ঢাকা ১১:৪২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ :
Logo আদানির বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি Logo ইউক্রেনের প্রথম আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ল রাশিয়া Logo সেনাকুঞ্জে খালেদা জিয়াকে সম্ভাষণ জানালেন ড. ইউনূস Logo সুমন হত্যা মামলার প্রধান আসামি বুলবুল গাজীপুর থেকে গ্রেপ্তার Logo সাফ চ্যাম্পিয়ন তিন নারী খেলোয়াড়কে সাতক্ষীরায় গণসংবর্ধনা Logo আপত্তিকর ভিডিও ধারণের অভিযোগ তিশার Logo আমরা সব রাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্ব বজায় রাখব : প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস Logo নতুন আইজিপি হিসেবে দায়িত্ব পেলেন বাহারুল আলম Logo সিরিয়ার ঐতিহ্যবাহী পালমিরা শহরে ইসরায়েলি ভয়াবহ হামলায়, নিহত ৩৬, আহত ৫০ Logo ঢাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধের নির্দেশ দেওয়ায় চালকদের বিক্ষোভ
বঙ্গবাজারে আগুন;

ঝুঁকিপূর্ণ জেনেও ব্যবস্থা নেয়নি কেউ

রাজধানীর বঙ্গবাজারে আগুন নিয়ন্ত্রনে ব্যস্ত ফায়ার সার্ভিস, বিজিবি, সেনা ও নৌ বহিনীর সদস্যরা (ছবি- অমৃত সেন)

ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ রাজধানীর বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সকে চার বছর আগেই অগ্নিনিরাপত্তার দিক থেকে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছিল। তখন ফায়ার সার্ভিস থেকে বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সে বেশ কিছু ব্যানারও টাঙানো হয়েছিল। সবাই জানত এই কমপ্লেক্স বড় ধরনের অগ্নিঝুঁকিতে রয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার ভয়াবহ আগুনে বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সের সব দোকান পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়ার পর সরকারের কোনো সংস্থাই এখন আর দায় নিতে চাইছে না।

বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন এলাকায় পড়েছে। পাশাপাশি লাগোয়া চারটি বিপণিবিতানের সমন্বিত নাম বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স। এর মালিকানায় রয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। সিটি করপোরেশনের হিসাবে, টিন-কাঠের অবকাঠামোতে তৈরি বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সে ২ হাজার ৯৬১টি দোকান রয়েছে। অথচ বাস্তবে দোকানের সংখ্যা ছিল প্রায় দ্বিগুণ। অপর দিকে এই বিপণিবিতানের মালিক সমিতির নেতারা যে যার সুবিধামতো দোকান বাড়িয়ে নেওয়ার পাশাপাশি কমপ্লেক্সের কিছু তৈরি করে নিয়েছিলেন।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সে আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ তদারকি করতে এসে গতকাল দুপুরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘২০১৯ সালের ২ এপ্রিল এই ভবনকে আমরা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছি এবং ব্যানার টাঙিয়েছি। এরপর ১০ বার নোটিশ দিয়েছি। ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে যা যা করা সম্ভব ছিল, আমরা করেছি। তারপরও এখানে ব্যবসা চলছে।’

সিটি করপোরেশনের নিয়ন্ত্রণে থাকা মার্কেটটি (বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স) যে ‘অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ’, তা জানিয়ে সংস্থাটিকে কোনো নোটিশ দেওয়া হয়েছে কি না এবং তাদের (করপোরেশন) গাফিলতির কারণেই এই অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে কি না, এমন প্রশ্নে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক মো. মাইন উদ্দিন বলেন, ‘এই প্রশ্নের উত্তর আমার কাছে নেই।

অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন বলছে, বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সের পুরোনো ভবনগুলো ভেঙে নতুন করে অবকাঠামো নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু দোকান মালিক সমিতির নেতাদের বাধার কারণে ঝুঁকিপূর্ণ টিনের ভবনগুলো ভেঙে নতুন করে ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি।

মাত্র কয়েক ঘন্টার আগুনে ধ্বংস স্তুপে পরিনত হয়েছে সম্পূর্ণ বঙ্গবাজার (ছবি- অমৃত সেন)

 

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগ সূত্র বলছে, সাবেক মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকনের সময়ে বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সটিকে স্টিলের অবকাঠামো দিয়ে ১০ তলা করতে দরপত্র আহ্বান করা হয়। এই কাজ করতে ঠিকাদারকে কার্যাদেশও (ভবন নির্মাণের অনুমতিপত্র) দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু দোকান মালিক সমিতির নেতারা উচ্চ আদালতে গিয়ে নির্মাণকাজের স্থগিতাদেশ নিয়ে আসেন

সিটি করপোরেশনের একাধিক সূত্র বলছে, বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সে নিয়ন্ত্রণ করতেন রাজনৈতিকভাবে প্রভাশালী কিছু ব্যবসায়ী। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ সব দলের নেতারা মিলেমিশে এই কমপ্লেক্স নিয়ন্ত্রণ করতেন। নতুন ভবন নির্মাণ করা হলে ব্যবসায়ী নেতাদের আধিপত্য কমে যাবে, তাই তাঁরা সেখানে নতুন করে ভবন নির্মাণ করতে দেননি।

উল্লেখ্য, বঙ্গবাজার মার্কেটে এর আগেও কমপক্ষে তিনবার বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এর মধ্যে ১৯৯৫ সালে একবার ভয়াবহ আগুনে পুরো বিপণিবিতান পুড়ে যায়। এ ছাড়া ২০১৮ সালেও একবার ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড হয়।

স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, ‘ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র নিজে একজন ব্যারিস্টার। তিনি কী কারণে এত দিন আইনিভাবে এবং রাজনৈতিকভাবে বিষয়টি মোকাবিলা করেননি। ঝুঁকিপূর্ণ জেনেও বঙ্গবাজারে অবৈধভাবে ব্যবসা করতে যাওয়ার ফলাফল কী, সেটি সেবাই দেখল। বহু মানুষ নিঃস্ব হলো, হাজার কোটি টাকার সম্পদ পুড়ে গেল। পুরান ঢাকায় একের পর এক অগ্নিকাণ্ডে জীবন ও সম্পদ ধ্বংস হচ্ছে। এভাবে চলতে পারে না। এর দায় কাউকে না কাউকে নিতে হবে।’

আদানির বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি

আলিশান চাল, নওগাঁ

বিজ্ঞাপন দিন

বঙ্গবাজারে আগুন;

ঝুঁকিপূর্ণ জেনেও ব্যবস্থা নেয়নি কেউ

আপডেট সময় ০১:০৬:২৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ এপ্রিল ২০২৩

ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ রাজধানীর বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সকে চার বছর আগেই অগ্নিনিরাপত্তার দিক থেকে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছিল। তখন ফায়ার সার্ভিস থেকে বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সে বেশ কিছু ব্যানারও টাঙানো হয়েছিল। সবাই জানত এই কমপ্লেক্স বড় ধরনের অগ্নিঝুঁকিতে রয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার ভয়াবহ আগুনে বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সের সব দোকান পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়ার পর সরকারের কোনো সংস্থাই এখন আর দায় নিতে চাইছে না।

বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন এলাকায় পড়েছে। পাশাপাশি লাগোয়া চারটি বিপণিবিতানের সমন্বিত নাম বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স। এর মালিকানায় রয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। সিটি করপোরেশনের হিসাবে, টিন-কাঠের অবকাঠামোতে তৈরি বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সে ২ হাজার ৯৬১টি দোকান রয়েছে। অথচ বাস্তবে দোকানের সংখ্যা ছিল প্রায় দ্বিগুণ। অপর দিকে এই বিপণিবিতানের মালিক সমিতির নেতারা যে যার সুবিধামতো দোকান বাড়িয়ে নেওয়ার পাশাপাশি কমপ্লেক্সের কিছু তৈরি করে নিয়েছিলেন।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সে আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ তদারকি করতে এসে গতকাল দুপুরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘২০১৯ সালের ২ এপ্রিল এই ভবনকে আমরা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছি এবং ব্যানার টাঙিয়েছি। এরপর ১০ বার নোটিশ দিয়েছি। ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে যা যা করা সম্ভব ছিল, আমরা করেছি। তারপরও এখানে ব্যবসা চলছে।’

সিটি করপোরেশনের নিয়ন্ত্রণে থাকা মার্কেটটি (বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স) যে ‘অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ’, তা জানিয়ে সংস্থাটিকে কোনো নোটিশ দেওয়া হয়েছে কি না এবং তাদের (করপোরেশন) গাফিলতির কারণেই এই অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে কি না, এমন প্রশ্নে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক মো. মাইন উদ্দিন বলেন, ‘এই প্রশ্নের উত্তর আমার কাছে নেই।

অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন বলছে, বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সের পুরোনো ভবনগুলো ভেঙে নতুন করে অবকাঠামো নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু দোকান মালিক সমিতির নেতাদের বাধার কারণে ঝুঁকিপূর্ণ টিনের ভবনগুলো ভেঙে নতুন করে ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি।

মাত্র কয়েক ঘন্টার আগুনে ধ্বংস স্তুপে পরিনত হয়েছে সম্পূর্ণ বঙ্গবাজার (ছবি- অমৃত সেন)

 

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগ সূত্র বলছে, সাবেক মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকনের সময়ে বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সটিকে স্টিলের অবকাঠামো দিয়ে ১০ তলা করতে দরপত্র আহ্বান করা হয়। এই কাজ করতে ঠিকাদারকে কার্যাদেশও (ভবন নির্মাণের অনুমতিপত্র) দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু দোকান মালিক সমিতির নেতারা উচ্চ আদালতে গিয়ে নির্মাণকাজের স্থগিতাদেশ নিয়ে আসেন

সিটি করপোরেশনের একাধিক সূত্র বলছে, বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সে নিয়ন্ত্রণ করতেন রাজনৈতিকভাবে প্রভাশালী কিছু ব্যবসায়ী। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ সব দলের নেতারা মিলেমিশে এই কমপ্লেক্স নিয়ন্ত্রণ করতেন। নতুন ভবন নির্মাণ করা হলে ব্যবসায়ী নেতাদের আধিপত্য কমে যাবে, তাই তাঁরা সেখানে নতুন করে ভবন নির্মাণ করতে দেননি।

উল্লেখ্য, বঙ্গবাজার মার্কেটে এর আগেও কমপক্ষে তিনবার বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এর মধ্যে ১৯৯৫ সালে একবার ভয়াবহ আগুনে পুরো বিপণিবিতান পুড়ে যায়। এ ছাড়া ২০১৮ সালেও একবার ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড হয়।

স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, ‘ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র নিজে একজন ব্যারিস্টার। তিনি কী কারণে এত দিন আইনিভাবে এবং রাজনৈতিকভাবে বিষয়টি মোকাবিলা করেননি। ঝুঁকিপূর্ণ জেনেও বঙ্গবাজারে অবৈধভাবে ব্যবসা করতে যাওয়ার ফলাফল কী, সেটি সেবাই দেখল। বহু মানুষ নিঃস্ব হলো, হাজার কোটি টাকার সম্পদ পুড়ে গেল। পুরান ঢাকায় একের পর এক অগ্নিকাণ্ডে জীবন ও সম্পদ ধ্বংস হচ্ছে। এভাবে চলতে পারে না। এর দায় কাউকে না কাউকে নিতে হবে।’