লক্ষীপুর প্রতিনিধি: এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহের শেষ দিকে লক্ষ্মীপুরের বাড়িতে ফেরেন গার্মেন্টস কর্মী ফিরোজ (ছদ্মনাম)। সর্দি-জ্বর ও কাশি কিছুই নেই, শুধু অল্প শরীরব্যথা নিয়ে দুইদিন পর নিজেই আসেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। সেখানে সন্দেহবশত তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়। অথচ সেই মানুষটির সংস্পর্শে এসে লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে এখন কারোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১৩, এর মধ্যে ওই গার্মেন্টস কর্মীর পরিবারের ৮ সদস্যও রয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (১৬ এপ্রিল) চট্টগ্রামের ফৌজদারহাটে অবস্থিত বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসে (বিআইটিআইডি) নতুন ১১১ নমুনা পরীক্ষায় আরও ১৯ জনকে করোনা পজেটিভ পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে লক্ষ্মীপুরের ১৭ জন, ১ জন চট্টগ্রামের ও অপরজন ফেনী জেলার। এ নিয়ে লক্ষ্মীপুরে মোট করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা হলো ১৯। এর আগে ১২ এপ্রিল লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে ১ জন এবং রামগতিতে ১ জন রোগীর দেহে করোনা শনাক্ত হয়
লক্ষ্মীপুরের সিভিল সার্জন ডা. মো. আব্দুল গাফ্ফার বলেন, ‘ঢাকায় এক পোশাক কারখানায় কাজ করেন এমন একজন পোশাক শ্রমিক কিছুদিন আগে লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে ফেরেন। গত শনিবার চট্টগ্রামের ফৌজদারহাটে অবস্থিত বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস হাসপাতালে তার নমুনা পরীক্ষার ফল পজিটিভ আসে। এরপর ওইদিন রাতেই পুলিশের সহযোগিতায় অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে লক্ষ্মীপুর থেকে ঢাকায় কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালে পাঠানো হয়।
কিন্তু শঙ্কা থাকায় তার পরিবারের সদস্যসহ ১৩৬ জনের কাছ থেকে নমুনা সংগ্রহ করে চট্টগ্রামের বিআইটিআইডিতে পাঠানো হয়েছিল। আজ রাত ১১টার দিকে জানতে পেরেছি ওই পরিবারের আরও আট সদস্য করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়া ওই বাড়ির আশপাশের আরও ৫ জনসহ রামগঞ্জে মোট ১৩ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়া জেলার কমলনগরে ৩ জন ও পৌর সদরে ১ জন ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।’- বলেন আব্দুল গাফ্ফার।
জেলা প্রশাসক অঞ্জন চন্দ্র পাল বলেন, ‘রামগঞ্জে এক পরিবার থেকে করোনা ছড়িয়েছে। রামগতিতে তাবলিগ জামাতে গিয়ে এক বৃদ্ধ করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়া আজ কমলনগরে করোনা আক্রান্ত হিসেবে শনাক্তরা সবাই নারায়ণগঞ্জফেরত। প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পরই রোববার (১২ এপ্রিল) দুপুরে গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে লক্ষ্মীপুর জেলাকে লকডাউন ঘোষণা করা হয়। লকডাউন ঘোষণার পর থেকে অন্য জেলার লোকজন যাতে লক্ষ্মীপুরে ঢুকতে না পারে, একইভাবে লক্ষ্মীপুর থেকে বাইরের জেলায় যেতে না পারে সে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘লক্ষ্মীপুরে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য গত ৮ মার্চ আইসোলেশন ইউনিট খোলা হয়েছে। এ লক্ষ্যে সদর হাসপাতালে ৪০, রামগঞ্জে ২০, রায়পুরে ২০ ও কমলনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২০ শয্যা প্রস্তুত করা হয়েছে।’
এদিকে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রশাসনের পক্ষ থেকে নানা প্রস্তুতির কথা বলা হলেও পুলিশ-প্রশাসনের চেষ্টা মাঝেও হাট-বাজারে ঘুরে বেরাচ্ছে জনসাধারণ। ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ থেকে অবাধেই লক্ষীপুরের বিভিন্ন উপজেলাতে প্রবেশ করছে। মানছে না কোনো বাধা-নিষেধ। বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জ থেকে নদীপথ ও সড়কপথে রামগতি-মজুচৌধুরীর হাট দিয়ে প্রবেশ করেছে মানুষ।
মূলত কুমিল্লা, নোয়াখালী, চাঁদপুর লকডাউন থাকায় ও সড়কপথে যান চলাচল বন্ধ থাকায় নারায়ণগঞ্জ থেকে সড়কপথে প্রথমেই লক্ষ্মীপুরে প্রবেশ করছে মানুষ। আবার অনেকে নৌপথে চাঁদপুর হয়ে হাইমচরের ইচলী এবং লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে প্রবেশ করছে। ফলে প্রতি মুহূর্তে করোনার ঝুঁকি বাড়ছে লক্ষ্মীপুরে।
প্রসঙ্গত, গত ১৮ মার্চ করোনা থেকে মুক্তির জন্য লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলায় হাজার হাজার মুসল্লির উপস্থিতিতে খতমে শেফা অনুষ্ঠিত হয়। সে সময়ই বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন জেলাটিতে করোনা ছড়িয়ে পড়তে পারে। কারণ ভারতের রাজধানী দিল্লিতে তাবলিগ জামাতের একটি সমাবেশে যোগ দেয়া অন্তত ৫০০ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ঘটনা ঘটে।
অন্যদিকে মালয়েশিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দেশটিতে যত মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের একটি বড় অংশই সেখানকার তাবলিগ জামাতের একটি ধর্মীয় জমায়েতে অংশ নিয়েছিলেন