ঢাকা ০৪:৫৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নওগাঁয় ৫ দফা দাবিতে আদিবাসী’দের সড়ক অবরোধ

দেশের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীরকে আদিবাসী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি, সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক ভূমি কমিশনসহ সাত দফা দাবিতে নওগাঁয় সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে জাতীয় আদিবাসী পরিষদ।

রোববার (৯ জুলাই) দুপুরে নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার চৌমাশিয়া গোলচত্বর এলাকায় রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়কে এই কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।

সংগঠনটির পূবঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাজশাহী বিভাগের আটটি জেলার ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষ এই কর্মসূচিতে অংশ নেন। তাদের অন্যান্য দাবিগুলো হচ্ছে, সরকারি চাকরিতে আদিবাসীদের কোটা পুনর্বহাল করা, গাইবান্ধার সাহেবগঞ্জের বাগদা ফার্মে তিন আদিবাসী হত্যার বিচার ও রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে সেচের পানি না পেয়ে দুই আদিবাসীর আত্মহত্যার প্ররোচনাকারীদের বিচার, সারাদেশে আদিবাসীদের ওপর হত্যা, নির্যাতন, হয়রানি বন্ধ করা এবং আদিবাসীদের নামে বরাদ্দকৃত টাকা আত্মসাৎ ও ভূমি অফিসের দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে।

 

দুপুর ১২টায় কর্মসূচি শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সকাল থেকেই বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী মানুষ বিভিন্ন পরিবহনে করে চৌমাশিয়া বাজারে আসতে শুরু করেন। গাড়ি থেকে নেমে তাঁরা খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে চৌমাশিয়া তিন মাথার মোড় গোল চত্বর এলাকায় সমাবেশস্থল এসে মিলিত হন। পুরে ১২টার দিকে সমাবেশস্থল এলাকাভিত্তিক পৃথক পৃথক ব্যানারে সাত দফা দাবি বাস্তবায়নের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়।

মিছিলগুলো চৌমাশিয়া বাজারের গোল চত্বরের চারপাশের সড়ক প্রদক্ষিণ করে। মিছিল শেষে আন্দোলনকারীরা নওগাঁ-রাজশাহী ও নওগাঁ-মহাদেবপুর সড়ক অবরোধ করে। অবরোধ চলাকালে জাতীয় আদিবাসী পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেনের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের উপদেষ্টা আরিফ খান ইউসুফজাই, বাসদ নওগাঁ জেলা কমিটির আহবায়ক জয়নাল আবেদিন মুকুল, ওয়ার্কার্স পার্টি নওগাঁ জেলা শহীদ হাসান সিদ্দিকী স্বপন, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের মুখপাত্র ও দপ্তর সম্পাদক সুভাষ চন্দ্র হেমব্রম, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মার্টিন মুর্মু, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ নওগাঁ জেলা কমিটির আহবায়ক নরেন্দ্র চন্দ্র পাহান প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চৌদ্দ দলীয় জোটের অন্যান্য নেতারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এ দেশের সমতল ও পাহাড়ে বসবাসরত আদিবাসীদের আদিবাসী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেবেন। কিন্তু তাঁরা সেই প্রতিশ্রুতি ভুলে গেছেন। উল্টো প্রজ্ঞাপন জারি করে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী হিসেবে উল্লেখ করে আদিবাসীদের ছোট করা হয়েছে। স্বাধীনতার এত বছর তাঁরা আর নিজেদের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী হিসেবে নিজেদের পরিচয় দিতে চান না। আদিবাসী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দাবিসহ আদিবাসীদের অন্যান্য প্রাণের দাবি মানছে না সরকার।

রবীন্দ্রনাথ সরেন বলেন, বর্তমান সরকার প্রধান ও ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বিভিন্ন সময় নিজেদের সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীবান্ধব বলে দাবি করে থাকেন। কিন্তু বাস্তবে তাঁরা পালন করছে না। স্বাধীন দেশেও বছরের পর বছর ধরে আদিবাসীরা নির্যাতিত হয়ে আসছে, প্রভাবশালীরা তাঁদের জমি কেড়ে নিয়ে বাস্তচ্যুত্ত করছে কিন্তু সরকারের কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়ে না। আদিবাসীদের অধিকাংশ সমস্যা ভূমিকে কেন্দ্র করে। তাই অনতিবিলম্বে সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন ও পৃথক মন্ত্রণালয় গঠন করতে হবে।

সড়ক অবরোধ কর্মসূচি চলার সময় নওগাঁ- রাজশাহী ও নওগাঁ-মহাদেবপুর সড়কে গাড়ির জট লেগে যায়। গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক রাখতে সমাবেশস্থলে বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্যকে কাজ করতে দেখা যায়।

