বান্দরবান প্রতিনিধি: বান্দরবানের লামা উপজেলায় কাভার্ড ভ্যানের ধাক্কায় বাস চালক নিহত ও ২৯ বাস যাত্রী আহত হয়েছেন। বুধবার (৬ অক্টোবর) সকালে উপজেলার ফাঁসিয়াখালী-লামা সড়কের মিরিঞ্জা মাদানীনগর এলাকায় এ দূর্ঘটনা ঘটনা ঘটে।
নিহত বাস চালকের নাম মো. আনোয়ার হোসেন (৫০)। তিনি কক্সবাজার জেলার চকরিয়া পৌরসভা এলাকার সোসাইটি পাড়ার বাসিন্দা ও বাস টার্মিনাল শ্রমিক ইউনিটির সহ-সভাপতি বলে জানা গেছে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সদস্যরা আহতদেরকে উদ্ধার করে লামা ও চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেসহ বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি করেন। আহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের নাম পাওয়া গেছে।
আহতরা হলেন- জোৎস্না দে (২০), শুভশ্রী (১০), রূপম চাকমা (২), জহর লাল (৫৫), নুর মোহাম্মদ (২৮), মোঃ সোহেল (৩২), রাজশ্রী দে (২), নুরুল আলম (৩০), হাসনা বালা (৬০), মনু আলম (৩৫), তপন (৩৮), সরওয়ার (২৫), মোঃ রফিক (৩০), সরওয়ার আলম (৫৫), মোঃ সাহেদ (৬৫), শিব সংকর (৩৭), জেসি মার্মা (২২), আবুল হোসেন (৫৫), বাসের হেলপার মো. বেলাল (২৪), মেরি আক্তার (৪৫), মোহছেনা বেগম (৪০), আকিব (১০), ইমু (৬), জিহান (১৮), জাহানারা বেগম (৪৮), পাখি বালা (৭০) সহ ১৬ জন।
তাৎক্ষণিকবাবে অন্য আহত ব্যক্তিদের নাম পরিচয় পাওয়া যায়নি। আহতরা সবাই উপজেলা ও পাশের চকরিয়া উপজেলার বমু বিলছড়ি ইউনিয়নের বাসিন্দা। আহতদের মধ্যে ১০জনের অবস্থা আশঙ্কজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। কাভার্ড ভ্যানের অদক্ষ চালকের কারণে এ দুর্ঘটনার হয় বলে যাত্রী সাধারণের অভিযোগ। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও দুর্ঘটনার স্থান পরিদর্শন করে আহতদের খোজঁখবর নেন, পৌরসভার মেয়র মো. জহিরুল ইসলাম ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মোস্তফা জামাল।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, বুধবার সকাল ১০টার দিকে লামা থেকে যাত্রী বোঝাই করে একটি ৪৫ সিট বিশিষ্ট বাস কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলায় যাচ্ছিল। বাস গাড়িটি সড়কের মাদানি নগর এলাকায় পৌঁছলে বিপরীত দিক থেকে ছেড়ে আসা একটি কাভার্ড ভ্যান নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে গিয়ে বাসের ওপর চাপা পড়ে। এতে বাসে থাকা ৩০ যাত্রী আহত হন। পরে আহত বাস চালক মো. আনোয়ার হোসেনকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে গেলে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সদস্যরা স্থানীয়দের সহযোগিতায় আহতদেরকে উদ্ধার করে উপজেলা এবং কাছাকাছি চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেসহ বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি করেন।
সড়কে চলাচলকারী বাস চালক নুর মোহাম্মদ বলেন, লামা পাহাড়ি এলাকা ও রাস্তা উঁচু-নিচু। যার কারণে বাহিরের ড্রাইভাররা এ সড়কে গাড়ি চালাতে দক্ষ না। বাহিরের গাড়ি উপজেলায় ঢুকলে চকরিয়া থেকে স্থানীয় ড্রাইভার দিয়ে গাড়ি চালানো নিয়ম রয়েছে। কিন্তু ইদানিং এই নিয়ম মানা হচ্ছে না। যার কারণে অহরহ দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগে দায়িত্বরত চিকিৎসক রায়হান জান্নাত বিলকিছ সুলতানা বলেন, বাস দুর্ঘটনায় হাসপাতালে মোট ১৯ জন আহত রোগী আসে। তম্মধ্যে আশংকাজনক হওয়ায় ১০ জনকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি দেয়া হয় ৩ জনকে। বাকী ৬ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। বাসের ড্রাইভার আনোয়ার হোসেন ও বমু বিলছড়ি মাইজপাড়া এলাকার মৃত মনির হোসেনের ছেলে মো. রফিকের অবস্থা আশংকা জনক।
কাভার্ড ভ্যানের চাপায় বাস চালক মো. আনোয়ার হোসেন নিহত ও ২৯ যাত্রী আহতের সত্যতা নিশ্চিত করে লামা থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) মো. আলমগীর বলেন, ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ ও স্থানীয়দের সহায়তায় আহতদেরকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য দ্রুত উপজেলা, চকরিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেসহ বিভিন্ন ক্লিনিকে পাঠানো হয়। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এদিকে দুর্ঘটনা কবলিত বাস গাড়ির যাত্রী মো. জিহান বলেন, আমাদের বাসটি ধীরে পাহাড় উঠছিল। কিন্তু বিপরীত দিক থেকে ছেড়ে আসা মালবাহী কাভার্ড ভ্যানটি নিয়ন্ত্রন হারিয়ে উল্টে আমাদের বাসকে চাপা দেয়। এতে প্রায় ৩০ যাত্রী আহত হয়। এদের মধ্যে আহত ১৬ জন যাত্রীকে বাস-জীপে করে চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও বাকীগুলোকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়।
দুর্ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স’র সাব অফিসার মো. আব্দুল্লাহর নেতৃত্বে অন্য সদস্যারা। তারা বলেন, এত হতাহত হয়েছে যে, আমরা কাকে রেখে কাকে নিব বুঝতে পারছিলাম না। আহতদের দ্রুত উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাই। পরে রাস্তার উপরে পড়ে থাকা বাস ও কাভার্ড ভ্যানটি অপসারণ করে সড়কের যোগাযোগ সচল করে দিই