স্টাফ রিপোর্টারঃ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মঙ্গলবার রাতে মারা গেছেন দৈনিক সময়ের আলোর প্রধান প্রতিবেদক হুমায়ুন কবীর খোকন। প্রাণঘাতী এ ভাইরাসে প্রথম কোনো সাংবাদিকের মৃত্যু হলো।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, দেশে সংবাদ কর্মীদের মধ্যে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। আতঙ্কের মাত্রাও বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। বুধবার (২৯ এপ্রিল) পর্যন্ত হিসাব বলছে, আক্রান্ত হয়েছেন ৩৩ সংবাদ কর্মী। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৬ জন। মারা গেছেন একজন।
আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লেও সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার সংখ্যা বাড়ছে না। ফলে দুশ্চিন্তা বাড়ছে। তাছাড়া একজনের মৃত্যু পুরো সাংবাদিক সমাজকে নাড়া দিয়ে গেছে। সবার মধ্যেই বিরাজ করছে আতঙ্ক।
গত ৩ এপ্রিল ইনডিপেন্ডেট টিভির একজন সংবাদকর্মী প্রথম করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত বলে শনাক্ত হন।
এরপর থেকে তালিকা বড় হচ্ছে। ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত করোনায় আরও আক্রান্ত হয়েছেন- যমুনা টিভির এক রিপোর্টার (সুস্থ), দীপ্ত টিভির ৬ সংবাদকর্মী (১ জন সুস্থ), এটিএন নিউজের এক রিপোর্টার, যমুনা টিভির নরসিংদী প্রতিনিধি (সুস্থ), একাত্তর টিভির গাজীপুর
প্রতিনিধি, বাংলাদেশের খবরের এক রিপোর্টার (সুস্থ), দৈনিক সংগ্রামের একজন (সুস্থ), মাছরাঙা টিভির সাধারণ সেকশনের এক কর্মকর্তা, নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা পত্রিকার সম্পাদক (সপরিবার), রেডিও টুডের নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি, ভোরের কাগজের
বামনা উপজেলা (বরগুনা) প্রতিনিধি, চ্যানেল আইয়ের অনুষ্ঠান বিভাগের একজন, দৈনিক প্রথম আলোর এক সংবাদকর্মী, দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশের কাপাসিয়া (গাজীপুর) প্রতিনিধি, নিউজ পোর্টাল পূর্বপশ্চিমের জামালপুর প্রতিনিধি, একটি বাংলা দৈনিকের
বামনা (বরগুনা) প্রতিনিধি, নিউজ পোর্টাল বিবার্তার এক সংবাদকর্মী, দৈনিক ইনিকলাবের এক সংবাদকর্মী, দৈনিক জনতার একজন নারী সংবাদকর্মী, দৈনিক কালেক কণ্ঠের এক ফটোগ্রাফার, এনটিভির এক সংবাদকর্মী এবং একজন মেকাপ আর্টিস্ট, দৈনিক আমার বার্তার সম্পাদক, আরটিভির বার্তাকক্ষের একজন সংবাদকর্মী, বাংলাভিশনের একজন রিপোর্টার ও এসএ টিভির গাজীপুর প্রতিনিধি।
শুধু তাই নয়, সংবাদকর্মী করোনা আক্রান্ত হওয়ার কারণে একটি জাতীয় দৈনিক ও একটি টেলিভিশন চ্যানেল লকডাউনও করা হয়েছে।
৩৩ জন সংবাদকর্মী আক্রান্ত হওয়ায় প্রতিটি প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরামর্শে প্রায় দুই শতাধিক সাংবাদিক-কর্মচারীকে আক্রান্তদের সংস্পর্শে আসায় সেলফ আইসোলেশনে পাঠিয়েছে।
এদিকে করোনায় সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরা দৈনিক বাংলাদেশের খবরের অপরাধ বিষয়ক প্রতিবেদক এমদাদুল হক খাঁন বলেন, আতঙ্ক নয়, করোনা থেকে বাঁচতে সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই।
সচেতনতাই পারে করোনা থেকে আমাদের বাঁচাতে। এইজন্য সরকার যে স্বাস্থ্য বিধি ঘোষণা করেছেন সেটি সকলেরই মেনে চলা উচিত।
সংবাদকর্মীদের শারীরিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ করার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। তারা বলেছেন, এই মুহূর্তে চিকিৎসক, পুলিশ, সাংবাদিক এবং জরুরি প্রয়োজনে কর্মরত সকলকেই শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করে দায়িত্ব পালন করতে হবে।
তারা বলেন, আতংকিত না হয়ে নিজেকে নিরাপদ রেখেই কাজ করতে হবে। সবার আগে নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
এ ব্যাপারে, মেডিসিন ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ ডাক্তার মাহমুদুর রহমান দুলাল বলেন, সংক্রমণের ঝুঁকি সবক্ষেত্রেই রয়েছে। তবে শারীরিক দূরত্ব যেখানে নেই, সেখানে ঝুঁকিটা বেশি।
কোভিড-১৯-এর প্রধান চিকিৎসাই হচ্ছে সচেতনতা। অ্যাওয়ারনেস ছাড়া এর আপাতত কোনো ট্রিটমেন্ট নেই। তাই সবাইকে ঘরে থাকতে হবে। জরুরি প্রয়োজন, বিশেষ করে খাবার ও চিকিৎসার প্রয়োজন ছাড়া কারোরই ঘর থেকে বের হওয়া উচিত নয়।
অপরদিকে, দেশে একের পর এক সাংবাদিক করোনায় আক্রান্ত হওয়ার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন। এই সংখ্যা বাংলাদেশের গণমাধ্যমের জন্য অশনিসংকেতও বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ ব্যাপারে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদ বলেন, প্রতিনিয়ত গণমাধ্যমে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া উদ্বেগের বিষয়।
এক্ষেত্রে আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে। একই সঙ্গে মিডিয়ার অভ্যন্তরীণ প্রতিযোগিতা বন্ধ করতে হবে। শুধু তাই নয়, কর্তৃপক্ষকেও সংবাদকর্মীর জন্য ছাড় দিতে হবে। বাসায় বসে কাজের সুযোগ দিতে হবে।
অপরদিকে, গণমাধ্যমে করোনা রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুল আলম খান তপু।তিনি বলেন, গণমাধ্যম কর্মীর স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে নিশ্চিত করতে হবে।
শুধু তাই নয়, যত কম অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া যায় সেটিও বিবেচনায় রাখতে হবে। একই সঙ্গে সংবাদকর্মীর ঝুঁকি ভাতা ও স্বাস্থ্য বীমা করারও দাবি জানান তিনি। একজন সংবাদকর্মী কাজ করতে গিয়ে আক্রান্ত হলে কর্তৃপক্ষকে তার দায় নিতে হবে বলেও তিনি জানান।
তিনি আরও বলেন, হুমায়ুন কবীর খোকন করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। তার ক্ষতিপূরণ ও তার ফ্যামিলির দায় সময়ের আলো কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে।