেন, সৌদিতে অগ্নিকাণ্ডে আমাদের উপজেলার দুইজন মারা যাওয়ার তথ্য পেয়েছি। তাদের মরদেহ দেশে আনার বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।