ট্যাগস
সর্বাধিক পঠিত

আলিশান চাল, নওগাঁ

বিজ্ঞাপন দিন

নওগাঁয় ৫ দফা দাবিতে আদিবাসী’দের সড়ক অবরোধ

আপডেট সময় ০৮:০৮:৪৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ৯ জুলাই ২০২৩

দেশের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীরকে আদিবাসী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি, সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক ভূমি কমিশনসহ সাত দফা দাবিতে নওগাঁয় সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে জাতীয় আদিবাসী পরিষদ।

রোববার (৯ জুলাই) দুপুরে নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার চৌমাশিয়া গোলচত্বর এলাকায় রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়কে এই কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।

সংগঠনটির পূবঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাজশাহী বিভাগের আটটি জেলার ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষ এই কর্মসূচিতে অংশ নেন। তাদের অন্যান্য দাবিগুলো হচ্ছে, সরকারি চাকরিতে আদিবাসীদের কোটা পুনর্বহাল করা, গাইবান্ধার সাহেবগঞ্জের বাগদা ফার্মে তিন আদিবাসী হত্যার বিচার ও রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে সেচের পানি না পেয়ে দুই আদিবাসীর আত্মহত্যার প্ররোচনাকারীদের বিচার, সারাদেশে আদিবাসীদের ওপর হত্যা, নির্যাতন, হয়রানি বন্ধ করা এবং আদিবাসীদের নামে বরাদ্দকৃত টাকা আত্মসাৎ ও ভূমি অফিসের দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে।

 

দুপুর ১২টায় কর্মসূচি শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সকাল থেকেই বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী মানুষ বিভিন্ন পরিবহনে করে চৌমাশিয়া বাজারে আসতে শুরু করেন। গাড়ি থেকে নেমে তাঁরা খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে চৌমাশিয়া তিন মাথার মোড় গোল চত্বর এলাকায় সমাবেশস্থল এসে মিলিত হন। পুরে ১২টার দিকে সমাবেশস্থল এলাকাভিত্তিক পৃথক পৃথক ব্যানারে সাত দফা দাবি বাস্তবায়নের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়।

মিছিলগুলো চৌমাশিয়া বাজারের গোল চত্বরের চারপাশের সড়ক প্রদক্ষিণ করে। মিছিল শেষে আন্দোলনকারীরা নওগাঁ-রাজশাহী ও নওগাঁ-মহাদেবপুর সড়ক অবরোধ করে। অবরোধ চলাকালে জাতীয় আদিবাসী পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেনের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের উপদেষ্টা আরিফ খান ইউসুফজাই, বাসদ নওগাঁ জেলা কমিটির আহবায়ক জয়নাল আবেদিন মুকুল, ওয়ার্কার্স পার্টি নওগাঁ জেলা শহীদ হাসান সিদ্দিকী স্বপন, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের মুখপাত্র ও দপ্তর সম্পাদক সুভাষ চন্দ্র হেমব্রম, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মার্টিন মুর্মু, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ নওগাঁ জেলা কমিটির আহবায়ক নরেন্দ্র চন্দ্র পাহান প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চৌদ্দ দলীয় জোটের অন্যান্য নেতারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এ দেশের সমতল ও পাহাড়ে বসবাসরত আদিবাসীদের আদিবাসী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেবেন। কিন্তু তাঁরা সেই প্রতিশ্রুতি ভুলে গেছেন। উল্টো প্রজ্ঞাপন জারি করে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী হিসেবে উল্লেখ করে আদিবাসীদের ছোট করা হয়েছে। স্বাধীনতার এত বছর তাঁরা আর নিজেদের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী হিসেবে নিজেদের পরিচয় দিতে চান না। আদিবাসী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দাবিসহ আদিবাসীদের অন্যান্য প্রাণের দাবি মানছে না সরকার।

রবীন্দ্রনাথ সরেন বলেন, বর্তমান সরকার প্রধান ও ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বিভিন্ন সময় নিজেদের সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীবান্ধব বলে দাবি করে থাকেন। কিন্তু বাস্তবে তাঁরা পালন করছে না। স্বাধীন দেশেও বছরের পর বছর ধরে আদিবাসীরা নির্যাতিত হয়ে আসছে, প্রভাবশালীরা তাঁদের জমি কেড়ে নিয়ে বাস্তচ্যুত্ত করছে কিন্তু সরকারের কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়ে না। আদিবাসীদের অধিকাংশ সমস্যা ভূমিকে কেন্দ্র করে। তাই অনতিবিলম্বে সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন ও পৃথক মন্ত্রণালয় গঠন করতে হবে।

সড়ক অবরোধ কর্মসূচি চলার সময় নওগাঁ- রাজশাহী ও নওগাঁ-মহাদেবপুর সড়কে গাড়ির জট লেগে যায়। গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক রাখতে সমাবেশস্থলে বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্যকে কাজ করতে দেখা যায়।