প্রকল্পের আওতায় উন্নয়ন কাজে বেড়েছে বৈদেশিক ঋণের প্রবাহ। মাত্র দুটি সভায় ১৭টি উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন করেছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। যেখানে ১২টি প্রকল্পেই বৈদেশিক ঋণনির্ভর। এসব প্রকল্পের আওতায় বৈদেশিক ঋণ নেওয়া হয়েছে ১২ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা।
ঋণ দেওয়ার শীর্ষে রয়েছে বিশ্বব্যাংক, ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (আইডিবি), জাইকা, ইএনডিপি, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্র এসব তথ্য জানায়। ঋণের বিষয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, পাইপলাইনে বৈদেশিক ঋণের চাপ আছে। এজন্য ঋণনির্ভর প্রকল্পের অনুমোদন বাড়িয়ে দিচ্ছি।
সম্প্রতি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের নয়টি উন্নয়ন প্রকল্প উপস্থাপন করা হয়। এর মধ্যে নতুন চারটি এবং বাকি পাঁচটিই সংশোধিত প্রকল্প। ৯টি প্রকল্পে নতুন করে এক হাজার ৭৩১ কোটি টাকা অনুমোদন করা হয়েছে। এতে মোট ব্যয় দাঁড়াচ্ছে চার হাজার ৬০১ কোটি টাকা। এর মধ্যে ছয়টি প্রকল্পে তিন হাজার ৪৩৮ কোটি টাকা ঋণ অনুদান হিসেবে দিচ্ছে ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (আইডিবি) জাইকা, ইএনডিপি, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও বিশ্বব্যাংক।
পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, পাইপলাইনে বৈদেশিক ঋণের চাপ আছে। এজন্য ঋণনির্ভর প্রকল্পের অনুমোদন বাড়িয়ে দিচ্ছি। তাছাড়া আমাদের এখন ডলারও দরকার। বৈদেশিক টাকা আমাদের অ্যাকাউন্টে ঢুকবে এটা কিন্তু ভালো। ঋণনির্ভর প্রকল্প অনুমোদন দিলে পাইপলাইনের চাপও কমবে, আমাদের অ্যাকাউন্টেও ডলার বাড়বে।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় জানায়, বর্তমানে পাইপলাইনে রয়েছে ৫০ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। প্রতি ডলার ১০৫ টাকা ধরে বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় পাঁচ লাখ তিনশ কোটি টাকা। পাইপলাইন থেকে বৈদেশিক ঋণ ছাড় করতেই ঋণনির্ভর প্রকল্পের অনুমোদন বাড়ছে।
বৈদেশিক ঋণনির্ভর প্রকল্প অনুমোদন ইতিবাচক দেখছেন অর্থনীতিবিদরা। কারণ বর্তমানে ঋণ পরিশোধের সক্ষমতাও ভালো। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, সরকার বর্তমানে নানা অবকাঠামো উন্নয়নের প্রকল্প হাতে নিচ্ছে। ফলে বৈদেশিক ঋণনির্ভর প্রকল্পের অনুমোদন বাড়ছে। তবে এতে আমাদের কোনো সমস্যা নেই। কারণ ঋণ পরিশোধে বাংলাদেশ ভালো করছে। উন্নয়ন সহযোগীদের আস্থাও আছে। এতে শঙ্কার কিছু নেই।
তিনি আরও বলেন, এডিবি-চীন অবকাঠামো উন্নয়নে ঋণ দিচ্ছে। যতদিন রি-পেমেন্ট ফেল না করি ততদিন সমস্যা নেই। তাছাড়া আমরা ভালো অবস্থানে আছি, রেমিট্যান্স ঘাটতি হলেও সমস্যা নেই।
সম্প্রতি একনেকে অনুমোদন পাওয়া বৈদেশিক ঋণের প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে- ‘সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা ও জননিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধি’ শীর্ষক প্রকল্প। প্রকল্পের মোট ব্যয় ২২৯ কোটি ৮২ লাখ টাকা। ৩৯ কোটি ৫৮ লাখ টাকা অনুদান হিসেবে দিচ্ছে জাপান। জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের ‘প্রি-পেইড গ্যাস মিটার স্থাপন’ শীর্ষক প্রকল্পের তৃতীয় সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। প্রকল্পের মোট ব্যয় ৯২৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাইকার ঋণ ৮০৭ কোটি টাকা।
এছাড়া গত ১২ মার্চ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি প্রায় ১২ হাজার ১৬৭ কোটি ১৫ লাখ টাকা ব্যয় সম্বলিত আটটি প্রকল্প অনুমোদন করে। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন তিন হাজার ৯৭ কোটি ৯১ লাখ টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ১৫৬ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। বাকি ৮ হাজার ৯১২ কোটি ৭৭ লাখ টাকা আসবে বৈদেশিক ঋণ থেকে।
এর মধ্যে অন্যতম ‘অভিযোজন বৃদ্ধি ও দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসকল্পে টেকসই অবকাঠামো (রিভার)’ প্রকল্প। এ প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের ঋণ চার হাজার ২৭৫ কোটি টাকা। ‘দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় ট্রান্সমিশন-গ্রিড সম্প্রসারণ (প্রথম সংশোধিত)’ প্রকল্পে দুই হাজার ৮২৪ কোটি টাকা বৈদেশিক ঋণ আসবে। ‘প্রোমোটিং জেন্ডার রেসপনসিভ এন্টারপ্রাইজ ডেভেলপমেন্ট সিস্টেমে ১২৮ কোটি টাকা দেবে কানাডা। ‘কাস্টমস আধুনিকায়ন ও অবকাঠামো উন্নয়ন’ প্রকল্পে এক হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা বৈদেশিক ঋণ আসবে। জাইকা ৩০ কোটি টাকা দেবে ‘আরবান রেজিলিয়েন্স প্রজেক্ট (ইউআরপি): প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেশন অ্যান্ড মনিটরিং ইউনিট (পিসিএমইউ)’ প্রকল্পে। ‘দক্ষিণ চট্টগ্রাম আঞ্চলিক উন্নয়ন (এসসিআরডি)’ প্রকল্পে দুই হাজার ৪৯৭ কোটি টাকা দেবে জাইকা।