বগুড়া প্রতিনিধি: বগুড়া থেকে আলুর পর এবার বিদেশ (সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায়) যাচ্ছে বাঁধাকপি। বাঁধাকপি রপ্তানি শুরু হওয়ায় এই অঞ্চলের কপি চাষিদের দুর্দিন ঘুচতে চলেছে। কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে কয়েকশ নারী-পুরুষের।
বৃহস্পতিবার (৭ জানুয়ারি) সরেজমিনে দেখা গেছে, বাজারে বাঁধাকপি প্রতি পিস সর্বোচ্চ ১২টা দামে বিক্রি হলেও রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান তা কিনছে ১৫ থেকে ১৬ টাকা দরে।
বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার পূর্ব জাহাঙ্গীরাবাদ পাতানিয়াপাড়ার যুবক মেসার্স সাগর ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী সাগর হোসেন বিদেশে এই বাঁধাকপি পাঠানোর উদ্যোক্তা। তার মাধ্যমে সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় যাচ্ছে বগুড়ার বাধাঁকপি।
এই দুই দেশে প্রায় ১ হাজার ৫০ মেট্রিক টন বাঁধাকপি পাঠানোর জন্য তিনি ইতোমধ্যেই চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন তিনি। এই কপিসহ অন্যান্য সবজি বিদেশে পাঠাতে বিশেষ প্যাকেজিং কাজের জন্য তিনি নিজ বাড়িতেই প্যাকিংব্যাগ তৈরির কারখানাও স্থাপন করেছেন। তার এমন উদ্যোগে কয়েকশ নারী-পুরুষের কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কৃষক তাদের উৎপাদিত বাঁধাকপি জমি থেকে সরাসরি নিয়ে আসছেন। একদিকে সেগুলো প্যাকেজিং কাজ করছেন (নারী-পুরুষ) শ্রমিকরা। অন্যদিকে সেগুলো গাড়িতে তোলার কাজে ব্যস্ত অন্যান্যরা।
মেসার্স সাগর ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী সাগর হোসেন জানান, ২০১৪ সাল থেকে তিনি সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে আলু রপ্তানি শুরু করেন।
এরই মধ্যে চট্টগ্রামের মাসায়া এগ্রো লিমিটেড নামক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী আরিফ আজাদ প্রিন্স মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুর ঘুরে এসে ওই দুই দেশে বাঁধাকপি রপ্তানিতে তাকে উদ্বুদ্ধ করেন।
ইতোপূর্বে তিনি বছরে ৬ থেকে ১০ কন্টিনিয়ার (প্রতি কন্টিনিয়ারে ১২ হাজার পিস বাঁধাকপি যার ওজন প্রায় ২ মেট্রিক টন) পাঠিয়েছেন। কিন্তু এবার ওই দুই দেশের ক্রেতাদের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় তিনি আগাম ৫০ কন্টিনিয়ার কপি পাঠাতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন।
তিনি বলেন, এজন্য এলাকার চাষিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে কপির জাত, ওজন, ক্ষেতে থাকার বয়স এবং বিষমুক্ত উৎপাদনের শর্ত দিয়ে চাষ করতে বলেন। এক্ষেত্রে উপজেলা কৃষি বিভাগও তাকে সহযোগিতা করে।
ইতোমধ্যে ৭০দিন বয়সী কপি জমি থেকে উত্তোলন করে কৃষকরা তার কাছে পৌঁছাতে শুরু করেছেন। তিনি নগদ টাকায় তাদের কাছ থেকে সেসব কপি কিনে উপজেলা সদরের কাফেলা কোল্ড স্টোরেজে তা প্যাকেজিং কার পাঠাতে শুরু করেছেন।
তিনি আরও বলেন, বাজারে কপি বিক্রি করে প্রতি পিসে কৃষকরা যে টাকা পেতেন তার কাছ থেকে তার চেয়ে ৩ থেকে ৪ টাকা বেশি পাচ্ছেন। তিনি প্রতি পিস কপি নিচ্ছেন ১৫ থেকে ১৬ টাকায়, আর মহাস্থান বাজারে বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ১২ টাকায়।
সরকার সবজি রপ্তানিতে শতকরা ২০ শতাংশ ভর্তুকি ঘোষণা করায় বেশি দামে কৃষকদের কাছ থেকে কপি কিনতে পারছেন। তিনি এ বছর সোয়া দুই থেকে আড়াই কোটি টাকার কপি বিদেশে পাঠাবেন (প্রতি কন্টিনিয়ারে সাড়ে ৪ লাখ টাকার কপি যাবে।
শুধু যে কৃষকরাই এতে লাভবান হচ্ছে তা নয়, প্যাকিং ও পরিবহন কাজে নিয়োজিত শতাধিক মানুষের কর্মসংস্থানও হয়েছে তার এই ব্যবসায়।
শিবগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আল মুজাহিদ সরকার জানান, জেলার মধ্যে উপজেলা মূলত সবজি প্রধান এলাকা। এ উপজেলার জমিগুলো তিন ফসলি হলেও অধিকাংশ জমিতে বছরজুড়েই নানা সবজি উৎপাদন হয়।
তারমধ্যে এবার ৩০০ হেক্টর জমিতে বাঁধাকপি এবং ৩০০ হেক্টর জমিতে ফুলকপি চাষ হয়েছে। প্রতি হেক্টরে ৩২টন হিসেবে ৩০০ হেক্টর জমিতে এবার ৯ হাজার ৬০০ মেট্রিক টন বাঁধাকপি উৎপাদন হবে।
তিনি বলেন, মেসার্স সাগর ট্রেডার্সের স্বত্ত্বাধিকারি বাঁধাকপি রপ্তানির উদ্যোগ নেওয়ায় এবার কৃষকদের হাঁটে হাঁটে এই সবজি নিয়ে ঘুরতে হচ্ছে না।
যদিও তারা বাঁধাকপি কেনার ক্ষেত্রে আগে থেকেই কৃষকদের কিছু শর্ত দিয়েছেন। বিশেষ করে বিদেশে রপ্তানির জন্য অবশ্যই সবজিকে বিষমুক্ত হতে হবে। সেই শর্ত মেনেই কৃষকরা তাদের উৎপাদিত কপি তার কাছে বিক্রি করছেন।
শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আলমগীর কবির বলেন, যখনই কোনো পণ্য বিদেশে যাবে তখন যেমন এলাকার সুনাম বাড়বে এবং সেই এলাকার কৃষকরা লাভবান হবেন। শিবগঞ্জ উপজেলায় এখন সেই কাজটিই শুরু হয়েছে। বাঁধাকপি রপ্তানিতে এই অঞ্চলে নতুন অর্থনীতির দ্বার উন্মোচিত হলো।