বিএনপির ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশের জায়গা নির্ধারণ নিয়ে রাজনীতিতে যে উত্তেজনা চলছে, তার একটি সমাধান হবে বলে আশাবাদী আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। মঙ্গলবার (৬ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে নিজ দফতরে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় কুমার ভার্মার সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এমন কথা বলেন।
সমঝোতার কোনো পথ খোলা আছে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘জনগণের আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। দলের পক্ষ থেকে আমি বলতে চাই, আমরা সরকারে আছি, আমরা কেন দেশের অশান্তি চাইব? আমরা কেন আতঙ্ক সৃষ্টি হয়, এমন কাজ করব? দরকার তো নেই।’
তিনি বলেন, ‘এখন যদি আতঙ্কের বা এখানে আক্রমণ করা হয়, যদি উসকানি দেয়া হয়, আমাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়া হয়, তবে আমরা চুপ করে বসে থাকব না। আশা করছি, বিরোধী দল শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করবে। দলীয়ভাবে আমরা তাদের সঙ্গে কখনো সংঘাত সৃষ্টি করিনি। এখনও আমরা সংঘাত চাই না।’
ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনারের দায়িত্ব পাওয়ার পর সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন প্রণয় কুমার ভার্মা। ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমাদের মধ্যে রোড কানেকটিভিটি প্রকল্প নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। তিস্তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তিনি সর্বোচ্চ চেষ্টা করার কথা জানিয়েছেন।’
তবে বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ভারতীয় হাইকমিশনার কোনো মতামত দেননি বলেও জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘তাকে আমি আমার বক্তব্য বলেছি।’
ভারত কেমন নির্বাচন দেখতে চায়–জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এসব কিছু নিয়ে কথা হয়নি। অহেতুক আমি মিথ্যা কথা বলব কেন! তবে রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমি বলেছি, বিরোধী দল বিএনপি আন্দোলন করছে। তারা সরকারের পদত্যাগ চাচ্ছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া তারা নির্বাচন করবে না। ১০ ডিসেম্বর বিএনপির মহাসমাবেশ নিয়েও কথা হয়েছে। সমাবেশের স্থান নিয়ে বিএনপি অনড়, তা-ও জানিয়েছি।’
স্থান নিয়েই তো সমঝোতা হয়নি, সেখানে শান্তি কীভাবে আসবে–এমন প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, ‘হয়ে যাবে। বাংলাদেশের রাজনীতির আকাশে আজ ঘনমেঘ ঘনীভূত হয়েছে। আবার চট করে চলে যাবে। আমি একজন চিরন্তন আশাবাদী মানুষ।’
বিএনপি কি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করবে- এমন প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, যেটিই হোক একটি সমঝোতা হবে।
এদিকে, বাংলাদেশে আসার পর কেমন লাগছে জানতে চাইলে প্রণয় কুমার ভার্মা বলেন, “এখানে দায়িত্ব পালন করতে আসা আমার জন্য খুবই সম্মানের ও বিশেষ ভালোলাগার। আমাদের দুদেশের সম্পর্কের মধ্যে অনেক অর্জন আছে। প্রতিবেশী দেশগুলো নিয়ে আমাদের নীতিতে ‘বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ’ বলে বিবেচনা করা হচ্ছে। প্রতিবেশী হিসেবে বাংলাদেশকে সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে।”
এই কূটনীতিক বলেন, ‘সম্পর্ক এগিয়ে নিতে আমরা একসঙ্গে কাজ করছি। মন্ত্রীর সঙ্গে আজকের বৈঠকে আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সড়ক ও যোগাযোগ খাতে আমাদের প্রকল্পগুলো কীভাবে এগিয়ে নেয়া যায়, তা নিয়েও কথা বলেছি।’
তিনি বলেন, ‘আজকের দিনটিও খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, আজ দুদেশের ৫১তম মৈত্রী দিবস উদ্যাপন করা হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন কারণে দুদেশের সম্পর্ক বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।’
উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালে শত্রুমুক্ত হওয়ার ১০ দিন আগে ৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয় ভারত। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গত বছর মার্চে মুজিববর্ষ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য বাংলাদেশ সফরের সময় ৬ ডিসেম্বর মৈত্রী দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।