আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আন্দোলনের নামে মানুষ পুড়িয়ে মারলে বিএনপিকে আর ছাড় দেয়া হবে না। নির্বাচন নিয়ে দলটির সঙ্গে কোনো সংলাপ হবে না বলেও জানিয়েছেন তিনি।
শনিবার (২৬ নভেম্বর) মহিলা আওয়ামী লীগের ষষ্ঠ জাতীয় সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিকেল ৩টার দিকে সম্মেলনস্থলে পৌঁছান আওয়ামী লীগের সভাপতি। প্রথমে তিনি সম্মেলনের উদ্বোধন করেন।
এ সময় বিএনপি-জামায়াতের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত সরকার একসময় নারীদের ওপর অমানবিক নির্যাতন করেছে। তারা নারীদের রাস্তায় ফেলে তাদের ওপর নির্যাতন করেছে। কিন্তু এখন তাদের মেয়েরা রাস্তায় নেমে মিছিল-মিটিং করছে, কই তাদের তো আমরা নির্যাতন করছি না। তারা তো স্বাধীনভাবে সমাবেশ-মিছিল করতে পারছে। দেশের মানুষ বিএনপির মতো অপরাধী দলকে আর সমর্থন করে না।’
এ সময় তিনি সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নকাজের কথা তুলে ধরে বলেন, অসহায় নারীদের জন্য ভাতা, বিধবা ভাতাসহ সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে। তাদের স্বাস্থ্যসেবার দিকেও নজর দেয়া হচ্ছে। নারীদের সব ধরনের কাজের সুযোগ সৃষ্টি করছে বর্তমান সরকার।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরাই দেশের জনগণের কল্যাণে কাজ করি। কিন্তু বিএনপি কী করে? তারা ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে কত মেয়েকে নির্যাতন করেছে? বাংলাদেশের এমন কোনো জায়গা নেই তারা অত্যাচার করেনি। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যেভাবে নির্যাতন করেছিল, বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এসে ঠিক একইভাবে অত্যাচার করেছিল।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “১৫ আগস্ট একটি কালো দিন। সেদিন জাতির পিতাকে হত্যা করা হয়। একই সঙ্গে আমার মাকে হত্যা করা হয়। মেয়েরা স্বামীর কাছে কত কিছু দাবি করে, কিন্তু আমার মা বাবার কাছে কখনো কিছু চাননি। ঘাতকের দল যখন আমার বাবাকে হত্যা করে, তখন আমার মা বলেছিলেন, ‘আমার স্বামীকে হত্যা করেছ, আমাকেও হত্যা কর’।”
মুক্তিযুদ্ধের কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, পাক হানাদার বাহিনী মেয়েদের ধরে ক্যাম্পে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন করেছে। তখন জাতির পিতা সুইজারল্যান্ড থেকে নার্স এনে তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। জাতির পিতা সবসময় নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বাস করতেন। নারীদের অধিকার নিয়ে সবসময় সোচ্চার ছিলেন তিনি। তাই বর্তমান সরকারও নারীদের অধিকার উন্নয়নে কাজ করে চলেছে।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতার কয়েকটি পঙ্ক্তি উচ্চারণ করে বলেন: ‘বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চিরকল্যাণকর অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।’ সুতরাং রাষ্ট্রের সব জায়গায় নারীদের কাজের সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। দেশের সর্বোচ্চ আদালত থেকে সর্বক্ষেত্রে নারীদের কাজের অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যেকোনো অর্জনে নারীদের অবদান থাকতে হবে। সমাজের অর্ধেক নারী। তারা অচল থাকলে সমাজ এগিয়ে যাবে না। নারী-পুরুষকে সমান তালে এগিয়ে যেতে হবে। আমি নারীদের বিচারপতি, সচিব, ডিসি, এসপি হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পথ সুগম করি। আজ আমাদের মেয়েরা প্রতিটি ক্ষেত্রে অত্যন্ত দক্ষতার পরিচয় দিচ্ছে।’
ইসলাম ধর্মই একমাত্র নারীদের সমান অধিকার দিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ইসলাম ধর্মই একমাত্র ধর্ম, যেখানে নারীদের সমঅধিকার দেয়া হয়েছে। স্বামীর সম্পদে ও বাবার সম্পদে নারীর অধিকার দিয়েছে ইসলাম। অথচ ধর্মের নামে নারীদের ঘরে রেখে দিতে চায়, তারা জানে না। নারীদের সর্বোচ্চ সম্মান ইসলামই দিয়েছে।
তিনি বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর করে দিচ্ছি। সেখানে নারী ও পুরুষকে সমান ভাগ দিচ্ছি। কেউ বউ ছেড়ে দিলে ওই বাড়ি হবে নারীর, পুরুষের নয়। যাতে নতুন ঘর পেয়ে কেউ নতুন বউ না নিয়ে আসে।
নারীদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, “মেয়েরা স্বামীদের কাছে কত কিছু দাবি করে। আমার মাকে দেখিনি কোনোদিন কিছু দাবি করতে। বরং তিনি বাবাকে বলতেন, ‘তুমি তোমার কাজ করে যাও। সংসারসহ সবকিছু আমি দেখব।’ তাকে স্মরণ করে আপনাদেরও এগিয়ে যেতে হবে।”